রাজিব শর্মা »
ভোগান্তি আর জনদুর্ভোগের আরেক নাম চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। দীর্ঘ লাইন ও ভিড়ে নাকাল অবস্থা সেবা প্রত্যাশীদের। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রয়েছে হয়রানিসহ নানা অভিযোগ। তবে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, লোকবল সংকটের কারণে তাদের সেবা দিতে বিলম্ব হচ্ছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তাজ বিল্লাহ বলেন, ‘পাসপোর্ট সেবায় ভোগান্তি কমাতে আমরা সাধ্যমতো সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে লোকবল সংকটের কারণে সম্ভব হচ্ছে না স্বাভাবিক সেবা দেয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার পতনের পর কাজের ধীরগতির সঙ্গে কমেছে লোকবল। আবার মালয়েশিয়ায় চালু হয়েছে নতুন কলিং ভিসা। এ কারণে আবেদন গ্রহণ ও ডেলিভারি দিতে হচ্ছে দৈনিক অন্তত ৫০০ গ্রাহককে। এতে হিমশিম অবস্থা কর্মকর্তাদের। সরকারের লোকবলের বিষয়টি ভাবতে হবে।
গতকাল সরেজমিনে নগরীর পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট আবেদন জমা দিতে আসা ব্যক্তিদের লাইনের দীর্ঘ সারি। সকাল থেকে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যায়ও দেখা যায় লাইনে দাড়িয়ে আছেন অনেকে। কিন্তু সরকারি নির্ধারিত সময়ের পর কেউ আর সেবা পাচ্ছেন না। আবার পরদিনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। যদিও পাসপোর্ট অফিস ঘুরে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সবাই যার যার মতো করে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু লোকবল কম হওয়াতেই তাদেরকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এতে সেবা প্রত্যাশীদেরকেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বাঁশখালী থেকে পাসপোর্ট করতে আসা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত দাঁিড়য়ে আছি। আবেদনপত্র কখন জমা দিতে পারবো জানিনা। দীর্ঘ লাইন দেখে মনে হচ্ছে, আজকে জমা দেওয়া আর সম্ভব হবে না।
পটিয়া থেকে আবেদনপত্র জমা দিতে আসা মো. আনসার উদ্দিন বলেন, পাসর্পোট অফিসে যথানিয়মে কাজ হচ্ছে। দালাল বা কারো মাধ্যমে আবেদন করানোর সুযোগ আছে তা চোখে পড়েনি। কিন্তু লোকবল কম থাকার কারণে পার্সপোর্টের কাজে সময় লাগছে। আমি সকালে দাঁড়িয়েছি, এখন বাজে বিকাল তিনটা। আজ হয়তো জমা দেওয়া হবে না।
পাসপোর্ট অফিস সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরাসরি পাসপোর্ট সেবায় কাজ করেন অফিস সহকারী বা ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদের স্টাফরা। এই পদে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১০ জন স্টাফ কর্মরত আছেন। আবেদন জমা গ্রহণের দুটি, ছবি তোলার ৮টি এবং পাসপোর্ট ডেলিভারির ৩টি কাউন্টার চালু আছে। কিন্তু সেবা গ্রহীতাদের তুলনায় এতো কম সংখ্যক জনবল দিয়ে সবাইকে যথাযথ সেবা দিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
পাসপোর্ট অফিস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দৈনিক সেবা প্রার্থীর সংখ্যা বা চাহিদা বিবেচনায় আবেদন জমা গ্রহণে অন্তত ৪টি, ছবি তোলায় অন্তত ২০টি এবং পাসপোর্ট ডেলিভারিতে অন্তত ৫টি কাউন্টার প্রয়োজন। আর কাউন্টার বাড়াতে হলে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বা অফিস সহকারী পদে আরো স্টাফ জরুরি ভিত্তিতে বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া সহকারী পরিচালক পদেও লোকবল সংকট রয়েছে। এসব পদেও বাড়াতে হবে।
পাসর্পোট অফিসে আবেদন গ্রহণকারীদের একজন বলেন, আন্দোলনের পর পাসর্পোট আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে যেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ জন আবেদন করতো এখন তা হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু সে হিসেবে আমাদের লোকবল তেমন বাড়েনি। সেই কারণে আমাদের সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
ছবি তোলার রুমে একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পাসপোর্টের আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে একবার রুমে ১০ জন করে ঢুকিয়ে ছবি তোলে বের হতে দিতাম। এখানে একজন ব্যক্তিকে তার সবকিছু দেখে ছবি তুলতে হচ্ছে। কিন্তু লোকবল কম। লোকবল বাড়ালে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে না।
উল্লেখ্য, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালের আগস্টে চট্টগ্রামে বিভাগীয় এই পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় কর্মকর্তা কর্মচারী মিলিয়ে মোট জনবল ছিল ৩১ জন। তবে এর এক যুগ পেরিয়ে গেলেও তেমন জনবল বাড়েনি। অথচ, দশ বছর আগে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০০ পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়তো। আর বর্তমানে দৈনিক আবেদনের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। দিন দিন এ সংখ্যা আরো বাড়ছে।