দেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে আমন ধানের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৬ আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দুই দফা বন্যা দেখা দেয়। এতে ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন চালের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে আগামী বোরো উত্তোলনের আগ পর্যন্ত চালের বাজার অস্থিতিশীল থাকতে পারে। এ অস্থিতিশীলতা কাটাতেই জরুরি ভিত্তিতে আমদানি বাড়াতে হবে। একটি দৈনিকে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে খুব একটা উৎসাহিত হচ্ছেন না। তাদের মতে, আমদানি করা চালের দাম বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি হবে। এ কারণেই সরকার শুল্ক তুলে দেয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমদানি উৎসাহিত করার পাশাপাশি বাজারে নজরদারিও বাড়াতে হবে। ব্যবসায়ীরাই বলছেন, এর কারণ আমাদের বাজারের চরিত্র কারো অজানা নয়। পাশাপাশি ওএমএস, ট্রাক সেলসহ অন্যান্য প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে।
অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েই চলেছে। চালের দামের ঊর্ধ্বগতি থামেনি। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনই বলছে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম (ব্রি-১৮ ও পাইজাম) কেজিপ্রতি খুচরায় ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিকন চাল (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) কেজিপ্রতি ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে দাম এর চেয়েও বেশি।
চাল আমাদের প্রধান খাদ্য হওয়ায় এর মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। যেভাবে প্রতিনিয়ত চালের দাম বাড়ছে এবং আমদানি ও মজুদ কমছে তাতে মানুষ ভবিষ্যতের কথা ভেবে রীতিমতো শঙ্কিত। বর্তমানে বাজারদরে যে অস্থিরতা চলমান এর প্রভাবে চালের দামও পুনরায় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চাল ও গমের দাম সর্বস্তরের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা উচিত। বাস্তবতা হলো, চালের সরকারি মজুদ যদি পর্যাপ্ত না থাকে তাহলে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়বে। কেননা অসাধু ব্যবসায়ী ও অবৈধ মজুদদার কর্তৃক অতিমুনাফা অর্জনের লোভে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকারি গুদামে চালের মজুদ যখন বেশ কমে তখন বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাবে চালের দাম বাড়ে। অন্যদিকে খাদ্য অধিদপ্তর ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বারবার ব্যর্থ হয়। সরকার ধান ও চালের যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, ধান-চাল ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা সেই দামে খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে তা বিক্রি করতে রাজি হন না। কারণ বাজারে ধান-চালের দাম তার চেয়ে বেশি। বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। আর এজন্য দ্রুত চাল আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