সাক্ষাৎকার: প্রশাসক খোরশেদ আলম
‘নগরবাসীর দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি, তাদের সমস্যা
সমাধানের চেষ্টা করছি। ’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদে ১৮০ দিনের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নগরজুড়ে সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে খোরশেদ আলম সুজনের। ক্যারাভান কর্মসূচিসহ নানা কর্মকা-ে নগরবাসীর খুব কাছাকাছি থাকছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। ছুটছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। এমনকি রাজস্ব আদায়ে নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন। প্রশাসক পদে ৮৯ দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে খোরশেদ আলম সুজন কথা বলেছেন সুপ্রভাতের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতা উপস্থাপন করছেন সুপ্রভাতের প্রধান প্রতিবেদক ভূঁইয়া নজরুল।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ : প্রশাসক পদে ৬ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতিমধ্যে ৮৯ দিন অতিবাহিত করলেন। পরিকল্পনার কতটা কাজ করতে পেরেছেন?
খোরশেদ আলম সুজন : কতটা করতে পেরেছি তা নগরবাসী ভালো বলতে পারবেন। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি বসে নেই। নগরবাসীর দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি। তাদের কথা শুনছি এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। আর সিটি করপোরেশনের মতো একটি আগোছালো বা বিশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠানকে শৃঙ্খলায় আনা অবশ্যই কঠিন কাজ।
সুপ্রভাত : আমরা দেখছি ক্যারাভান কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছেন। এটা কেন?
সুজন : নগরবাসীর কথা শুনতে আমি বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছি। এলাকাবাসীর সমস্যা শুনে তা সমাধানের জন্য স্পট থেকেই করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিচ্ছি। এতে মানুষজনও খুশি হচ্ছেন। তারা এতোদিন তাদের কথা কাউকে শুনানোর মানুষ পাচ্ছিল না। আমি তা শুনতে এবং দেখতে তাদের কাছে ছুটে যাচ্ছি। একইসাথে নগরবাসীকে বলছি নগরী পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সকলের। আমরা সবাই মিলে নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখবো। আমি নগরবাসীর মধ্যে বিবেক ও শুভ বুদ্ধির জাগ্রত করতে মাঠে নেমেছি।
সুপ্রভাত : করপোরেশনের প্রধানের কাছে বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা আসতো। কিন্তু এখন আমরা দেখছি আপনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে তাদের দপ্তরে যাচ্ছেন-
সুজন : কে বড়, কে ছোট- সেই ধারায় আমি বিশ্বাসী নই। যেহেতু আমি এখন করপোরেশনের প্রধান তাই তাদের কথা শুনতে ছুটে যাচ্ছি। তাদের কথা শুনার পাশাপাশি নগর উন্নয়নে তাদেরকেও ভূমিকা রাখার জন্য বলছি। যেমন- সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেখা করে আহবান জানিয়েছি তাদের আওতাধীন এলাকার সামনের রাস্তাগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করতে। একইভাবে নৌবাহিনীকে বলেছি সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ফ্লোটিলা পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার পাশে ম্যুরাল স্থাপন এবং বিমানবাহিনীকে বলেছি বোট ক্লাবের পাশে তাদের দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের টেরাকোটা স্থাপন করতে। এতে বিমানবন্দর থেকে যে কেউ নগরে প্রবেশ করার সময় একটি সুন্দর ভিউ দেখতে পাবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যদি তাদের দপ্তরের সামনের এলাকাটি পরিচ্ছন্ন রাখে এতে নগরের সৌন্দর্র্যও বাড়ে। এভাবে আমি সকলের সহযোগিতা চাইছি।
সুপ্রভাত : রাজস্ব করের ক্ষেত্রে আপনি বন্দর-কাস্টমসের কথা বার বার বলে আসছেন। এতে কি করপোরেশনের রাজস্ব ঘাটতি পূরণ হবে?
সুজন : সাধারণ মানুষ রাজস্ব কর আদায় করে। কিন্তু এই নগরীর উন্নয়নের জন্য সরকারি বরাদ্দের জন্য চেয়ে থাকতে হয়। চট্টগ্রাম নগরে অবস্থিত বন্দর-কাস্টমস সরকারকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দেয়। এখন এই নগরের উন্নয়নের জন্য তারা তাদের রাজস্বের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জও যদি সিটি করপোরেশনকে দেয় তাহলে এ সংস্থার কোনো আর্থিক সংকট থাকবে না। আমি সেটাই বাস্তবায়ন করতে চাইছি।
ঘুমধুম রেললাইন, মাতারবাড়ি বন্দর, টানেলসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সঙ্গে পূর্বমুখী আন্তঃসম্পর্ক আগামীতে আরো বাড়বে। অপরদিকে বে টার্মিনাল ও মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের কারণে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে চট্টগ্রামের নেটওয়ার্ক বাড়বে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম হবে বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। তাই এ নগরকে সেভাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনার পাশাপাশি আর্থিক সক্ষমতাও অর্জন করতে হবে। তবে নগরকে এভাবে গড়ে তুলতে সিটি করপোরেশনে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীর স্বল্পতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
সুপ্রভাত : দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট সংস্কার, বিশেষ করে পোর্ট কানেকটিং রোডের একপাশ চালুর জন্য চেষ্টা করে আসছেন। এই রোডের অগ্রগতি কতটা?
সুজন : আমি দায়িত্ব নেয়ার পর নগরীর ভাঙা রাস্তাঘাট সংস্কারে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিয়েছিলাম এবং খুব কম সময়ের মধ্যে তা করা হয়েছে। সংস্কারের পর বৃষ্টিতে পিছিয়ে যেতে হয়, এতে বানরের পিচ্ছিল বঁাঁশ বেয়ে উঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সুপ্রভাত : আপনি প্রথমেই বলেছিলেন করপোরেশন আগোছালো প্রতিষ্ঠান। এখন এটাকে গোছাতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
সুজন : আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নির্ধারিত সময়ে অফিসে প্রবেশ ও বের হওয়া নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি এবং তা করা হয়ে গেছে। অর্থাৎ সকাল ৯টা ১৫ মিনিট পর আর কেউ অফিসে প্রবেশ করতে পারবে না এবং বিকাল ৫টার পর কাউকে অফিসে কাজ করতে হবে না। ধীরে ধীরে সব শৃঙ্খলার আওতায় আসবে।