চবি চিকিৎসাকেন্দ্র কবে চিকিৎসা উপযোগী হবে

২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৭,৫৫০ শিক্ষার্থী এবং ৯০৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর বাইরে আছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করেন তাদের পরিবারের সদস্যসহ মোট সংখ্যা আরও কয়েক হাজার বেশি হবে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র আছে কিন্তু এটি নিয়ে কখনোই কেউ সন্তোষজনক কিছু বলেননি। কারণ চিকিৎসাকেন্দ্রটি কখনোই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠেনি।
সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে অটো অ্যানালাইজার নামে একটি যন্ত্র কিনেছিল। বলা হচ্ছে- রক্ত, ডায়াবেটিস, কিডনি পরীক্ষা থেকে শুরু করে একসঙ্গে প্রায় ২০০ পরীক্ষা করার সক্ষমতা রয়েছে এটির। স্পেনের জীবপ্রযুক্তির কোম্পানি বায়োসিস্টেমস থেকে তবে কেনার পর এক দিনের জন্যও যন্ত্রটি চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকেরা জানান, লোকবল না থাকায় অত্যাধুনিক এ যন্ত্রটি আনার পর থেকে এভাবেই পড়ে আছে।
অবশ্য শুধু অটো অ্যানালাইজার নয়। ১২ লাখ টাকায় জাপান থেকে কেনা সেল কাউন্টার, ৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় কেনা ‘অক্সিজেন বেডের’ বিভিন্ন সরঞ্জাম, ১ লাখ ২০ টাকার টাকায় কেনা ২০টি বিছানা, ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কেনা ইসিজি মেশিন, ২ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে কেনা অক্সিজেন সিলিন্ডারও কাজে লাগাতে পারেনি প্রশাসন। এগুলোও রাখা রয়েছে চিকিৎসাকেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষে। সব কটিই কেনা হয়েছিল ২০২০ সালে সেপ্টেম্বরে। সব মিলিয়ে যাঁর বাজারমূল্য ৪০ লাখ ৬ হাজার টাকা। চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের অভিযোগ কোনো ধরনের লোকবল নিয়োগ না দিয়েই এসব যন্ত্র কেনা হয়েছিল। পরে আর লোকবল নিয়োগ না দেওয়ায় এসব যন্ত্র চালু করা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে চারটি। যার মধ্যে চালু থাকে দুটি। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, জরুরি সমস্যায় অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। কখনো কখনো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স আসার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অ্যাম্বুলেন্স-সংকটের কারণ হিসেবেও লোকবল-সংকটকে দায়ী করছে কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবছরই চিকিৎসাকেন্দ্রের ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী কেনার জন্য বরাদ্দ দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে ওই বরাদ্দের পুরোটা ব্যয় করতে পারে না কর্তৃপক্ষ। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত চিকিৎসাকেন্দ্রের ওষুধ কেনা বাবদ মোট বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ এই কাজে ব্যয় করেছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। বাকি ৪১ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রশাসন ওষুধ কিনেছিল ১৬৯ প্রকারের। এরপর থেকেই ধাপে ধাপে এর পরিমাণ কমছে।
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিষ্ঠানে আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র নেই। চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করায় জরুরি চিকিৎসার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় চিকিৎসাকেন্দ্রটিকে স্বাবলম্বী না করে উপায় নেই।