রাজিব শর্মা
মহাষষ্টীর মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম শারদীয় দুর্গাপুজো। পুজোকে ঘিরে এবারও শাঁখা-সিঁদুরের দোকানের পাশাপাশি ও নগরের শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়। তবে এবারে পুজোর কেনাকাটায় ব্যবসায়ীরা বেশি দাম হাকার অভিযোগ তুলছেন ক্রেতারা।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরের অন্যতম নিউমার্কেট, টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দীন বাজার, আফমি প্লাজা, সানমার ওশান সিটি, আখতারুজ্জামান সেন্টার, ফিনলে স্কয়ার, জলসা মার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন শপিং সেন্টার ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়।
এসব মার্কেটে ঘুরে দেখা যায়, শাড়ি, ধুতি-পাঞ্জাবি ও শিশুদের পোশাক কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতেও জমে উঠেছে কেনাকাটার ভিড়। সানমার, আফমি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রঙের থ্রি-পিস, জামদানি শাড়ি, কাতান শাড়ি, লেহেঙ্গা ও তাঁতের শাড়ি রয়েছে। ছেলেদের জন্য রয়েছে- বাহ- ারি ডিজাইনের ধুতি, শর্ট পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট ও শিশুদের নানা ডিজাইনের পোশাক। জুতার দোকানগুলোতে রয়েছে-বিভিন্ন রকমের জুতো।
এছাড়া শিশুদের জন্যও রয়েছে নানা পোশাক। তবে ছোটদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করছে দেবী দূর্গার আদলে তৈরি ছোট ছোট শাড়ি । শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে লোটো, বাটা, এপেক্স-এর শো-রুমগুলোতেও নানা ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে জুতো। তবে প্রতিবারের মতো এবারও দাম বৃদ্ধিতে পিছিয়ে নেই বিক্রেতারা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, পুজো উপলক্ষে বিক্রেতারা প্রতিটা পুজোর সামগ্রী ও পোশাকআশাকে বাড়তি দাম হাকছেন। আর বিক্রেতারা বলছেন, পুজোর অন্যতম সামগ্রী শাখা, সিঁদুর, আগরবাতি, ধুপসহ নানা উপকরণ সাধারণত আমদানি করতে হয়। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুজোয় কাঁশা, শঙ্খ, পঞ্চ প্রদীপের মতো সেসব ধাতব বস্তু আছে তা ভারত থেকেই আমদানি করতে হয়। এছাড়া গত বছরের তুলনায় এবছর ভারতের বাজারে পুজোর উপকরণের দাম বেড়েছে। যার কারণে ব্যবসায়ীদের দাম বাড়াতে হয়েছে।
হাটহাজারী মেখল থেকে টেরীবাজার পুজোর উপকরণ কিনতে আসা রনধীর সেনগুপ্ত বলেন, পুজোর উপকরনের মধ্যে যেসব আমরা ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় পেতাম, এবার তা কয়েকগুণ বাড়তি নেয়া হচ্ছে। একটা শঙ্খ আমরা আগে কিনতাম ৩০০ টাকা, এখন ব্যবসায়ীরা একয়েকদিনের মধ্যে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। যে আগরবাতি আমরা ৫০ টাকায় প্যাকেট পেতাম তা এখন ১০০ টাকার নিচে বিক্রি করছে না। এভাবে পুজোর প্রায় উপকরণের দাম বেড়েছে। টেরীবাজারের একটি প্রতিষ্ঠানে পুজোর উপকরণ কিনতে আসা পার্বতী মিত্র বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা পুজো দেখে গলা কাঁটছে। এক কোটা সিঁদুর নাকি ১৭০ টাকা অথচ এসব সিঁদুর আমরা অনান্য সময় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় কিনতাম। বড়জোরে ১০ টাকা বাড়াতে পারে। এছাড়া কাপড়চোপড় সবকিছুর দাম দ্বিগুন বাড়তি দরে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।’
আফমি শপিং কমপ্লেক্স-এ পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা মুন্নি গুহ বলেন, ‘অন্যান্য সময় যে মানের শাড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যেতো এ বছর তা সাড়ে ৩ হাজারের বেশি। এখন আমরা অন্য শপিং মলে যাচ্ছি। বিশেষ করে টেরী বাজার দাম কিছুটা কম বলে শুনছি, এখন ওই মার্কেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
