হুমাইরা তাজরিন »
‘চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ ’এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৬ ডিসেম্বর হতে চট্টগ্রামের আমবাগান সড়কের শহিদ শাহজাহান মাঠে চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে মাসব্যাপী চলছে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব ও মেলা ২০২৩’।
মেলায় ঘুরতে এসে ফারহানা আক্তার নামের এক দর্শনার্থী বলেন,‘ বিজয় মেলায় ঘুরতে বরাবরই ভালো লাগে। আগে সেটা কাজির দেউড়ি হতো। সেখানে আসা যাওয়াটা সহজ হতো। এখন এখানে একটু কষ্ট আসাটা। মেলায় আগের মতো দেশীয় পণ্যগুলো বিশেষ নেই। হাতে বানানো কুটির শিল্পের পণ্যগুলো তো একেবারেই নেই। সেটা খুব মিস করছি। মনে হয় যে সব মেলায় গতানুগতিক পণ্যগুলোই বিক্রি করছে। তাছাড়া খাবারের দোকান আগের চেয়ে বেড়েছে। ব্যবহার্য পণ্য কেনার চাইতে খাওয়ার আগ্রহ বেশি মানুষের।’
মেলায় বেচাকেনা প্রসঙ্গে এক বিক্রেতা বলেন,‘আলহামদুলিল্লাহ। বিক্রি ভালোই হচ্ছে। আশা করি সামনে আরো হবে। বিকেল পার হলেই ক্রেতা বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা থেকে আর দম ফেলার ফুরসত থাকেনা।’
বুধবার সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, লাল সবুজের বৃহৎ বর্ণিল ডিজিটাল ব্যানারে সাজানো হয়েছে গেইট। মেলায় এবারের আয়োজনে রয়েছে মোট ১৬০ টি স্টল। ছুটির দিন না হলেও মেলায় ছিলো দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। এবার অন্যান্য পণ্যের চেয়ে খাবারের স্টলগুলোই বেশি। ক্রেতারাও ভিড় করছেন এসব দোকানে। পিঠা থেকে শুরু করে বিরিয়ানি পর্যন্ত সবধরণের মুখরোচক খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে মেলায়।
মেলায় স্টলের নামও রাখা হয়েছে বেশ মজার। বাঙালি পরিবারগুলোতে শীতকালে মেয়েদের শ্বশুর বাড়িতে পিঠা পাঠানোর রীতি রয়েছে। সেই ঐতিহ্যকে স্মরণ রেখে দেওয়া ‘শ্বশুর বাড়ির পিঠা’ নামের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বাংলার রকমারি পিঠা। যার মধ্যে আছে মালপোয়া, নারিকেল পুলি, নকশী পিঠা, লবঙ্গ পিঠা, কুসুমকলি পিঠা, সবজি পাকোড়া, পাটি সাপ্টা, ভাঁপা পিঠা, ফিরনি ইত্যাদি।
এছাড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে জিলাপির স্টলটিতে। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে নানা আকৃতির , নানা রঙের, নানা স্বাদের জিলাপি।
আকৃতি অনুযায়ী প্রতি পিস পিঠার নাম রাখা হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
প্রতিবছর মেলার প্রধান আর্কষণ থাকে মুখরোচক আঁচার। নানান নামের এই স্টলগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে জেলিবার, আমের মোরব্বা, আনারসের আঁচার, কাঁচা কলার আঁচার , আমের আমসী , আমলকির মোরব্বা , কাঁচা আমের আঁচার, আমসত্ত্ব, রসুনের আঁচার, আপেলের আঁচার, চালতার আঁচার ,জলপাইয়ের আঁচার, আমড়ার আঁচার ,বড়ইয়ের আঁচার ইত্যাদি।
এছাড়া ভিন্ন স্বাদের যে মচমচা খাবারটি সকলের আগ্রহ বাড়াচ্ছে সেটি হলো ‘ ঝাল চানাচুর’। চানাচুর, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, সুগন্ধি লেবু, ধনে পাতা, সরিষার তেলের মিশ্রণে তৈরি এই ঝাল চানাচুর প্রতি টোঙার দাম রাখা হচ্ছে ২০ টাকা।
মেলায় রয়েছে দেশীয় কাঁচা ফলের চাট্নি। জলপাই,আমড়া ,কাঁচা কলা, ধনে পাতা ,কাঁচা মরিচ, পেয়ারা, বড়ই,কদবেল, আমলকি ইত্যাদি মিশ্রিত এই চাট্নি খেয়ে পার্সেল করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। প্রতি কৌটা ৩০ টাকা করে পাওয়া যাচ্ছে এই সুস্বাদু চাট্নি।
এছাড়া গ্রিল, চিকেন চাপ, নুডুলস, মোমো, বিরিয়ানি, ফুচকা ,চটপটি ,তান্দুরি চা , চিংড়ি ভাজা, কাঁকড়া ভাজা ইত্যাদির স্টলও রয়েছে।
শীতকালেও ছেলেপুলেরা লুফে নিচ্ছে রংবেরঙের রোলার আইসক্রিম। ৩০ থেকে ৫০ টাকা দামের এই আইসক্রিমটির একাধিক স্টলে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
এবারের মেলায় নারী শিশু কিশোরদের আনাগোনাই বেশি। স্টলগুলোও ঘুরে দেখা যায় নারীদের ব্যবহার্য পণ্যে ভরে গেছে মেলা। বিভিন্ন রকম গহনার দোকানই তার মধ্যে বেশি। এছাড়াও রয়েছে মেয়েদের সালোয়ার কামিজ, ওড়না, হিজাব, নামাজের হিজাব, শাল, ওয়ানপিস, টু পিস। জামাকাপড়ে পাশাপাশি মেয়েদের জুতারও মেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি স্টল। এই জামা কাপড় ও জুতার দোকানের বেশির ভাগ পণ্যেরই দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মান আহামরি ভালো নাহলেও দাম রয়েছে সকলের হাতের নাগালে। তাই বেছে বেছে কিনছেন ক্রেতারা। ছেলেদের জন্য রয়েছে নানা রঙের স্যুট কোট ,ব্লেজার, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, লুঙ্গি , শাল ইত্যাদি।
নারী পুরুষের পাশাপাশি শিশুদের জন্য রয়েছে নানা খেলনার দোকান। মেলার কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিশাল আকৃতির জাম্পিং রাইড ছাড়াও নাগরদোলা সহ কয়েকটি রাইড। যেখানে শিশুদের সাথে বড়োরাও কখনও কখনও মাতছেন আনন্দে।
এছাড়া এবারের মেলায় রয়েছে ৩ থেকে ৪টি ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্পের স্টল। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে ঘর সাজানো জিনিসপত্র হতে ব্যবহার্য বিভিন্ন তৈজসপত্র। বিশেষ করে নারীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে এইসব স্টলে। মাটির তৈজসপত্র ছাড়াও পাটের ও চটের তৈরি , স্টিল ও মেলামাইনের তৈরি, লোহা ও তামার তৈরি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের বেশকয়েকটি স্টল মেলায় রয়েছে। মেলাটি চলবে পুরো বিজয়ের মাস পুরো ডিসেম্বরব্যাপী।
জমজমাট স্টলে বাহারি পণ্য
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব ও মেলা ২০২৩