প্রকৃত অর্থে এই শহরে কোনো পার্ক নেই। খোলা উদ্যান নেই যেখানে বুক ভরে শ্বাস নেওয়া যায়। ডিসি হিল রাত আটটার পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিআরবি এখন লোকারণ্য।
একসময় পাড়া-মহল্লায় কিছু কিছু খোলা জায়গা ছিল। এখন তা-ও নেই। আগে আবাসিক এলাকাগুলোতে খেলার মাঠ, খোলা জায়গা, পার্ক ইত্যাদি ছিল। এর অধিকাংশই এখন অবৈধ দখলে নয়তো কর্তৃপক্ষই প্লট করে বিক্রি করে দিয়েছে।
১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকাটি বরাদ্দ দেয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ওই সময়ে লে-আউটে একটি পার্ক ছিল। ২০০২ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পার্কটির নামকরণ করে জাতিসংঘ পার্ক। শিশু কিশোরসহ বিনোদন প্রেমী মানুষের কাছে এ পার্কটি সে সময় দর্শনীয় স্থান হিসাবে পরিচিতি পায়। কিন্তু দিনে দিনে পার্কটির প্রতি অবহেলা আর অযত্নের ছাপ পড়তে থাকে। এতে পার্কটি জৌলুস হারায়। প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পৌঁছে যায়। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে পার্কে থাকা একটি পুকুরও।
এরপর ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘ পার্কের একটি অংশে সুইমিং পুল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর করেন তৎকালীন মেয়র এম মনজুর আলম। ২০১৫ সালের জুনে তিন কোটি ৯৪ লাখ টাকায় দুইটি সুইমিং পুল ও জিমনেশিয়াম নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সুইমিং পুল নির্মাণের সময় চসিকের পক্ষে বলা হয়েছিল, পার্কটির উন্মুক্ত অংশটিও সাজানো হবে। গড়ে তোলা হবে নান্দনিক বিনোদন পার্ক। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে ২০১২ সালে চসিকের সুইমিং পুল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ থেকেই কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল পার্কটি।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে পার্ককে ঘিরে চসিকের বাণিজ্যিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ আটকে যায়। এরপর ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর পার্ককে ঘিরে চসিকের গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্যকে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি চসিক।
এভাবে প্রায় এক যুগ পরিত্যক্ত থাকা এই পার্ককে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘সবুজ উদ্যান’ হিসেবে। এ লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় গৃহীত প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হচ্ছে পাঁচলাইশে অবস্থিত পার্কটি। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে পার্কের দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর, প্রবেশপথ, হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে’সহ অন্যান্য অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। গাছ ও ঘাস লাগানো, বসার জন্য বেঞ্চ নির্মাণসহ অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। যা টানা বৃষ্টি না হলে চলতি মাসেই শেষ হবে বলে জানা গেছে।
আমাদের সমস্যা হলো, দায়িত্বশীলরা অনেকসময় দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত নেন। যে সিদ্ধান্ত জনগণের কোনো কল্যাণে লাগে না। আবার উল্টো চিত্রও আছে। ভালো একটি সিদ্ধান্ত বা কাজ জনগণের অসহযোগিতার কারণে ব্যর্থ হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় সম্পদের প্রতি আমাদের দরদ কম থাকায় তা বিনষ্ট করতে কখনো কার্পণ্য করি না। যে কারণে সরকারি স্থাপনাগুলো বেশিদিন টেকে না।।
এত টাকা খরচ করে পার্ক পুনর্নির্মিত হলো তা দেখভালের ব্যবস্থা যেন থাকে।
আরেকটি বিষয়, যেকোনো উন্নয়নকে ঘিরে বাণিজ্য করার একটি প্রবণতা ইদানিং প্রবল হয়ে উঠেছে। যার কারণে দুর্নীতি হয় এবং মূল কাজের লক্ষ্য ব্যাহত হয়। আমরা দাবি জানাব, এই পার্ক ঘিরে যেন কোনোধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা, হোটেল-রেস্তোরাঁ বা দোকানপাট নির্মাণ করা না হয়।
পার্কটি প্রকৃত অর্থেই পার্ক তথা সবুজ উদ্যান হয়ে থাকুক।
এ মুহূর্তের সংবাদ