একজন করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেন গড়ে ৫ জন #
নগরীতে করোনার সংক্রমণ বাহকের সংখ্যা বাড়ছে #
সালাহ উদ্দিন সায়েম :
চট্টগ্রামে তিনটি ল্যাবে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তকরণ পরীক্ষা চালু করার পর নমুনার চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বিআইটিআইডি, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিক্যালের তিনটি ল্যাবে পাঁচটি পিসিআর মেশিনে গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে সাড়ে চারশত নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
গত ২৬ মার্চ থেকে বিআইটিআইডিতে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। সেখানে নমুনার চাপ বাড়তে থাকায় ২৫ এপ্রিল থেকে নগরীর খুলশী ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়। এরপর ৯ মে থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালেও করোনা পরীক্ষা চালু করা হয়।
এর মধ্যে গত ৫ মে থেকে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে কক্সবাজার সরকারি মেডিক্যাল কলেজে।
বিআইটিআইডিতে গত এপ্রিল পর্যন্ত নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর জেলারও নমুনা সংগ্রহ করা হতো। ১ মে থেকে এই ৩টি জেলার নমুনা বিআইটিআইডিতে আর পরীক্ষা করা হচ্ছে না। এছাড়া বান্দরবান জেলার নমুনাও এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে কক্সবাজার মেডিক্যালে।
চট্টগ্রামে একদিকে বেড়েছে নমুনা পরীক্ষার ল্যাব। অন্যদিকে ৪টি জেলা ও দুটি উপজেলার নমুনা পরীক্ষা বিআইটিআইডির কাঁধ থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এরপরও নমুনার চাপ কমেনি তিনটি ল্যাবে। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনটি ল্যাবে অস্বাভাবিক নমুনার চাপ বেড়েছে।
১৯ মে বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষা হয় ২৬২ টি। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে হয় ২০২টি। আর ভেটেরিনারিতে হয় ৭০টি। অর্থাৎ তিনটি ল্যাবে একদিনে ৫৩৪ টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তিনটি ল্যাবে ১৮ মে নমুনা পরীক্ষা হয় ৩৯৩টি, ১৭ মে ৪৬৪টি, ১৬ মে ৪১২টি, ১৫ মে ৪৬৪টি, ১৪ মে ৩৯৪টি ও ১৩ মে ৩৬৭টি।
কেন নমুনার চাপ বেড়েছে?
বিআইটিআইডি ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনার কনটাক্ট ট্র্যাসিং (সংক্রমণ-বাহক) সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে নমুনার সংখ্যাও বেড়েছে।
বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ সুপ্রভাতকে বলেন, একজন আক্রান্তকারীর সংস্পর্শে যাওয়া লোকের সংখ্যা কমপক্ষে ৫-৭ জন, আর সর্বোচ্চ ৫০-৬০ জন। আক্রান্তকারীর সংস্পর্শে আসা লোকদের নমুনা পরীক্ষা করতে হয় আগে। মূলত একাধিক সংক্রমণ-বাহকের কারণে নমুনার সংখ্যা বাড়ছে।
বিআইটিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ১৮ মে রাউজান উপজেলায় এক রাজনৈতিক নেতা করোনায় শনাক্ত হওয়ার পর তার সংস্পর্শে যাওয়া ১১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে রাউজান এলাকার এক রাজনৈতিক পরিবারের ৬১ জন আর নগরীতে এক মন্ত্রী ও তার পরিবারের ১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বিআইটিআইডিতে প্রতিদিন সংগ্রহ হচ্ছে ৪০০ নমুনা
বিআইটিআইডিতে পিসিআর মেশিন রয়েছে দুটি। গত এক সপ্তাহ ধরে ল্যাবটিতে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে। কিন্তু ল্যাবে ১৫০ থেকে ২৬০টির বেশি পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ল্যাবটিতে প্রতিদিন নমুনা জমে যাচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত ১০৫২টি নমুনা জমা ছিল। নমুনা জমা থাকার কারণে রোগীদের পরীক্ষার ফল পেতে ৪-৭ দিন পর্যন্ত লেগে যায়।
বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ সুপ্রভাতকে বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা যতটুকু ততটুকুর মধ্যে আমরা পরীক্ষা করছি। ১৯ মে একদিনে সর্বোচ্চ ২৬২টি নমুনা পরীক্ষা করেছি।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল ও ভেটেরিনারিতে ৩০০ নমুনা পরীক্ষা
চট্টগ্রাম মেডিক্যালে দুটি পিসিআর মেশিনে প্রতিদিন গড়ে ১৭০-২০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের নমুনা পরীক্ষা হয় সেখানে। তবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে নমুনা জমা থাকে না বলে জানিয়েছেন মাইক্রবায়োলজি বিভাগের প্রধান এহসানুল হক।
সুপ্রভাতকে তিনি বলেন, ল্যাব চালু হওয়ার পর প্রথমদিকে আমরা ৭০-১০০টি নমুনা পরীক্ষা করতাম। পরে নমুনার চাপ বাড়তে থাকে। দুটি পিসিআর মেশিন থাকাতে নমুনাও বেশি পরীক্ষা করতে পারছি। তবে হয়তো দিনে ২৫০টির বেশি করা যাবে না।
ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্যাথলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জুনায়েদ সিদ্দিকী। সেখানেও নমুনা জমা থাকে না বলে জানান তিনি।
সুপ্রভাতকে তিনি বলেন, আমরা ১০০টির বেশি নমুনা নিই না। কারণ আমাদের পরীক্ষা করার সক্ষমতা হলো সর্বোচ্চ ১০০টি। তাই নমুনা জমা থাকে না।
চবিতে চালু হচ্ছে করোনা পরীক্ষা, নগরীতে বসবে ১০টি বুথ
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর সুপ্রভাতকে বলেন, চট্টগ্রামে নমুনার সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো একটি করোনা ল্যাব চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে তাদেরকে অনুমতিও দিয়েছি। হয়তো বৃহস্পতিবার থেকে তারা পরীক্ষা শুরু করতে পারে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন মোড়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য আমরা বেসরকারি একটি এনজিওর সহায়তায় ১০টি বুথ স্থাপন করবো।