ছালাম, গিয়াসসহ ১৮ জনের মনোনয়ন বাতিল

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করা যাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক »

মনোনয়ন বাছাইয়ের প্রথম দিনে ৮ আসনে ১৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চট্টগ্রামের দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা। ৪ প্রার্থী বিভিন্ন দলের হলেও ১৪ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চেয়েছেন।

অনেকস্থানে হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও এক শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল থাকায় তারা বাদ পড়েছেন। তবে বাতিল হওয়া প্রার্থীরা ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের মনোনয়ন বৈধতার জন্য আপিল করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে এ মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।

জানা যায়, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে ৯ জন থেকে ৪ জনকে, চট্টগ্রাম- ৫ (হাটহাজারী) আসনে ১০ জন থেকে ২ জনকে ও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে ১৩ জন থেকে ৪ জনকে এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে ১ জনকে, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ১৪ জন থেকে ৩ জনকে, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে ১০ জন থেকে ২ জনকে, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে ৫ জন থেকে ১ জনকে ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে ৭ জন থেকে ১ জনকে বাতিল করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই)

এ আসনের আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন দলের মনোয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের পুত্র মাহবুব-উর রহমানের সঙ্গে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে অনুমান করছেন স্থানীয় ভোটাররা। কিন্তু মনোয়নয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
এ আসনে নির্বাচনী মাঠ নিশ্চিত করেছেন মাহবুব-উর রহমান (আওয়ামী লীগ), দিলীপ বড়ুয়া (বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল), মো. আবদুল মন্নান (ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মো. নুরুল করিম আফছার (বিএসপি), শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), মো. ইউসুফ (বিএনএফ) ও মো. এমদাদ হোসেন চৌধুরী (জাতীয় পার্টি)।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি)

ভোটারের স্বাক্ষর ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জমা দেওয়া তিনজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তারা হলেন গোলাম নওশের আলী মো. শাহজাহান ও রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী।
এ আসন থেকে যারা নির্বাচনী মাঠে থাকবেন, তারা হলেন- খাদিজাতুল আনোয়ার সনি (আওয়ামী লীগ), ত্বরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী (বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন), মীর মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ (বিএসপি), হোসাইন মো. আবু তৈয়ব (স্বতন্ত্র), মাজাহারুল হক শাহ চৌধুরী (বিকল্পধারা বাংলাদেশ), মো. শফিউল আজম চৌধুরী (জাতীয় পার্টি), মুহাম্মদ হামিদ উল্লাহ (ইসলামিক ফ্রন্ট) ও এম এ মতিন (ইসলামী ফ্রন্ট)।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ)

এ আসনের জাকের পার্টির নিজাম উদ্দিন নাছির ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তজোটের প্রার্থী আমিন রসূলের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তারাও নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে ত্রুটি রেখে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নির্বাচনী মাঠে থাকছেন মাহফুজুর রহমান মিতা (আওয়ামী লীগ), নুরুল আক্তার (জাসদ), মুহাম্মদ নুরুল আনোয়ার (বিএসপি), এম এ ছালাম (জাতীয় পার্টি), মুহাম্মদ উল্লাহ খান (বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট), মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী (স্বতন্ত্র), মো. মোকতাদের আজাদ খান (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), মো. আবদুর রহীম (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ)।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড)

এ আসনের বর্তমান সাংসদ দিদারুল আলম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন। পরে তিনি আবার তা বাতিল করেন। এছাড়া প্রার্থীদের ভোটার সমর্থকদের তালিকায় গরমিল থাকায় বিএনএফের আখতার হোসেন, দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন ও মো. ইমরান মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
বর্তমানে নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন এস এম আল মামুন (আওয়ামী লীগ), মো. দিদারুল কবির (জাতীয় পার্টি), খোকন চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি) ও মো. শহীদল ইসলাম চৌধুরী (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী)

এ আসনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছির হায়দার করিম ও মো. শাহজাহানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও ভোটার সমর্থকদের ভুল তথ্য দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মনোনীত হয়েছেন- উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম (আওয়ামী লীগ), ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (জাতীয় পার্টি), কাজী মহসীন চৌধুরী (বিএসপি), সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (কল্যাণ পার্টি), মো. নাজিম উদ্দিন (প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম) ও আবু মোহাম্মদ শামশুদ্দীন (বিএনএফ)।

চট্টগ্রাম ৬ (রাউজান)

এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় ভোটার তালিকা সঠিক না হওয়ায়। তার ৯৮ নম্বর তালিকায় তিনি যার সমর্থন নিয়ে নাম দিয়েছেন ওই ভোটার রাউজানের নয়। তিনি সাতকানিয়ার ভোটার। এছাড়া আরেকজন ভোটার থাকেন বিদেশে। মনোনীত হয়েছেন- এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), স. ম. জাফর উল্লাহ (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মো. ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি) ও মো. সফিক-উল আলম চৌধুরী (জাতীয় পার্টি)।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)

এই আসনে খেলাফতে আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হকের আয়-ব্যায় হিসেবের কোনো ব্যাংক একাউন্টের নথি জমা না দেওয়ায় প্রথমে তার মনোনোয়ন বাতিল করলেও পরে তিনি দাবি করেন তার ব্যাংক একাউন্ট আছে। এরপরও রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দেন। এছাড়া মনোনীত হয়েছে- সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (আওয়ামী লীগ), সৈয়দ মুহাম্মদ হামেদ হোসাইন (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মোহাম্মদ আরিফ মঈনু উদ্দীন (বিএসপি), আবদুর রব চৌধুরী (জাতীয় পার্টি), মো. আবুল হোসাইন (বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট) ও মকবুল আহম্মদ চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি)।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও)

এ আসনে মনোনোয়ন যাচাই-বাছাই শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো দুই প্রার্থী ১ শতাংশ ভোটারের সঠিক তালিকা দিতে না পারায় বাদ পড়েছেন। এরমধ্যে রয়েছেন- চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুছ ছালাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশাদুল আলম বাচ্চু। এছাড়া একই ভুলে বাদ পড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরী। এছাড়া ঋণখেলাপির অভিযোগে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মহিবুর রহমান বুলবুলের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। আর মনোনোয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় কংগ্রেসের আরেক প্রার্থী মনজুর হোসেন বাদল প্রস্তাবক ও সমর্থন নাম না দেওয়া এবং হলফনামা, ছবি না থাকায় তার প্রার্থিতা বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তা।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের ১, ২, ৩, ৬ ও ১৩ আসনের রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ে অধিকাংশ প্রার্থী ভোটার সমর্থকদের তালিকায় গরমিল থাকায় মনোনয়নগুলো বাতিল করা হয়। বাতিল হলেও প্রার্থীদের আপিলের সুযোগ রয়েছে। ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া কয়েকজন প্রার্থীর নথিপত্র পর্যাপ্ত না থাকায় তাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দিয়েছি। আমরা চাইনি সিলি (ঠুনকো) বিষয় নিয়ে কারও প্রার্থিতা বাতিল হোক।’