চমেক হাসপাতালে এইচপিভি ভ্যাকসিন চালু ও ব্র্যাকি থেরাপি মেশিন সচল করা হোক

চট্টগ্রামে দিন দিন বাড়ছে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা। এই সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ কিশোর বয়সীদের টিকার আওতায় না আনা। এছাড়া অল্প বয়সে বাচ্চা প্রসব, বহুগামিতা, জন্মবিরতিকরণ পিল খাওয়াসহ নানা কারণও রয়েছে।
জরায়ু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রেডিয়েশন দিতে হলে ব্যবহৃত হয় ব্র্যাকি থেরাপি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্র্যাকি থেরাপি দেয়ার মেশিনটি অচল এক বছর ধরে। এছাড়া প্রতিরোধমূলক এইচপিভি (হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাস) ভ্যাকসিন সরকারিভাবে দেওয়া হলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে।
সুপ্রভাত বাংলাদেশে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে চমেক হাসপাতালে স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সারসহ মোট ২ হাজার ৯৩০ জন ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মধ্যে ৪১০ জন অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ১৪ শতাংশ জরায়ু মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ছিলেন। ২০২১ সালে সেই সংখ্যা ছিলো প্রায় সাড়ে তিনশ’। জরায়ু ক্যান্সার রোগীদের দু’ভাবে চিকিৎসা দিতে হয়। রেডিওথেরাপি এবং ব্র্যাকি থেরাপি। কোনো রোগীকে সার্জারি করাতে হয়, কোনো কোনো রোগীকে রেডিওথেরাপি এবং ব্র্যাকি থেরাপি দুটাই দিতে হয়। তবে জরায়ু ক্যান্সার রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশকে ব্র্যাকি থেরাপি দিতে হয়। কিš‘ চমেক হাসপাতালে সেই ব্র্যাকি থেরাপি মেশিনটি ১ বছর ধরে অচল। গত বছরের ৬ জুন থেকে এটি অচল হয়ে পড়ে আছে। এই মেশিনটি চট্টগ্রামে আর কোনো সরকারি- বসরকারি হাসপাতালে নেই। বাধ্য হয়ে জরায়ু ক্যান্সার রোগীদের ঢাকা গিয়ে ব্র্যাকি থেরাপি দিতে হয়।
ব্র্যাকি থেরাপি মেশিনটি ২০১৯ সালের মে মাসে স্থাপন করা হয়। সেবা চালু হওয়ার পর ২০১৯ সালে ৫৫ জন, ২০২০ সালে ৩৫ জন, ২০২১ সালে ১৬১ জনসহ মোট ২৫১ জনকে ব্র্যাকি থেরাপি দেওয়া হয়। যার ৭০ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সার রোগী ছিলেন। এই থেরাপি সরকারিভাবে ১৫০০ টাকা এবং বেসরকারিতে ১১-১৫ হাজার টাকা গুনতে হয়।
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য দায়ী একটি ভাইরাস। জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্তের পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি টিকা। জরায়ুর ক্যান্সার ঠেকাতে সরকার ২০১৬ সালে এইচপিভি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়। এটির মাধ্যমে ৯ থেকে ১৩ বছরের কিশোরীদের মাঝে এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অনেক নারী জানেই না এই রোগ সম্পর্কে। অথচ একটু সচেতন হলে নীরবঘাতক রোগটি নির্মূল করা সম্ভব। এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের স্ক্রিনিং করার বিষয়ে কোনো প্রচারণা নেই। আবার আক্রান্তদের চিকিৎসায় পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্র্যাকি থেরাপি দেয়ার মেশিনটি মেরামত করা জরুরি। জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে নতুন শক্তি এইচপিভি ভ্যাকসিন দেয়ার প্রকল্পটি আবার চালু করা হোক।