চট্টগ্রাম ক্লাব গেস্ট হাউজ থেকে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদের মরদেহ উদ্ধার

RUN RASHID/FACEBOOK ছবির ক্যাপশান,সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউজ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশীদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় ক্লাবের গেস্ট হাউজের একটি কক্ষে তার মরদেহ পড়ে থাকার খবর পাওয়া যায়। এরপর সেখানে যায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুন রোববার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছেন। বিকেল ৪টায় তিনি চট্টগ্রাম ক্লাবের একটি ভিআইপি কক্ষে ওঠেন। ঘণ্টাখানেক পর তিনি ক্লাব থেকে বেরিয়ে রাত পৌনে ১১টায় ফেরেন। কক্ষে ঢোকার আগে তিনি ডেস্কে গিয়ে ব্রেকফাস্টের সময় জেনে নেন।  রাতে তিনি একটি বিয়ের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ক্লাবের গেস্ট হাউজের ৩০৮ নম্বর কক্ষে রাত্রীযাপন করেন। সকালে তার একটা মিটিং ছিল। তার মোবাইলে বার বার কল দেওয়া হলেও তিনি রেসপন্স করছিলেন না। এরপর দরজায় নক করে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে বারান্দার গ্লাসের দরজা ভেঙে বিছানায় তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

dhakapostচট্টগ্রাম ক্লাব গেস্ট হাউজ

তিনি আরও বলেন, আপাতত তার মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বর্তমানে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তা এবং ক্রাইম সিন ইউনিটসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন। পরিবারের অনুমতি সাপেক্ষে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। এরপর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

এদিকে, বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে হারুন-অর-রশীদের মরদেহ সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) চট্টগ্রামে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তার মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে কি না সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম ক্লাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদ ক্লাবের গেস্টহাউসের একটি কক্ষে একা ছিলেন। সোমবার অনেক বেলা পর্যন্ত তিনি কক্ষ থেকে বের না হওয়ায় ক্লাবের লোকজন বিচলিত হন। দুপুর ১২টার পর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে কক্ষের তালা খুলে অচেতন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের ধারণা কক্ষের মধ্যে রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের একটি দল চট্টগ্রাম ক্লাবে এসে সাবেক সেনাপ্রধানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। পরে তাঁরা সাবেক সেনাপ্রধানকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

এম হারুন-অর-রশীদের বয়স প্রায় ৭৫ বছর। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাসিন্দা। তিনি বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৮৯ সালে মেজর জেনারেল এবং ১৯৯২ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক, ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট জোনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০০২ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য তাকে ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনি ২০০৬ সালে ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন এবং ২০১২ সালে ডেসটিনি মামলায় অভিযুক্ত হন।