দুরন্ত কৈশোর
আলমগীর কবির
এখানে আমার কৈশোর কেটেছে
কৈশোর মানে কি মায়া,
চোখের তারায় আলোর নাচন
মায়ের মমতা ছায়া!
এখানে আমার কৈশোর কেটেছে
পাখিদের গানে সুরে,
মাঠ পেরুলেই কমলা নদীর
সাঁকোটা খানিক দূরে।
সাঁকোটা আমায় রোজ ডেকে যায়
নদী ডেকে যায় সাথে,
ঘুড়িটা ধরেছে ছোট ভাই আর
লাটাই আমার হাতে!
এখানে আমার কৈশোর কেটেছে
ফুল ফোটাবার সুখে,
সকালে বিকালে সুবাস বিলাতো
গোলাপের কুঁড়ি বুকে।
এখানে আমার কৈশোর কেটেছে
আলোর পাখির ডাকে,
তারপর থেকে বুকের ভেতরে
আলোর পাখিটা থাকে!
ভালো লাগে
দীপক বড়ুয়া
ভালো লাগে মিষ্টি ভোরের হাসি
রঙের ছটায় সূর্য আলো রাশি রাশি রাশি
রাখাল ছেলের সবুজ মাঠে সুরধ্বনি বাঁশি!
ভালো লাগে দুরন্ত ওই শাদা মেঘের ভেলা
নীল আকাশের গাঢ় নীলের মিষ্টি মধুর মেলা
মেঘের মেয়ের দুষ্টু হাওয়ায় বৃষ্টি কণা ফেলা!
ভালো লাগে সবুজ মাঠে চাষার জারি গান
মহেশখালির বাগান জুড়ে কচি কাঁচা পান
বাংলা মায়ের বসুধাতে যশ-খ্যাতি সম্মান!
ভালো লাগে সদ্য শিশুর তুল তুল তুল ক্ষণ
চাঁদ সূর্য ধ্রুব তারার স্নিগ্ধ আলিঙ্গন
বাংলা মাকে দীপ্ত আলোয় ভরে দেবার পণ!
ভালো লাগে শুভ্র গাঁয়ের পথের সোঁদা মাটি
বাংলা ভাষার কথামালার নিখুঁত গন্ধ খাঁটি
হীরের চেয়েও বাংলাদেশের প্রিয় স্বজন মা‘টি!
ভালো লাগে কর্ণফুলী রাঙামাটি বন
কক্সবাজারের ঝাউবনের ওই পাতারই শনশন
জোয়ারভাটায় দেশকে গড়ার সুপ্ত আয়োজন!
জন্মভূমি
নকুল শর্ম্মা
আমার মায়ের আঁচলপাতা ফসল ভরা মাঠে
থোকায় থোকায় পদ্ম হাসে পদ্মদিঘির ঘাটে।
পায়ের নূপুর রিনিঝিনি বাজে সকাল দুপুর
ফুলে ফলে শস্য জমিন মাছে ভরা পুকুর।
নদীর বুকে পালতোলা নাও মাঝির কণ্ঠে গান
সবুজ মাঠে বাতাস খেলে জুড়ায় সবার প্রাণ।
মায়ের চোখের আলো নিয়ে ভোরের সূর্য ওঠে
পাখির কণ্ঠে মধুর সুরে ফুলের কলি ফোটে।
হিজল বনে দোল দিয়ে যায় সাদা বকের সারি
আম কাঁঠালে ঘিরে আছে আমার ছোট্ট বাড়ি।
সহজ সরল মানুষগুলো সুখের স্বপ্ন আঁকে
এমনই করে থাকে ওরা জীবন নদীর বাঁকে।
আমার মায়ের মিষ্টি হাসির আদর মাখা মুখ
আগলে রাখে বিপদ বাধায় তাতেই মায়ের সুখ।
সকল কিছু তুচ্ছ মানি আমার মায়ের কোলে
পরম স্নেহ সোহাগ আদর যাঁর ছায়াতে দোলে।
রানির মত মায়ের বক্ষ রত্ন ভরা ঘর
সবাই পারে ছেড়ে যেতে মা যে হয় না পর।
বাংলাদেশ
জনি সিদ্দিক
মায়ায় ঘেরা রঙিন সাজে
লাল-সবুজের বাংলাদেশ,
ধানের ক্ষেতে সোনার ফলা
শিশির ফোঁটায় মুক্তো কণা
আলতো রোদে লাগে বেশ।
আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা
রামধনুতে আঁকা দেশ,
সবুজ শ্যামল মাঠের ধারে
মাদুর পেতে নদীর পাড়ে
দাদুর মুখে সবাই মিলে
গল্প শুনতে লাগে বেশ।
আঁকাবাঁকা সাপের মতো
শত নদীর বাংলাদেশ,
তিরিং বিড়িং ফড়িং ছোটে
ঝোঁপ বাদাড়ে ফুল যে ফোটে
শিউলি-বেলির মিষ্টি সুবাস
দেয় ছড়িয়ে সুখের রেশ।
ভাদ্রের বৈচিত্র্য
শাকেরা বেগম শিমু
শিউলি বকুল ঝরছে ভোরে,
মেঘগুলো সব ভাসছে দূরে,
সবুজ ঘাসে শিঁশির হাসে,
নদীর দুকূল ভরা কাশে।
কাশের গুচ্ছ শিউলিমালা,
নবীন ধানে ভরছে ডালা,
রসালো তাল ঝুলছে গাছে,
বাবুই পাখির বাসাও কাছে।
ভাদ্র মাসে তালের পিঠা,
রোদে বসে খাইতে মিঠা।
তুলে ধরো ঘোমটাখানি,
শরৎ হলো ঋতুর রানি।
শরৎ আহবান
আহসানুল হক
দেখবে শরৎ ? এসো তবে
এই আমাদের গাঁয়
বকের সারি কেমনে হারায়
দূরের নীলিমায় !
দেখবে তুমি শাপলা শালুক
কাশফুলেদের হাসি
হালদা পাড়ের পাল তোলা নাও
শান্ত জলরাশি ?
শিশিরভেজা ঘাস-বিছালি
পানকৌড়িদের খেলা
নীল চাঁদোয়া উপুড় হওয়া
ঘাসফড়িংয়ের মেলা !
ডাকছে তোমায় হাতছানিতে
হালদা পাড়ের গাঁ যে
শরৎ রানি কী অপরূপ
রূপ বাহারে সাজে !