চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার বেসরকারিভাবে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে, আমদানিতে করভার ৬২ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নির্ধারণ করেছে। বাজারে এখন মোটা চাল ৫০ টাকা ছুঁয়েছে। আমনের ভরা মৌসুমে চাল আমদানি সহজ করার সিদ্ধান্তে কৃষকরা ন্যায্যদাম প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন এই অভিমত অর্থনীতিবিদদের। কেননা আমদানির কারণে কৃষকরা কম দামে ধান ছাড়তে বাধ্য হবেন। খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে কিন্তু কীভাবে! চালকল মালিকরা জানিয়েছেন, আমনের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ধান ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। সরকারের ধানÑচাল ক্রয়ের গতি মন্থর। পরিস্থিতি এমন যে, যে কোনো পরিস্থিতিতে কৃষকরা ঠকেন, আর ভোক্তারা দ্রব্যমূল্যের আগুনের আঁচে পোড়েন।
তথ্য উপাত্ত আর পরিসংখ্যানের গরমিলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। অতীতের উদহারণ থেকে বলা যায়, সামগ্রিক প্রয়োজনের তুলনায় কিছু ঘাটতি থাকলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল আমদানি করেন বেসরকারি আমদানিকারকরা। তখন দাম কিছুটা কমে আসে কিছুদিন যেতে না যেতে চালের দাম আবার বেড়ে যায়। শুধু চাল নয়, তেলের দামও সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে, সরকার থেকে এর কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে অপেক্ষা করেন প্রতিক্রিয়ার জন্য, যতই লেখালেখি হোক না কেন, দাম আর কমার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। পেঁয়াজ এখনও ৭০/৮০ টাকা কেজি। মৌসুম এলেও নতুন আলু, পুরনো আলু কেজি ৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আবার আমদানি, পাইকার ও খুচরা বাজারে দামের তারতম্য বুঝাও ভার। কৃষিপণ্য উৎপাদনকারীরা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে নিয়মিতই ঠকছেন, অন্যদিকে ভোক্তারা অনেক বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনছেন। উৎপাদনকারি এবং ভোক্তা দুইজনই ঠকলেন, দেখা যাচ্ছে উৎপাদনের মৌসুমেও পণ্যের দাম বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা একবার চাল, তারপর আলু, পেঁয়াজ, তেল, মসল্লা, এভাবে নিয়মিত বিরতিতে জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছেন, কোনো প্রকার যৌক্তিক কারণ ছাড়াই। এখন কোভিডের কারণে মানুষ এমনিতেই দিশেহারা, কর্মসংস্থানের অভাব প্রকট, অনেকের চাকরি নেই, জীবিকা হারিয়েছেন অনেকে, এই সময় সন্তান পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই প্রবল কষ্টকর হয়ে উঠেছে। দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবনে কেবল দুর্ভোগই ডেকে আনছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে সরকারের তেমন পদক্ষেপ নেই। ভোক্তাদের দাবি পৃথক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় গড়ে তোলা হোক, যাতে তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগামহীন মুনাফার আঁচ থেকে মুক্তি পান। মোটা চাল এখন ৪৮-৫০ টাকায়, যা চলতি মাসের শুরুতে ছিল ৪২Ñ৪৪ টাকা, মাঝারি চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকার এবং সরু চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কম শুল্কে চাল আমদানি করলেও বাজারে দাম কমার নিশ্চয়তা নেই। মিল মালিক, আড়তদার, আমদানিকারক মিলে অসাধু সিন্ডিকেট চালের বাজার অস্থির করে তুলছে, পত্রিকান্তরে প্রকাশ, মিল মালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল দেয়নি।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কেন বাড়ছে, কেন ব্যবসায়ীদের বাগে আনা যাচ্ছে না তার কোন কারণ মানুষের জানা নেই। অর্থনীতিবিদদের মন্তব্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। করোনার এ সময় পুষ্টি খাবার স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় অথচ সাধারণ মানুষ একেবারে কায়ক্লেশে জীবনের চাকা টানছে-সরকারের কি কিছুই করার নেই?
Uncategorized