চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করার তাগিদ

SONY DSC

নগরীর উৎপাদিত বর্জ্যরে তিনভাগের এক ভাগই সংগ্রহ করতে পারে না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সংগ্রহ করতে না পারা এসব বর্জ্যরে বেশির ভাগই খাল-নালায় গিয়ে পড়ে। আবার অনেকে আবর্জনাই ফেলেন খাল-নালায়। এতে পরিষ্কারের অল্প দিন পরে খাল-নালা ভরাট হয়ে যায়। এভাবে ময়লা ফেলা রোধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। খালে বর্জ্য ফেলা ঠেকাতে জরিমানা ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে খাল ও নালা নালা বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা যাবে না বা রোধ করা যাবে না বলে মনে করেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীরা। তারা বলছেন এজন্য সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,অনেক এলাকায় প্রয়োজনীয় ডাস্টবিন নেই আবার ডাস্টবিন থাকলেও সেখান থেকে নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ করা হয় না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার করা বর্জ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদিত বর্জ্যরে পরিমাণ ৩০০০ টন। মোট বর্জ্যরে মধ্যে সিটি কর্পোরেশন সংগ্রহ করতে পারে দুই হাজার টন। বাকি বর্জ্য নগরের নালা- নর্দমা, খাল ও উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে।
নগরের খাল ও নালা-নর্দমার যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার কারণে তা অল্প দিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আবার এসব বর্জ্যরে একটি অংশ এসে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এর মধ্যে ভেসে আসছে পলিথিন। এতে কর্ণফুলী নদীও ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তারা বলছেন তারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী নগরের বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনসচেতনতার অভাব রয়েছে। কিছু লোক খাল ও নালা-নর্দমায় ময়লা ফেলেন। এসব বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়ে মেয়র নির্দেশনা দিয়েছেন। মানুষকেও সচেতন করার চেষ্টা চলছে।
সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরের ১৯টি খালের ৩০ টি এলাকায় ডাস্টবিন থাকা বা না থাকার উপর একটি জরিপ করা হয়। সিডিএর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এর মধ্যে ১৭ টি এলাকায় ডাস্টবিন পাওয়া যায়নি। এতে এলাকার মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চাক্তাই খালের সৈয়দ শাহ রোড, রাজাখালি খালের তিন নম্বর ব্রিজ, চাক্তাই ডাইভারশন খালের তক্তার পুল, শীতল ঝর্ণা খালের আশেকান ডিগ্রি কলেজ এলাকা, মহেশখালের সুন্দরী পাড়া, বড় পুল কাঁচাবাজার, ফইল্ল্যাতলী কাঁচাবাজার ও মন্ত্রী বাড়ি রোড, টেকপাড়া খালের বংশাল রোড ও এস আলম বিল্ডিং এলাকা, সদরঘাট খালের পি কে সেন সাততলা, গয়না ছড়া খালের তালতলা ও পুলিশ লাইনস কর্পোরেশন ব্রিজ, খন্দকিয়া খালের বামনহাট ব্রিজ, আকবর শাহের রসুন শাহ মাজার, আজব বাহার খালের ঝর্ণাপাড়া ব্রিজ এবং এবং নয়াহাট খালের বন্দর মুখ এলাকা।
সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক। সিটি কর্পোরেশন অনেক এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ করে না। অনেক জায়গায় ডাস্টবিন পর্যন্ত নেই। এতে লোকজন খাল-নালায় ময়লা ফেলেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে জমা হওয়া বর্জ্য পুরোপুরি বর্জ্যাগারে নিয়ে যাওয়া হয় না। এর বেশিরভাগ চলে যায় খাল আর নালায়। এই অবস্থা রেখে শুধু সাজা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। আগে বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে।