কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
এম. জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলা সদরের চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতু, চন্দনাইশ অংশে দোহাজারী সাঙ্গু নদী ও বরুমতি খালের উপর নির্মাণাধীন ছয়লেনের ২টিসহ চারটি সেতুর কাজ অবশেষে দৃশ্যমান হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬০ মিটার লম্বা বরুমতি সেতুতে একসাথে ছয়লেনের কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও ২৩৮ মিটার লম্বা দোহাজারী সাঙ্গু, ৬০ মিটার লম্বা পটিয়ার ইন্দ্রপুল ও ৩১০ মিটার লম্বা মাতাহুমুরী সেতুর প্রথমে ৩ লেনের কাজ করা হচ্ছে। যা আগামী মার্চের মধ্যেই শেষ হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
ইতিমধ্যে সবগুলো সেতুতে গার্ডার ও স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। সাঙ্গু সেতুর ৭৫ মিটার আরসিসি ঢালাই দৃশ্যমান হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আরো ৪০ মিটার আরসিসি ঢালাই সম্পন্ন হবে। মার্চের মধ্যে ৩ লেনের কাজ শেষে মে মাসের মধ্যেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। পরবর্তীতে বিদ্যমান পুরোনো সেতুগুলো ভেঙে বাকি ৩ লেনের কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া বরুমতি সেতুর দু’পাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কাজও পুরোদমে শুরু হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিতব্য এসব সেতুর দুই পাশে হালকা যান চলাচলের জন্য রাখা হবে বিশেষ ব্যবস্থা।
‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) যৌথ আর্থিক সহায়তায় মহাসড়কে ছয়লেনের এই চারটি সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। এই চারটি সেতুর নির্মাণ কাজ পেয়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
স্পেক্ট্রার প্রকৌশলী মো. জিয়াউল হক বলেন, চন্দনাইশের বরুমতি সেতুর ছয়লেন, দোহাজারী সাঙ্গু ও চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর তিন লেনের ৮০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, মাতামুহুরী সেতুর ৮টি পিলারের মধ্যে ১টি পিলার, সাঙ্গু সেতুতে ৭টি পিলারের মধ্যে ২টি পিলারের কাজ বাকি আছে।
এরমধ্যে সাঙ্গু সেতুতে ১টি পিলার গেল ৪ জানুয়ারি ঢালাই দেয়া হয়েছে। বাকি পিলারটির কাজও ১০ দিনের মধ্যে শেষ করা হবে। বরুমতি সেতুর একসাথে ছয়লেনের কাজও শেষের পথে। পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতুতে পিলার নির্মাণের কাজ শেষে এখন গার্ডার ও স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। তিনি বলেন, এ সেতুরও প্রায় ৭০ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী মার্চের মধ্যেই বরুমতি সেতুর ছয়লেন এবং চকরিয়ার মাতামুহুরী, সাঙ্গু ও ইন্দ্রপুল সেতুর তিনলেনের কাজ শেষ করা হবে।
সরেজমিনে চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, সেতু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী এবং শ্রমিকরা পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মাতামুহুরী সেতুর ৮টি পিলারের মধ্যে সাতটি ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে। একটি পিলার বাকী আছে। বর্তমানে মাতামুহুরী সেতুর তিন লেনের ৮০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মোল্লা মহিউদ্দিন মিলন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দোহাজারী সাঙ্গু সেতুর ১১৫ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। চলছে বাকি ২টি পিলার নির্মাণের কাজ। বরুমতি সেতুর ৩টি পিলারের উপর গার্ডার বসানোর প্রস্তুতি চলছে। এ সেতুর উভয় পাশে চলছে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কাজও।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের মতে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ছয়লেনের চারটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের দক্ষিণাংশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও বান্দরবানে যাতায়াত সহজ হবে এবং দূরত্বও অনেক কমে আসবে। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
জানতে চাইলে ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে চকরিয়ার মাতামুহুরী, পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতুর তিনলেন এবং চন্দনাইশের বরুমতি (মাজার পয়েন্ট) সেতুর ছয়লেন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, পাইলিং, জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে সাঙ্গুতে একটু সময়ক্ষেপণ হয়েছে। এখন আর কোনো জটিলতা নেই। তিনি বলেন, চারটি সেতুর তিনলেন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরপর সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও ইন্দ্রপুলে বিদ্যমান পুরনো সেতুগুলো ভেঙে বাকি তিনলেনের কাজ শুরু করা হবে। সবমিলিয়ে ডিপিপির মেয়াদ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় ২০২২ সালের মে মাসের মধ্যেই এ চারটি সেতুর সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী।