চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। ছবি : সংগৃহীত

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ ঐক্যজোটের মুখপাত্র ও হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের সাবেক অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

মঙ্গলবার তাকে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম এ আদেশ দেয়।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় চিন্ময় দাশের ক্ষুব্ধ অনুসারীরা আদালত প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তার অন্যতম আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, “এই মামলা ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূক। আমরা আজ জামিন আবেদন করেছি। শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। আমরা কারাগারে উনার ডিভিশন ও ধর্মীয় বিধান পালনের দুটি আবেদন করেছিলাম। আবেদন দুটি মঞ্জুর করেছে আদালত। আজকের আদেশে আমরা সংক্ষুব্ধ। আগামীকালই আবার জামিনের আবেদন করব।”

গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আট দফা দাবিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রক্ষচারী।

গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময় দাশকেও আসামি করা হয়।

মামলা হওয়ার এক মাসের মাথায় সোমবার বিকালে ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে জানানো হয়, কোতোয়ালি থানার ওই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, দিনাজপুর, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে।

চিন্ময় দাশকে রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

তাকে প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে আদালত তোলার সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

চিন্ময় দাশ প্রণামের ভঙ্গিতে আদালত প্রাঙ্গণে সমবেত সনাতনীদের উদ্দেশ্যে হাত তোলেন। তার পক্ষে বেশ কয়েকজন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

চিন্ময় দাশকে এজলাসে হাজির করা হলে সমবেত আইনজীবীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। তখন চিন্ময় দাশ হাত জোড় করে আইনজীবীদের স্লোগান দিতে নিষেধ করেন।

তাকে এজলাসের সামনের দিকের বেঞ্চে নিয়ে বসানো হয়। বিচারক বলেন, “উনাকে চট্টগ্রামের বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে আদলতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উনার কাস্টডি ওয়ারেন্ট দিতে হবে।”

এসময় আইনজীবীরা সমস্বরে তাদের সবার বিরুদ্ধে কাস্টডি ওয়ারেন্ট দেওয়ার আহ্বান জানাতে থাকেন এবং জামিন শুনানি করার আহ্বান জানান।

তখন বিচারক বলেন, “উনার প্রতি আপনাদের আবেগকে আমি শ্রদ্ধা করি। জামিন শুনানি করা যাবে কিনা তা জানতে হবে।”

তারপর বিচারক এজলাস থেকে নেমে যান। এরপর চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ও আইনজীবীরা আবার বিচারক হাজির হওয়ার জন্য এজলাসে অপেক্ষা করতে থাকেন।

বেলা সাড়ে ১১টার পর বিচারক আবার এজলাসে আসেন এবং জামিন শুনানি করার নির্দেশ দেন।

তখন চিন্ময় দাশের পক্ষে আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা জামিন শুনানি করেন। চিন্ময় দাশ নিজেও বক্তব্য রাখেন।

জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর কারাগারে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ যাতে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করতে পারেন সে বিষয়ে আদেশ চান তার আইনজীবীরা। আদালত এ বিষয়ে কারাবিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।