সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সুজন
নিজস্ব প্রতিবেদক :
নৌকার পক্ষে ভোট চাইলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেছেন, ‘বিবেকের তাড়নায় এই বার্তা দিতে এসেছি। যদি দোষ হয়, ক্ষমা চাই। শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠুভাবে যেন ভোট হয়।’ গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সুজন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে বিএনপির যারা সচেতন আছেন তারাও চট্টগ্রামের স্বার্থে এবং চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুুক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’
চট্টগ্রাম এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এজন্য চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে টানেল, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর, বে টার্মিনাল, মিরসরাই ইকোনমিক জোনসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প। এছাড়া কক্সবাজার পর্যন্ত হচ্ছে রেল যোগাযোগ। মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ।
নির্বাচনে সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন আসলে উত্তাপ থাকে। এ উত্তাপ যেন আত্মঘাতী না হয়। এ উত্তাপ যেন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতিকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না করে। ইচ্ছে করলে মিছিল মিটিং ছাড়াও নির্বাচন করা যায়। এখন মিডিয়ার যুগ। ফেসবুকের যুগ। ম্যাসেজ পাঠাতে পারেন। আমি মনে করি, যতটুকু হয়ে গেছে, আর কোথাও যেন সহিংসতা না হয়। সবাই প্রশাসনকে সাহায্য করুন। নির্বাচনের পর সবাই যেন একসঙ্গে আনন্দমুখর পরিবেশে কাজ করতে পারি।
দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারা জীবনের কঠিন সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে সেই ১৯৭০ সাল থেকে সব নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ছিলাম। পরে স্থানীয় হোক, জাতীয় হোক মনোনয়ন চেয়েছি। না পেলেও ঘরে বসে থাকিনি। দলের সিদ্ধান্তই মুখ্য। যারা রাজনীতিতে বিশ্বাস করি তাদের দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এবার প্রথম আমার জীবনে কঠিন সময়। কারণ দায়িত্বে থাকায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছি না। আমি একটা খাঁচার পাখির মত, যেন বন্দিশালা। দেখছি সবাই মিছিল করছে মিটিং করছে। ভিতরের যে ছটফটানিটা কাউকে বলতে পারছি না। একজন রাজনৈতিক কর্মীর এ কষ্ট যারা রাজনীতি করেনি তারা ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না।
ভবিষ্যতের মেয়রের প্রতি সুজন বলেন, যেই নির্বাচিত হন, একটাই অনুরোধ, দল থেকে নির্বাচিত হলেও নির্বাচিত হওয়ার পরে নগরপিতা মানে সব নগরবাসীর দায়িত্ব যেন নেন। আর পাবলিক প্রপার্টিকে যেন নিজের সম্পত্তি মনে না করেন। সকল মতের মানুষকে নিয়ে এই শহরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে চসিক প্রশাসকের এই আহবান নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে চসিক নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সেই নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের পাঁচবছর মেয়াদ শেষ হলে গত বছরের ৬ আগস্ট খোরশেদ আলম সুজনকে অতিরিক্ত সচিবের মর্যাদায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ৬ আগস্ট তিনি প্রশাসকের দায়িত্বভার নেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি সুজনের ছয়মাসের মেয়াদ শেষ হবে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দু’দিন আগে গত ৬ জানুয়ারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুজন। ২১ জানুয়ারি তার কোভিড নেগেটিভ ফল আসে। কোভিড থেকে মুক্ত হলেও তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল রয়েছেন। আর তাই সংবাদকর্মীদের পক্ষ থেকে কোনো প্রশ্ন নেননি।