সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের লেভেল ওয়ানের কার্ভড ওয়ালে ছবি সাজিয়ে বুধবার এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
প্রধানমন্ত্রী বিকালে সেখানে গিয়ে ছবিগুলো ঘুরে দেখেন বলে তার উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন জানান।
জাতিংসঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) প্রেসিডেন্ট লাচেজারা স্টোভাসহ আরও কয়েকজন অতিথি এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রদর্শনীতে।
বিদেশি অতিথিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করি। পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্ব ব্যাংক দোষারোপের চেষ্টা করেছিল। পরে প্রমাণ হয়েছে, সেখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি।’
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয় চলতি বছরের ২৫ জুন। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করে।
তবে সেতু নির্মাণের স্বপ্ন বোনা শুরু হয়েছিল দুই যুগ আগে। ২০০১ সালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন শেখ হাসিনা। তখনও তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এর পর সেতু নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়নি।
এরপর ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এই সেতু নির্মাণের আলোচনা নতুন করে শুরু হয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায়।
দুবছর বাদে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার দায়িত্ব নিয়ে নতুন আঙ্গিকে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করে। সিদ্ধান্ত হয়, সড়ক ও রেল উভয় যান পারাপার হবে এই সেতুতে; উপরে চলবে গাড়ি, নিচে ট্রেন।
সেতু নির্মাণে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রধান উদ্যোক্তা হলেও সবচেয়ে বেশি ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘লিড ডোনার’ হিসেবে যুক্ত হয় বিশ্ব ব্যাংক।
তবে ২০১২ সালে সেতু প্রকল্পের কাজের শুরুতে বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরে যায়। যদিও পরে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়নি। কানাডার আদালতেও এই সংক্রান্ত মামলাটি প্রমাণ করা যায়নি।
নানা টানাপড়েন আর অপপ্রচার পেরিয়ে, ষড়যন্ত্র আর প্রতিকূলতা প্রতিহত করে অবশেষে এ দেশের মানুষের টাকায় বাস্তব রূপ পায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের পদ্মা সেতু।
এ সেতুর নির্মাণযজ্ঞের নানা পর্যায় এবং উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবের নানা ছবি নিয়ে নিউ ইয়র্কে ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াও প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন।