নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘আজকের সমাবেশ প্রমাণ করেছে, ভয় দেখিয়ে চট্টগ্রামবাসীকে দমিয়ে রাখা যায়নি। চট্টগ্রাম থেকে সূচনা হয়েছে। এবার সারা বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠবে। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে গদি থেকে নামিয়ে আনবে। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য-শেখ হাসিনাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনাকে জনগণ আর একদিনও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই আন্দোলন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাব।’
বুধবার বিকেলে নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে ৫ জন নেতাকে হত্যা ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই সরকার পুলিশ, র্যাব, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে। দেশে আজ কারও নিরাপত্তা নেই। দিনে-দুপুরে মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি হচ্ছে। গুম, খুন, বিনা বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ পরিষ্কার করে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে-এদেশে কোনো মানবাধিকার নেই। র্যাব একটা প্রতিষ্ঠান, সেটাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, শুধু র্যাবকে নয়, শেখ হাসিনার সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। আগের রাতে ভোট নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেছে। এই সরকার বাংলাদেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে।
ফখরুল বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর হয়ে গেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য। সেই গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ নির্বাসনে পাঠিয়েছে। আবার যুদ্ধ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। এ লড়াই বড় কঠিন লড়াই, বড় শক্ত লড়াই। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। আমরা যদি প্রতিরোধ করতে না পারি, তাহলে এদেশের মানুষ তাদের অধিকার, গণতন্ত্র ফিরে পাবে না। এটা বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবকিছু লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে। শেখ হাসিনা ১০ টাকায় চাল দেবে বলেছিল, এখন চালের দাম ৭০ টাকা। চাল, ডাল, তেল, নুন, মাছ, মাংস সবকিছুর দাম তিন থেকে পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের দাম কয়েকবার বাড়িয়েছে। এখন শুনতে পাচ্ছি, বিদ্যুতের দাম নাকি আবার বাড়াবে। বারবার দাম বাড়াতে হচ্ছে কেন ? কারণ তারা টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। এখন আবার শেখ হাসিনা বলছেন-দুর্ভিক্ষ আসছে, আপনারা কম খান। আমরা বলি-দেশ চালাতে না পারলে ছেড়ে দিয়ে এখনই চলে যান।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোটের আয়োজন করবে। জনগণ ভোট দিয়ে একটি সংসদ নির্বাচিত করবে, যেটা হবে জনগণের সংসদ। জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করুন। ডিসি-এসপিরা নির্বাচন কমিশনারকে মানে না। এরা কিভাবে নির্বাচন করবে ? নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া আজ বন্দী। ওনাকে রাজনৈতিক সাজা দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা করে তাকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। তারেক রহমানকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনব। আমার দেশ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনব, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান দেখেছেন। আমরা ক্ষমতায় গেলে চাল-ডালসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাব। বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনব। বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করব। যত সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো সমাধান করব।
ফখরুল বলেন, আমাদের একজন নেতাকর্মীও মামলা ছাড়া নেই। সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য আমাদের পাঁচজন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এরা সবাই সাধারণ মানুষ। কেউ অর্থবিত্তের মালিক নয়। এরা পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে বলেছে- গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য বুক পেতে দিয়েছি, গুলি কর। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। এই দেশকে আমরা মুক্ত করবোই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে পথে পথে বাধা দিয়েছে। হামলা করেছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে। কিন্তু সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আজকের সমাবেশকে জনতা মহাসমাবেশে পরিণত করেছে। সরকারের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। এই সরকার আমাদের ৩৭ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। গুম, খুন, বিনা বিচারে হত্যা করেছে। তারপরও একজন কর্মীও বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়নি। সরকার বিএনপিকে দমাতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমরা দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ করছি। এসব দাবি শুধু বিএনপির দাবি নয়, ১৮ কোটি মানুষের দাবি। পুলিশ ভাইদের বলব-আপনারা আমাদের বাধা দেন কেন ? আপনারা তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আপনারা ভোটচোরদের স্বার্থরক্ষা করেন কেন ? সরকারকে বলতে চায়-বারবার ভোটচুরি করে ক্ষমতায় আসা যাবে না।
এই সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনার পতনের সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এদেশে যতবার গণতন্ত্র সংকটের মুখে পড়েছে জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরাই সেই সংকট থেকে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়ে গিয়েছিলেন। নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পুলিশ বলছে-লাঠি নিয়ে মিটিংয়ে আসা যাবে না। পুলিশকে এই অধিকার কে দিয়েছে? সংবিধানে কোথায় লেখা আছে সভা-সমাবেশ করা যাবে না? পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের টাকায় পুলিশের বেতন হয়। পুলিশকে মনে রাখতে হবে, তারা শেখ হাসিনার কর্মচারী নয়। পুলিশকে বলব, আপনি বন্দুক নামিয়ে ফেলুন, আমাদের ছেলেরা লাঠি নামিয়ে ফেলবে।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য মানুষ আজ রাস্তায় নেমেছে। এই সরকারকে আর প্রহসনের নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। অবিলম্বে সংসদ বাতিল করতে হবে। এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। কালকেই নির্বাচন কমিশনারগুলোকে বিদায় করেন। লুটপাট-অর্থপাচার অনেক হয়েছে, এবার বিদায় নেন। জনগণের একটাই দাবি-শেখ হাসিনার পতন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটাই স্লোগান-হঠাও মাফিয়া, বাঁচাও দেশ, টেক ব্যাক বাংলাদেশ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমদু চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার বিদায়ের বার্তা এসে গেছে। চট্টগ্রামবাসী পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, শেখ হাসিনা এখনই পদত্যাগ করুন, এখনই করুন, এখনই করুন। আগামীকাল নয়, পরশু নয়, আজই পদত্যাগ করুন, চট্টগ্রামবাসী রায় দিয়েছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের আর একদিনও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে। জীবন দেব, গণতন্ত্র আনব, শেখ হাসিনার পতন হবে, নিরপেক্ষ সরকার আসবে, সেই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, জনগণের ভোটে সরকার গঠন হবে। এইবার যখন নেমেছি, আর বাড়ি ফিরে যাব না। যেভাবেই হোক, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক-সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে আনব।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সরকার খালি উন্নয়নের কথা বলে। এত উন্নয়ন উন্নয়ন করেন, এই উন্নয়ন তো এখন বাংলাদেশের মানুষের গলার ফাঁস হয়ে গেছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশে খালেদা জিয়ার সরকার চলবে। যারা খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হলো।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকরাই এখন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছে। আজকের সমাবেশ প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নাই।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, ভিপি জয়নাল আবেদীন, এস এম ফজলুল হক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুউদ্দীন খোকন।
বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মৎসজীবী সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশীদ, সহ গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, কৃষকদলের সভাপতি জাফিরুল ইসলাম তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাচিং প্রু জেরী, আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাবুদ্দীন সাবু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দিপেন তালুকদার, ফেনী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দীন আলাল, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার, কেন্দ্রীয় জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, মহিলাদলের যুগ্ম সম্পাদক শাহানা আকতার শানু, ওলাদলের মাওলানা নেসারুল হক, রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন, বিএনপি নেতা এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, এনামুল হক এনাম, জসিম উদ্দিন শিকদার, ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, নুরুল আমিন, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, কাজী সালাউদ্দিন প্রমুখ।