নিজস্ব প্রতিবেদক »
সরকার চিনির দর নির্ধারণ করে দেওয়ার একমাস পরও বাজারে সেই দরে চিনি মিলছে না। বরং গত পাঁচদিনের ব্যবধানে আরও চড়েছে দাম। গত এপ্রিল মাসের ৬ তারিখ প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম ১০৪ টাকা আর প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এদিকে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নগরীর বাজারগুলোতে হঠাৎ ‘উধাও’ চিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় চিনি আমদানি নিয়ে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এ অবস্থায় গতকাল চিনিকলের মালিকরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক চিঠির মাধ্যমে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির দাম ৬৭৫ মার্কিন ডলার। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৫২০ ডলার। এই বাস্তবতায় চিনি আমদানির ঋণপত্র খুলতে ‘ভীতির সম্মুখীন’ হচ্ছেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। কারণ, বর্তমান দামে চিনি আমদানি করলে তাতে প্রতি কেজিতে সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ১৩১ টাকা।
গতকাল বুধবার সকালে নগরের খাতুনগঞ্জ ও রেয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিনি ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নির্ধারিত দরে চিনি বিক্রি করছে না। ফলে চড়া দামে চিনি মজুদ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। প্রায় ব্যবসায়ী তাদের চিনি বিক্রির সঠিক দর জানাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। তবে চাক্তাই ও রেয়াজউদ্দিন বাজারে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। যা গত ছয়দিন আগে (বৃহস্পতিবার) বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। যা এ কয়দিনের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ টাকার বেশি। এছাড়া বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সংকট রয়েছে।
চাক্তাইয়ের মুদির দোকানদার মো. আলী সওদাগর বলেন, বাজারে প্যাকেটজাত চিনির ‘কৃত্রিম সংকট’ রয়েছে। কেন সংকট যারা চিনি ব্যবসার সাথে জড়িত তারাই ভালো জানবেন। তবে আমার কাছে কয়েক বস্তা চিনি থাকলেও তা বিক্রির শেষের পথে। আজকে (বুধবার) আমরা চিনি বিক্রি করেছি মানভেদে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে।
সরকারের নির্ধারিত দরে কেন বিক্রি করছেন না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পাইকাররা আমাদেরকে সরকারের নির্ধারিত দরে দিচ্ছে না। আমরা কিভাবে বিক্রি করবো। চিনি না রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। নিয়মিত ক্রেতাদের জন্য রাখতে হচ্ছে। আমাদের এখন পাইকারিতে কিনতে হয় ১২০ টাকার উপরে। তাহলে ১০৪ টাকায় কিভাবে বিক্রি করি?
এদিকে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) খাতুনগঞ্জের এক পাইকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘সরকার দর নির্ধারণ করে দেওয়ার পর চিনি ব্যবসার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চিনি সরবরাহ সাময়িকভাবে কমিয়েছেন। যার ফলে আমাদের কাছে এখন প্যাকেটজাত চিনি নেই। এতদিন প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি করেছি। খোলা চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছিলাম। কারণ ক্রেতারা সরকারের নির্ধারিত দরে চিনি চায়। এদিকে আমাদের তো কোন প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত দরে দিচ্ছে না। এমনকি এক ট্রাক চিনি কিনলেও ক্যাশ মেমো দেয় না। প্রশাসন এসে আমাদের কাছে মেমো দেখতে চায়। যার ফলে প্রশাসনিক ঝামেলা এড়াতে খোলা চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছি। দুদিন দরে প্যাকেটজাত চিনিও বন্ধ রেখেছি।