শুক্রবার বিকালে নিউমার্কেটে পরিবার নিয়ে শপিং করতে আসেন মিল্টন দাশ। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘ভালো ব্রান্ডের পোশাক নিতে হলে, ভালো দামও আমাদের মেনে নেয়ার মনমানসিকতা থাকতে হবে। অহেতুক কেউ দাম বাড়ালে তার যৌক্তিক সমালোচনা করা যায়। তবে আমরা যেসব পোশাক কিনেছি তা মোটামুটি ক্রয় করার মতো দাম ছিল।’
পুজোর উপকরণের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ী সুভাস চক্রবর্তী বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে ভারতীয় পুজোর উপকরণ আসতো। এবার তেমন আসেনি। এছাড়া গত বছরের আগের বছর আমরা অতিরিক্ত আমদানি করেছিলাম। সবমিলিয়ে খরচ সমন্বয় করে হিসেব করলে কিছুটা দাম বাড়তি নিতে হচ্ছে। তবে যেভাবে ক্রেতারা অভিযোগ করছে, আমরা সেভাবে দাম বাড়তি নিচ্ছি না।’
বাড়ছে লোডশেডিং, ক্রেতা-বিক্রেতার ভোগান্তি
অতিমাত্রায় লোডশেডিং বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। জলসা মার্কেটের এ এম ক্লথ স্টোরের মালিক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এতে গরমে ক্রেতাদের ভোগান্তি যেমন বাড়ছে, তেমনি বেচাবিক্রিতে অসুবিধায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরাও। কিছু ব্যবসায়ীর আই-ি পএস সুবিধা থাকলেও প্রায় ব্যবসায়ীদের কাটাতে হচ্ছে অন্ধকারে।
দাম সহনীয় রাখতে কঠোর অবস্থানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ
ক্রেতাদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমি- তির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘পোশাকআশাকসহ পুজোর উপকরণের বিষয়ে ক্রেতারা যে অভিযোগ করছে, তার জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা সত্যিই দুঃখিত। এবার ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে পুজোর অনেক উপকরণ আমদানি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। তবুও আমাদের মার্কেটের ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা রয়েছে যেন কোনভাবে অযৌক্তিক দাম বাড়ানো না হয়। যেন কোন ক্রেতা আমাদের দিকে অভিযোগ না তুলে । তবুও কেউ যদি দাম বাড়তি নেয়, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবুও আমি বলতে পারি, অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় টেরিবাজারের পণ্যের মান ও দাম অনেক ভালো অবস্থানে আছে।’
পুজো উপলক্ষে মার্কেটে আসা ক্রেতাদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ। এখানে আমরা ঈদে যেভাবে নজরদারি বাড়িয়েছি ঠিক দুর্গোপুজোকে ঘিরেও বাড়িয়েছি। কোন একজন সনাতনী ভাইবোন যেন টেরী বাজারে এসে হয়রানি, ছিনতাইসহ নানা ঘটনার শিকার না হয়, তার জন্য আমরা কঠোর নজরদারিতে রয়েছি। এমনকি আমি সভাপতি হয়েও সকাল ১০ টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মার্কেটের তদারকি করছি। আমাদের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করছে। নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুলিশের পাশাপাশি আমরাও লোকবল বাড়িয়েছি। হাজারি লেইনের গেইট থেকে বকসিরহাট পর্যন্ত আমাদের প্রতিনিধি রয়েছে। আশাকরি, কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটবে না । সনাতনী হিন্দু ভাইয়েরা তাদের কেনাকেটা নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে করতে পারবে। আর যে কোন সমস্যা বা অভিযোগ থাকলে আমাদের ব্যবসায়ী সমিতিকে জানাতে পারবে। আমরা ব্যবস্থা নেব।’