নিজস্ব প্রতিবেদক
বাজারে গিয়ে কষ্টে পড়ে যান ক্রেতারা। খরচের বরাদ্দ যতো, তার চেয়ে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা অসাধু পন্থা অবলম্বন করছেন। দাম বাড়ার ইশারা পেয়ে বাজারে চিনির দামতো বাড়িয়েছেন, পাশাপাশি কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন।
নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে কয়েকটি দোকানে। খোলা চিনিও পরিমাণে কম। ১০ থেকে ১৫ কেজির বেশি চিনি নেই খুচরা দোকানগুলোতে। খোলা বাজারে চিনির দাম ১১০ টাকা থাকলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়।
দোকানিরা জানান, ব্যবসায়ীরা চিনি বিক্রি বন্ধ রাখায় তারা দোকানে চিনি আনতে পারছেন না। কয়েকদিন পরে চিনির দাম আপনা-আপনি বেড়ে যাবে। আগের দামে কেউ বিক্রি করতে চাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৭ লাখ ৩৪ হাজার টন চিনি আমদানি হয়। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টন চিনি। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৩৪ হাজার টন কম চিনি আমদানি হয়েছে। ডলার সংকট ও এলসি জটিলতার কারণে চিনি আমদানিতে ভাটা পড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী মো. আলমগীর বলেন, ‘হাতেগোনা করপোরেট কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিরা চিনি আমদানির করার জন্য এলসি খুলতে পারেনি। এ চিনি আসতে আরো দু মাস সময় লাগবে। আসার পরও দাম তাদের উপর নির্ভর করবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে চিনির ব্যবসা করে আসলেও এখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোই ব্যবসায়ী হয়ে গেছে।’
চিনির দাম নিয়ে কর্নেলহাটের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা অনুব্রত দে বলেন, ‘আমাদের কাছে আগের চিনি যা আছে তা আগের দামেই বিক্রি করছি। কিন্তু দোকানদারদের কাছে চিনি বেশি নেই। আমার কাছে ১০ থেকে ১৫ কেজির মতো হবে। তা খুচরা বিক্রি করলে আর একদিন যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা চিনি আনতে পারছি না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চিনির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। আজকের বাজারে চিনির দর বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৫৩৫০ টাকা। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিন পরেই তো দাম বাড়বে। সামনে রমজানও আছে। তাই ব্যবসায়ীরা চিনি মজুদ করে বাড়তি দামে বিক্রি করতে চাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রশাসন ছোট দোকানগুলোতে যেভাবে অভিযান করে সেভাবে ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে অভিযান করলে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’
এ নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘আমি নিজেও বাজারে গিয়ে দেখেছি। অনেকে আমাকে ফোন করেও জানিয়েছে। চিনির দাম এরমধ্যে বেড়ে গেছে। কিছু কিছু বাজারে নাকি চিনিও পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার ব্যবস্থাপনা নীতির কথা আমরা অনেক আগে থেকে বলে আসছি। কিন্তু সরকার এ নীতি না করলে বাজার অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে থেকে যাবে। তারা সারাদেশকে জিম্মি করে রাখবে। হঠাৎ করে অভিযান ও জরিমানা দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীকে সাধু করা যাবে না। কড়া মনিটরিং লাগবে।’
এ নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিনই অভিযান চলছে। কিন্তু চট্টগ্রাম শহরের মানুষ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় আমাদের লোকবল নেই বললেই চলে। আমরা পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে আছি তিনজন। একদিকে গেলে বাকি দিকগুলো থেকে যায়।’