চসিকের ২১৬১ কোটি টাকার বাজেট
সব ব্যবসায়ীকে ট্রেড লাইসেন্সেরআওতায় আনা গেলে ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক »
জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রাধান্য দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২ হাজার ১৬১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে বাড়ইপাড়া খাল প্রকল্প এপর্যন্ত মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও ভূমি জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এছাড়া নগর ভবন নির্মাণ, বিবিরহাটে কিচেন মার্কেট নির্মাণ, বাস টার্মিনাল নির্মাণসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রকল্পের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চায় সিটি করপোরেশন।
গতকাল রোববার থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে বাজেট ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেল মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বিভাগীয় প্রধান, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থাপিত বাজেটে দেখা গেছে, গত অর্থ বছরে ২৪৬৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও অর্থবছর শেষে সংশোধনে তা কমে ১২০২ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২১৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকার যে বাজেট মেয়র ঘোষণা করেছেন, তাতে উন্নয়ন খাতে ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এছাড়া বেতনভাতা ও পারিশ্রমিক দিতে এ সিটির খরচ হবে ২৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা। গেল অর্থবছরে উন্নয়ন খাতে ৭৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত ৬৫৪ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে নগর কর্তৃপক্ষ। নতুন অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য ১২১২ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে পাওয়ার আশা করছেন মেয়র, যা তার মোট বাজেটের অর্ধেকের বেশি। এছাড়া বকেয়া কর ও অভিকর হিসেবে ২১৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর, ফি, ভাড়াসহ নিজস্ব উৎস থেকে আরও ৯০৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন তিনি।
গত অর্থবছরে উন্নয়ন অনুদান খাতে ১৫৭০ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করলেও শেষ পর্যন্ত ৬৮৯ কোটি টাকা পেয়েছে চট্টগ্রাম সিটি। আর নিজস্ব উৎস থেকে ৮৫২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যের বিপরীতে আয় হয়েছে ৪৭৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
মেয়র ২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে কোনোরূপ ম্যাচিং ফান্ড ছাড়া ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন’ শীর্ষক প্রকল্প (১ম সংশোধিত) একনেক সভায় অনুমোদন প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, চসিকের কর্মপরিধি বর্তমানে বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদার আলোকে ৯ হাজার ৬০৪ জনের একটি পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর ঠিকাদার ও অন্যান্য বকেয়া বিল বাবদ ১৪৬ কোটি ৭৫ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৬ টাকা, পানির বিল বাবদ ৩ কোটি টাকা এবং গ্যাস বিল বাবদ ৩ কোটি ৩০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আনুতোষিক বাবদ ১৫ কোটি ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
সরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বকেয়া পৌরকর পরিশোধের বিষয়ে বিশেষ সভা করে অনাদায়ী পৌরকর আদায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, নগরবাসীকে উন্নতসেবা নিশ্চিত করতে হলে চসিককে স্বাবলম্বী হতে হবে।
যেখানে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর আদায়ের হার ৯০ শতাংশের বেশি সেখানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০২১-২২ অর্থবছরে এ পর্যন্ত কর আদায়ের পরিমাণ ৪৭ শতাংশ। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। সঠিকভাবে ব্যবসায়ীবৃন্দ ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করলে ট্রেড লাইসেন্স সংখ্যা দাঁড়াবে আনুমানিক ৪ লাখ। কিন্তু বর্তমানে সিটি করপোরেশন এর রেজিস্ট্রার অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স সংখ্যা মাত্র ৮৫ (পঁচাশি) হাজার। সব ব্যবসায়ীকে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা গেলে এই খাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমদানি-রফতানির ওপর কর আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বন্দরের আয় থেকে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ আদায়ের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ এ সংশোধনী বিল আনয়নের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
মশকনিধন কার্যক্রম জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উল্লেখ করে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে মশার ওষুধের গুণগতমান যাচাই করা হয়েছে। মশার উৎপাত রোধকল্পে ও পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে ৪১টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকনগুনিয়া-রোধে নিয়মিত মশার ওষুধ অ্যাডালটিসাইড ও লার্ভিসাইড স্প্রেকরণ ও নালা-নর্দমা থেকে মাটি-আবর্জনা উত্তোলন কাজ অব্যাহত আছে।
মেয়র বলেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি অবৈধ দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে ইউএনডিপির সহযোগিতায় শতাধিক গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৯টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর তৈরি করে দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরের প্রধান ৩৬টি খালে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প সিডিএ কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে যার বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সরকারের প্রকল্প সহায়তায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়নকাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। এ ছাড়া নগরীর অবশিষ্ট ২১টি খালের উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারের বিষয়ে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।