চট্টগ্রামে জরিপের ভুলে বিলীন হচ্ছে পাহাড়

ভুলভাবে জরিপ হওয়ায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ড উপজেলার দেড় শতাধিক পাহাড়-টিলা বিলীন হওয়ার পথে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বিএস জরিপে ভুলভাবে শ্রেণিভুক্ত হওয়া পাহাড়-টিলার জমির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৪০০ একর। তবে ১৯৭০ সালে জরিপ শুরুর সময় কত পরিমাণ জমির পাহাড়-টিলা এমন ভুলভাবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছিল এবং কাটা হয়েছিল, সে হিসাব পাওয়া যায়নি। কোথাও এসব পাহাড়-টিলার পুরোটাই, কোথাও আবার অংশবিশেষকে ‘শণখোলা’, ‘নাল’, ‘খিলা’, ‘বাড়ি’ ইত্যাদি শ্রেণিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি জরিপের এমন ভুলের সুযোগ নিয়ে চলছে পাহাড়-টিলা কেটে স্থাপনা নির্মাণ।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী, বিএস জরিপ শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে (সংশোধিত) বলা হয়েছে, পাহাড় ও টিলা বলতে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পার্শ্ববর্তী সমতল ভূপৃষ্ঠ থেকে উঁচু মাটি অথবা মাটি ও পাথর অথবা পাথর অথবা মাটি ও কাঁকড় অথবা অন্য কোনো কঠিন পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত স্তূপ বা স্থান এবং সরকারি রেকর্ডপত্রে পাহাড় বা টিলা হিসেবে উল্লিখিত ভূমিকে বোঝায়।

২০১০ সালে সংশোধিত বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পাহাড়-টিলা কাটা নিষিদ্ধ। কেবল জাতীয় স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় কাটা যেতে পারে। তবে আইনে কড়াকড়ি থাকলেও জরিপে ভিন্ন নামে শ্রেণিভুক্ত হওয়া পাহাড়-টিলা কাটা বন্ধ করা কিছুটা কঠিন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক এস এম সিরাজুল হক ‘হিল কাটিং ইন অ্যান্ড অ্যারাউন্ড চিটাগং সিটি’ শীর্ষক এক গবেষণায় গুগল আর্থের ছবি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, ২০১২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১ হাজার ২৯৫ হেক্টর এলাকার পাহাড় কাটা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরে ১৯৭৬ সালে মোট পাহাড় ছিল ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার। ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটারে নেমে আসে। এই সময়ে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কাটা হয়েছে, যা মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ।

গবেষকেরা জানান, পাহাড় ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন প্লেটকে দৃঢ়ভাবে আটকে ধরে রাখে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে পাহাড় ভূপৃষ্ঠের ওপরের স্তরে ভূকম্পন প্রতিরোধ করে। পাহাড় বিলীন হলে বন্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল হারানোসহ নানা পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দেয়। পাহাড় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এটির সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকার যেমন সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি অনেক প্রাণিকুলেরও এটি আশ্রয়স্থল। পাহাড় কাটা হলে এর প্রভাবে জীববৈচিত্র্য হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়, খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হয়। এমন কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয় কিন্তু যারা কঠোর হলে পাহাড় রক্ষা হতো তাদের বোধোদয় কবে হবে জানি না।