নিজস্ব প্রতিবেদক »
ঘড়ির কাটায় তখন ১০ টা বেজে ৩০ মিনিট। একটা বড় লাঠির সাহায্য নিয়ে রোগী নিয়ে আসা গাড়ি সরিয়ে নিচ্ছিলেন আরিফ। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে আনসার সদস্য হিসেবে নিয়োজিত। এ প্রতিবেদককে দেখে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বেশ বিরক্ত সুরে বললেন ‘পইত্ত দিন ইয়ান অত গাড়ি রাহে, ইয়ানঅত গাড়ি রাহন মানা। স্যার দেইলে বকা দেয়, হিতারা তারপরও রাহে। লাডি হিবা দিয়েরে হিতারার গাড়িত বাইজ্জাতে বাইজ্জাতে ভাঙ্গি গিয়োগোই, তারপরও হিতিরা ন সরে’।
সরেজমিনে দেখা গেলো, ওয়ান স্টপ থেকে ব্লাড ব্যাংক বরাবর গাছগুলোতে রয়েছে ‘গাড়ি রাখা নিষেধ’ নামে অসংখ্য প্ল্যাকার্ড। রোগীদের সুবিধার্থে প্ল্যাকার্ড টাঙিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওয়ান স্টপের পাশে খানিকটা ব্যারিকেডও দেওয়া আছে। তারপরও ব্যারিকেড টপকে ঢুকছে মোটর সাইকেল। আবার মেইন গেট দিয়ে আসছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা। মোটরসাইকেল যাত্রী নামিয়ে তাৎক্ষণিক চলে গেলেও রিকশা এবং সিএনজি চালকরা ঠিক তার উল্টো। তারা যাত্রীদের নামিয়ে আরেকটি ভাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ফলে পুরো এলাকাজুড়ে যানজট লেগে যায়। এ সময় রোগী নিয়ে আসা অভিভাবকদের পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। চমেক হাসপাতালে গাড়ি পার্কিং নিয়ে গতকাল রোববার এমন চিত্রই দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক পরিচারিকা বলেন, প্রত্যেক দিন সারি সারি গাড়ি থাকে। যতক্ষণ আনসাররা সরাবে না ততক্ষণ যায় না। আবার অনেক গাড়ি চালক আনসার সদস্যদের সাথে খারাপ আচরণ করে। শুধু তাই নয়, মাঝে মাঝে হাত তুলতেও দ্বিধাবোধ করে না। এ অবস্থায় জ্যাম তৈরি হয়। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স দরজা পর্যন্ত না আসতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পুলিশ ইচ্ছে হলে অভিযান চালায়। তবে প্রায় সময় চালায় না। ’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘হাসপাতালের প্রবেশ করার বাম পাশে মাঠ আছে। সেখানে গাড়ি রাখা যায়। ওই জায়গাটা ছাড়া আমাদের কোনো খালি জায়গা নেই। ব্যাপারটি নিয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কথা বলেছি। রোগীদের অসুবিধার কথা জানিয়ে অনুরোধ করেছি অভিযান পরিচালনা করার জন্য। এখানে যারা এলোপাতাড়ি করে গাড়ি রাখে তাদের যদি জরিমানার আওতায় আনা যেত সমস্যাটা অনেকাংশেই কমত। ’
নতুন পার্কিংয়ের পরিকল্পনা আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘নতুন হাসপাতাল করার জন্য জায়গা পাচ্ছি না। জায়গা সংকটে পড়তে হয়েছে। সেখানে পার্কিংয়ের জন্য আলাদা স্পেস করাতো অসম্ভব। সেরকম পরিকল্পনা এখনো নেই। এখানে সব সময় দায়িত্ব পালন করে আমাদের আনসার সদস্যরা। তাদের সাথে প্রায়ই আমি নিজেও কাজে লেগে যায়। আসলে এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। পুলিশ আন্তরিকভাবে বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা করলে রোগীদের ভোগান্তি কমে যাবে।’
গাড়ি পার্কিং নিয়ে অনিয়মের ব্যাপারে ডিসি (ট্রাফিক-উত্তর) জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরে গাড়ি রাখার বিষয়টি তো আমি দেখিনা। তবে আমার এরিয়ায় হাসপাতালের পাশে মেইন রোডে যারা গাড়ি রাখে সেসব চালকদের জরিমানা করেছি। রোগীদের সুবিধার্থে আমরা প্রত্যেক দিন গাড়ি রাখার বিষয়টি দেখভাল করি।
ডিসি (ট্রাফিক-দক্ষিণ) এম এন নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের একটি নির্দিষ্ট করে জায়গা দেখিয়ে দিলে আমরা গাড়ি চালকদের বলতে পারি। অনেক গাড়ি গ্রাম থেকে আসে , রোগীর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এখানে না রাখলে মেইন রোডে রাখতে হয়। তারপর সেখানে লেগে যায় জ্যাম। আমরা যতদূর সম্ভব চেষ্টা করছি, জরিমানা করছি প্রতিনিয়ত যাতে পার্কিং নিয়ে সমস্য তৈরি না হয়। একটা নির্দিষ্ট জায়গা না হলে পার্কিং সমস্যার সমাধান হবে না। শুধু চমেক হাসপাতাল নয়, বেসরকারি হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, অফিস আদালত, বড় বড় মার্কেটগুলোতেও নেই নিজস্ব পার্কিং। এই জন্যই তো যানজট কমছেনা। এটি চমেকের সমস্যা নয়, পুরো চট্টগ্রামের সমস্যা।
তিনি আরও বলেন, ‘রোগীদের সুবিধার্থে আমরা আরও তৎপরতা চালাবো। যতদূর সম্ভব করা যায়’।