নিজস্ব প্রতিবেদক »
রাঙামাটির বাসিন্দা গৌতম চাকমা (৪০)। তিনি একজন কাঠ ব্যবসায়ী। তার দুই সন্তানের মধ্যে একজন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে, আরেকজন বেসরকারি স্কুলে পড়ছে। স্ত্রী ঘরের কাজ সামলান। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্ত চলতি বছরের জুনে গৌতমের ইসকেমিক স্ট্রোক হয়। সাথে সাথে তাকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে কিছুতা সুস্থ হলেও তার এক পাশ অবশ হয়ে পড়েছে। কোনো কাজ আর করতে পারেন না। একমাত্র উর্পাজনক্ষম ব্যক্তির এমন অবস্থায় পরিবারের অবস্থা দিশেহারা।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের দাবি সময়মতো চিকিৎসা পেলে গৌতম হয়তো স্বাভাবিক হতে পারতেন। সাধারণত কমন বা ইসকেমিক স্ট্রোক হলে প্রথম ৪ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই চার ঘণ্টার মধ্যে থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা দেয়া হলে ওই রোগী আর অবশ হয়না। এই চিকিৎসা অনেক হাসপাতালে না মিললেও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এ সেবা পাওয়া যায়। এটি স্ট্রোক চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতি। গত বছর থেকে চমেক হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। ইতোমধ্যে ৯ রোগীকে এই সেবা দেওয়া হয়েছে।
এই চিকিৎসা পদ্ধতির ফলে স্ট্রোক রোগীর রক্তনালী ছুটে গেলেও ব্রেনের ড্যামেজ হয়না। ব্রেন ড্যামেজ না হলে ৪০ শতাংশ স্ট্রোক হওয়া রোগীর এক পাশ অবশ হওয়া প্রতিরোধ করা যায়। রোগী স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন। চলতি বছরে প্রায় ৯ জনকে থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। তারা বর্তমানে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন বলে জানান চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. মো. হাসানুজ্জামান।
তিনি আরও জানান, এই সেবা দিতে চিকিৎসকরা ইনজেকশনের মাধ্যমে একটা ওষুধ দেন যা রক্তনালীর ব্লক ছুটিয়ে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে। এটিই মূলত থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা পদ্ধতি। এখানে চমেক হাসপাতালে কোন অর্থ দিতে হয় না রোগীদের। তবে ওষুধটি এখনো সরকারিভাবে সরবরাহে আসেনি। যার কারণে বাইরে থেকে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে কিনতে হয়। চট্টগ্রামে শুধুমাত্র চমেক হাসপাতাল ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেলে এই সেবা।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের নিউরোলোজি বিভাগে ২০১৬ সালে ৬ হাজার ১৫ জন স্ট্রোক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ২০১৭ সালে ৭ হাজার ৮০ জন, ২০১৮ সালে ৭ হাজার ৭৯১ জন, ২০১৯ সালে ৭ হাজার ৭০০ জন, ২০২০ সালে ৫ হাজার ১৫০ জন এবং ২০২১ সালে ৪ হাজার ৯৫০ জন স্ট্রোক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ প্রসেঙ্গে চমেক হামপাতালের নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সীমান্ত ওয়াদ্দার বলেন, নিউরোলজি বিভাগে স্ট্রোক ছাড়া অনেক রোগী থাকে। আমাদের সরকারিভাবে কেবল ৩০ শয্যা রয়েছে। কিন্ত প্রতিদিন ১২০-১৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে। রয়েছে জায়গা সংকট। এছাড়া জুনিয়র মিড লেভেল চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১ জন। যার কারণে ২৪ ঘণ্টা রোগী ভর্তি হতে পারে না। সকাল ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত রোগী ভর্তি করা হয়। তবে আশা করছি শীঘ্রই এ সংকট কেটে যাবে। চিকিৎসক নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে। মিড লেভেল চিকিৎসকের সংকট কেটে গেলে চব্বিশ ঘণ্টা রোগী ভর্তি করা যাবে।’
উল্লেখ্য, আজ ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। চট্টগ্রামেও স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে চমেক কলেজ ও হাসপাতালে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে আজ (২৯ অক্টোবর) অডিটোরিয়ােেম সায়েন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে স্ট্রোক নিয়ে দুটো প্রেজেন্টশন করবেন নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুজ্জামান। এরপর র্যালি ও লিপলেট বিতরণ করা হবে।