ডেস্ক রিপোর্ট »
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের গেজেট ৯ জানুয়ারি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে শপথ নিয়েছেন নবনির্বাচিত সদস্যরা। ১১ জানুয়ারি হয়ে গেলো মন্ত্রিসভার শপথও।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০ জন নারী নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলটির ১৬ নারী প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চার জন নারী জয়ী হয়েছে। এবার সংসদ নির্বাচনে নারী প্রার্থী ছিলেন ৯৬ জন।
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেন। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে একমাত্র এই নারী প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন।
সংরক্ষিত আসন
সংবিধান অনুযায়ী, নারীদের জন্য জাতীয় সংসদে আরও ৫০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে এসব সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এ হিসাবে চলতি বছরের ৯ এপ্রিলের মধ্যে ইসিকে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের ভোট করতে হবে। দ্বাদশ সংসদের নবনির্বাচিত সদস্যদের ভোটে তারা নির্বাচিত হবেন। এরইমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী তফসিল হতে পারে আগামী সপ্তাহেই। অর্থাৎ সংসদের প্রথম অধিবেশনেই ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধান অনুসারে বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৫০। এই সংখ্যাকে ৩০০ (দেশের নির্বাচনী এলাকা) দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যাবে তাকে কোনো দল বা জোটের যে সংখ্যক সদস্য শপথ নিয়েছেন তা দিয়ে গুণ করলে যে ফল পাওয়া যাবে, সেই সংখ্যক নারী সদস্য হবে ওই দল বা জোটের। গুণফল ভগ্নাংশ হলে সেক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৫ বা তার থেকে বেশি সংখ্যকের জন্য একটি আসন পাওয়া যাবে। অবশ্য এক্ষেত্রে বণ্টিত আসন সংখ্যা মোট আসনের থেকে বেড়ে গেলে ভগ্নাংশের হিসাবে হেরফের হতে পারে। আইনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে লটারির বিধানও রয়েছে।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৩৮টি (নৌকা প্রতীকে জয়ী জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুইজনসহ), জাতীয় পার্টি ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১০টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারেন।
সরাসরি নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, কল্যাণ পার্টি ১ টি করে আসন পাওয়ায় তারা সংরক্ষিত নারী আসন পাচ্ছে না। তবে স্বতন্ত্ররা কোথাও যোগ দিলে হিসাব পাল্টাতে পারে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন আলোচনা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচন ঘিরে। একাদশ সংসদে চট্টগ্রাম থেকে দু’জন নারী সংরক্ষিত আসনে এমপি ছিলেন। এবার এই সংখ্যা বাড়তে পারে।
এমপি হতে চান যারা
চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত আসনে এমপি হয়ে সংসদে যাওয়ার তালিকায় আছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা।
একাদশ সংসদে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন প্রয়াত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সার ও আওয়ামী লীগ নেত্রী নিলুফার কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়শা খান।
ওয়াসিকা আয়শা খান বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক। দশম সংসদেও তিনি সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। একাদশ সংসদে তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগেও একাধিক সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে ওয়াসিকা আয়শা খানের নাম আছে সবার আগে।
গত বছর চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জাসদ নেতা মইন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান বাদল। তিনি এবার সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী।
আগ্রহীদের মধ্যে আছেন উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাসন্তী প্রভা পালিত ও উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সদস্য, বিজিএমইএর সদস্য এবং ফারমিন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান।
প্রয়াত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল্লাহ আল হারুনের মেয়ে লুবনা হারুন বর্তমানে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনিও এই পদে আগ্রহী। তৃণমূল থেকে উঠে আসা লুবনা এখন দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও জয়ী হতে পারেননি। স্বামীর পরাজয়ের পর এখন সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হতে চান নদভীর স্ত্রী ও প্রয়াত জামায়াত নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী।
এছাড়াও সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহধর্মিনী হাসিনা মহিউদ্দিন, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আফসারুল আমীনের স্ত্রী ডা. কামরুন্নেছা এবং আরেক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দীন আহমদের মেয়ে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাজী শারমিন সুমি।