চুয়েট- হ্রদটি পরিত্যক্ত হলো কেন

বাংলাদেশে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় চালান তাঁরা নিজেরাও বোধহয় বোঝেন না বিশ্ববিদ্যালয় কাকে বলে। ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটির মধ্যেই যে ব্যাপক অন্তর্নিহিত অর্থ লুকায়িত আছে তা তাঁরা ধরতে পারেন না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। তাই তাঁরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণ স্কুল-কলেজ বলে ভাবেন ফলে এঁদের হাতে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও স্কুল-কলেজ পর্যায়ের মানে নেমে পড়ে। তাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রেটিংয়ে সর্বনিম্নে থাকে বাংলাদেশের নাম।
যাক সে প্রসঙ্গ। আসল কথায় আসি। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একটি সংবাদ দেখে এসব কথা বলতে হলো। একটি পত্রিকা লিখেছে, চুয়েটের মূল ফটক পেরিয়ে ডান পাশে কিছু দূর গেলেই আছে একটি হ্রদ। সে হ্রদের বিভিন্ন স্থানে জমেছে ময়লার স্তূপ। ঘোলাটে পানির ওপরে ময়লার স্তর, উড়ছে মশার ঝাঁক। সেই সঙ্গে দুর্গন্ধ তো রয়েছেই। এ কারণে মানুষজনের উপস্থিতিও দেখা যায় না সেখানে।

পত্রিকা আরও লিখেছে, সকালে সূর্যের আলো পড়তেই ঝলমল করত হ্রদের পানি। ছিল দৃষ্টিনন্দন ঘাট। সেই সঙ্গে হ্রদে ঘুরে বেড়ানো যেত নৌকা নিয়ে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিড় করতেন সেখানে। গল্পে-আড্ডায় খুঁজতেন প্রশান্তি। তবে এখন আর সেই দিন নেই। দীর্ঘদিনের অবহেলায় হ্রদটি নাব্যতা হারিয়েছে। প্রতিনিয়ত ময়লা–আবর্জনা ফেলায় পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। এ নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ‘২০১৯ সালে সুবর্ণজয়ন্তী ও সমাবর্তনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে লেকের সংস্কারসহ আশপাশের এলাকা দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছিল। আমরা লেকের পাশে বসে আড্ডা দিতাম, সময় কাটাতাম। এমনকি নৌকা নিয়ে লেকের এক পার থেকে আরেক পারে যেতাম। হ্রদের বিপরীত পাশে একটি পদ্মপুকুরও ছিল। তবে এখন আর সেই দিন নেই।’
বলেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র পাঠদানের ক্ষেত্র নয়। এই উদ্যান, এই যে লেক, এই যে খোলা চত্বর, সবুজ প্রকৃতি সেসব রক্ষা করে সজীব করে রাখাও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়মিত কাজ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, হ্রদ সংস্কারের জন্য আলাদা কোনো প্রকল্প নেই। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছর জুনে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। আগামী বছর জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। ব্যয় ধরা হয় ৮৮ লাখ টাকা।
আমরা বুঝতে পারি না, লেক পরিষ্কার রাখা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম, আঙিনা বা আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখার মতোই একটি দৈনন্দিন কাজের অংশ। প্রতিদিন রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখা, বাগানের পরিচর্যা করা যেমন কাজ তেমনই হ্রদ পরিষ্কার করাটাও দৈনন্দিন কাজের অংশ। সেটির আলাদা প্রকল্প লাগবে কেন? তার মানে যতদিন প্রকল্প চালু থাকবে ততদিন হ্রদ পরিষ্কার থাকবে তারপরে আবার বন্ধ?
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি এই অদ্ভুত নিয়ম ভেঙে সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত নিয়মে ফিরে আসবেন?