এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
উঠার জন্য পেনিনসুলার সামনে নির্মিত হবে র্যাম্প
উঠা-নামার জন্য টাইগারপাসে থাকছে লুপ
পাহাড় রক্ষায় লালখানবাজার থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত হবে দুইলেন
ভূঁইয়া নজরুল »
অবশেষে চূড়ান্ত হলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা। আর তা চূড়ান্ত করতে সময় লাগলো চার বছর। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে বারবার মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল।
মিটিং চলাকালীন সময়ে তৎকালীন গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমিনের মধ্যে বাক বিতণ্ডা, লালখান বাজার থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত পাহাড় রক্ষা, চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন এলাকা, আগ্রাবাদের বক্স কালভার্ট প্রভৃতি ইস্যুতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল নকশা নিয়ে নানা জনের নানা মত ছিলো। সব সমস্যার সমাধান হলেও লালখান বাজার প্রান্তে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিভাবে যুক্ত হবে তা নিয়ে বিরোধ লেগেই ছিল। অবশেষে এই বিরোধের অবসান হলো।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিত সভায় এর সমাধান হয়। আর এতে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা নিয়ে সকল ধরনের বিরোধের অবসান হলো। সর্বশেষ সমাধান হয়েছিল বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত অংশের বিরোধ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে হওয়া সেই বিরোধ অবসান শেষে চূড়ান্ত নকশাও তৈরি করেছে সিডিএ।
গত ৮ জুন সিডিএ সম্মেলন কক্ষে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সভাপতিত্বে বিভিন্ন সংস্থা প্রধানদের উপস্থিতিতে একটি সমন্বয় সভা হয়। সেই সভায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে এবং ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট রক্ষায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর এসব সিদ্বান্তের ফলে লালখান বাজার মোড় কিংবা টাইগারপাসে আগামীতে যানজট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।
টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত দুই লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিমান বন্দর থেকে আসা চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি লালখান বাজার মোড়ের আগে দুইলেন নেমে যাবে। বাকি দুইলেন রাস্তার ডান পাশ (পূর্ব) দিয়ে সোজা জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের সামনে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে। যে দুইলেন নেমে যাবে সেই দুইলেন গ্রেড সেপারেটরের মাধ্যমে বিদ্যমান আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত থাকবে। এতে মূলত বিমান বন্দর থেকে আগত গাড়িগুলো লালখান বাজার মোড়ে নামতে সুবিধা হবে। সার্কিট হাউজ কিংবা হোটেল র্যাডিসনমুখী গাড়িগুলো সহজে নেমে বিদ্যমান রোড হয়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
বাকি দুইলেন কোথায়?
বিমান বন্দর প্রান্ত থেকে আসা চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুইলেন লালখান বাজারের আগে নেমে গেলে বাকি দুইলেনের কি হবে? এই প্রশ্নের জবাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বাকি দুইলেন উপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় অতিক্রম করে জমিয়তুল ফালাহ গেইটের কাছে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে। এতে বহদ্দারহাট প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীরা সহজেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমান বন্দরের দিকে চলে যেতে পারবে।’
জিইসি মোড়ে পেনিনসুলার সামনে র্যাম্প হবে
বর্তমান নকশায় দেখা যাচ্ছে লালখান বাজার প্রান্তে বিমান বন্দরমুখী যাত্রীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে জাকির হোসেন রোড দিয়ে আগত যাত্রীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কিভাবে উঠবে? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, এজন্য আমরা জিইসি মোড়ে হোটেল পেনিনসুলার সামনে একটি র্যাম্প করবো। এই র্যাম্প দিয়ে বিমান বন্দরমুখী যাত্রীরা সহজেই উঠতে পারবে।
এই র্যাম্প কোথায় হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পূর্বের ডিজাইনে যে স্থানে ছিল ঠিক সেখানেই এটি নির্মিত হবে।’ তবে পূর্বের ডিজাইনে ব্লুসম গার্ডেনের ( ম্যানিলা হিল) সামনে থেকে র্যাম্প ছিল।
টাইগারপাসে থাকবে উঠা-নামার পৃথক লুপ
যেহেতু লালখান বাজার মোড় থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার কোনো সুযোগ নেই তাহলে সার্কিট হাউজ কিংবা হোটেল র্যাডিসন থেকে যাত্রীরা কিভাবে বিমান বন্দর যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এজন্য নিউমার্কেট দিক থেকে আসা রোডটি থেকে একটি র্যাম্প লুপ আকারে টাইগারপাস মোড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত হবে। এতে ভিআইপি যাত্রীরা সিআরবির ভেতর দিয়ে এসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবে। একইসাথে নিউমার্কেট ও কোতোয়ালী এলাকার যাত্রীরাও উঠতে পারবে।’
কিন্ত বিমান বন্দর দিক থেকে আসা যাত্রীরা নামবে কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমাদের চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বিদ্যমান দেওয়ানহাট ব্রিজের পশ্চিম পাশ (টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনী দিক) দিয়ে আসবে। তা আসার সময় একটি র্যাম্প লুপ আকারে রেলওয়ে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনের রোডের সাথে যুক্ত হবে। এতে অলংকার ও পাহাড়তলীর দিকের যাত্রীরা আমবাগান রোড হয়ে চলে যেতে পারবে।
দেওয়ানহাট ব্রিজের উপর দিয়ে যাবে না এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
বিমানবন্দর দিক থেকে আসা এলিভেটেড এক্সপ্রেসটি দেওয়ানহাট ব্রিজের কোন দিক দিয়ে যাবে এটি নিয়ে অনেকের কৌতূহল। বিভিন্ন সময়ে সিডিএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটি বর্তমান ব্রিজের উপর দিয়ে যাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহফুজুর রহমান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বিদ্যমান দেওয়ানহাট ব্রিজের পশ্চিম পাশ (টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনী দিক) দিয়ে যাবে। এটার উপর দিয়ে যাবে না। তবে দেওয়ানহাট ওভারপাসের উপর দিয়ে যাবে।
কোনো পাহাড় কাটা হবে না
যেহেতু টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশে রাস্তার প্রশস্ততা কম সেহেতু এই অংশে ফ্লাইওভারের প্রশস্ততা দুইলেন করা হয়েছে। এতে উভয় পাশের কোনো পাহাড় কাটা হবে না। এবিষয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মূলত: পাহাড় যাতে কাটতে না হয়, সেজন্যই আমরা এই অংশে চারলেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছি না। বিদ্যমান সড়কের উপর দিয়েই আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ হবে।’
উল্লেখ্য, লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত চার লেনের ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। কিন্তু এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে। বর্তমানে সল্টগোলা রেল ক্রসিং থেকে পতেঙ্গা সি বিচ পর্যন্ত নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পিলার নির্মাণের কাজ চলছে বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত। ২ হাজার ৮৫৪ কোটি ৫৬ লাখ ১২ হাজার ১১৩ টাকায় তারা ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে ম্যাক্স রেনকিন জেবি। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার নির্মাণকারীও ছিল এই সংস্থাটি।