ঈদের টানা বন্ধের পর কাস্টমসে আবার অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া কর্মকর্তাদের কলমবিরতির কারণে আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাসও। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস নিতে না পারায় আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে পোর্ট ডেমারেজ।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গত ১৫ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করেন এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে প্রণীত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ বাতিলের আন্দোলনে ঐক্য সংস্কার পরিষদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ, ইতিমধ্যে জারিকৃত ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ সব বদলি আদেশ প্রত্যাহার, নিপীড়নমূলক নতুন কোনো বদলি আদেশ জারি বন্ধ করা এবং এনবিআর বিলুপ্ত না করে বরং বিভাগের মর্যাদায় শক্তিশালী করাসহ রাজস্ব অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর লক্ষ্যে রাজস্ব অধ্যাদেশ সংস্কার বিষয়ক কমিটি বাতিল করে আন্দোলনরত সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্ত করা।
পণ্য আমদানিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিল অব এন্ট্রি এবং রপ্তানিতে ৫ হাজার বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল হয়। কর্মকর্তাদের কলমবিরতির কারণে চার ভাগের একভাগ কাজও হচ্ছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে আমাদের এখানেও কলমবিরতি পালিত হচ্ছে। কলমবিরতির কারণে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে এটি ঠিক।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের কয়েকজন সেবাগ্রহীতা গণমাধ্যমকে বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা মাঝখানে ভোগান্তিতে পড়ছি। কাস্টমস কর্মকর্তাদের তো এখানে কোনো লোকসান নেই। তারা বহাল তবিয়তে থাকবেন, বেতনও চলছে। এখন তো নতুন করে আমাদের ওপর চারগুণ পোর্ট ডেমারেজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন যে আমরা যথাসময়ে পণ্য খালাস করতে পারছি না, এখানে আমাদের দায় কোথায়? আমরা কি লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবো? এভাবে কলম বিরতি পালন না করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের উচিত, তাদের ঊর্ধ্বতনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দাবি দাওয়ার বিষয় থাকলে সেটি সমাধান করা। ওনাদের কারণে আমরা জিম্মি হয়ে পড়ছি।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। এমন পরিস্থিতিতে কাস্টমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগে অচলাবস্থা কারো কাম্য নয়। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। একদিন বন্ধ থাকার অর্থ অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হওয়া। কাজেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে।