চকরিয়ায় বালুখেকোদের কারণে বিপন্নের পথে পরিবেশ

বনভূমি, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আশঙ্কায় খুটাখালি খাল ইজারা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৮ মার্চ বন বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
খুটাখালি খালের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে মধুশিয়া গর্জন বন, পাহাড়সহ বিভিন্ন সময়ে করা বনায়ন বালু উত্তোলনে ধসে পড়েছে জানিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়, ইজারার কাগজে উল্লেখিত পাঁচটি দাগের বাইরে গিয়ে সংরক্ষিত ও রক্ষিত বন থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে সেখানে থাকা হাতি, শজারু, বন্য শূকর, বনবিড়াল, গন্ধগোকুল, হরিণ ও শেয়াল হুমকির মুখে পড়েছে। নির্বিচার বালু উত্তোলনে গতিপথ পরিবর্তন করে বনের সীমানায় ঢুকে গেছে খালটি। এ ছাড়া এই বনাঞ্চল বিপন্ন এশিয়ান বন্য হাতির বিচরণ ক্ষেত্র। ইজারা দেওয়া হলে এখানে বন, বন্য প্রাণী, জীববৈচিত্র্যসহ সামগ্রিক পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর আগে ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এসব খালের ইজারা স্থগিত করে। এরপর টানা ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছর ইজারা দেওয়া বন্ধ রাখে জেলা প্রশাসন।

একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধুশিয়া গর্জন বন এখন হুমকির মুখে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, বালু উত্তোলনের কারণে গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছে গর্জন বনটি।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালি ইউনিয়নে পড়েছে খুটাখালি খাল। এটি সংরক্ষিত বনভূমির পাশে অবস্থিত। ইউনিয়নের হরিখোলা গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন সাংবাদিককে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী লিটন, সাইফুলসহ ৫০ জনের একটি সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন করে। খালে বালু নেই, তাঁরা মূলত ইজারা নিয়ে বনের বালু তোলেন। এভাবে বালু তোলায় বনভূমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
খুটাখালি খালের উত্তরে বন বিভাগের রক্ষিত বন (প্রোটেক্টেড ফরেস্ট), দক্ষিণে সংরক্ষিত বন (রিজার্ভ ফরেস্ট)। প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর চলতি মাসে খালের একটি অংশ নতুন করে ইজারা দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩–এর ধারা ৪–এর (খ) বিধিতে বলা হয়েছে, বনের সর্বনিম্ন এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।
১২ মে খুটাখালি খালের ইজারা দেওয়া হরিখোলা ও নোয়ারফাঁড়ি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে বালু তোলার জন্য দুটি ড্রেজার রাখা। দীর্ঘদিন ধরে এ খাল থেকে বালু তোলায় দুইপাশে থাকা বনভূমি ভেঙে খালের সঙ্গে মিশে গেছে। এখন উত্তোলন করার মতো বালু খুব বেশি নেই। মোট পাঁচটি অংশে খালটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। আইন অমান্য করে প্রতিটি অংশে ইজারার সীমানার বাইরে গিয়ে রক্ষিত ও সংরক্ষিত বন থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাতির মলের স্তূপ প্রমাণ করে—এ বন হাতির চলাচলেরও পথ।
স্থানীয়রা বলছেন, মাটি সরে যাওয়ায় মধুশিয়া বনে গাছপালা হবে না। সামান্য রাজস্বের জন্য এত বড় ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। এ অঞ্চলে বেশ কিছু হাতি আছে, যেগুলো বান্দরবানের লামা থেকে আসে। বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে এসব প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে কেন সরকারকে রাজস্ব আয় করতে হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। সরকার ইচ্ছে পোষণ করলে অনেক বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করতে পারবে কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বন বা খাল-নদী তো তৈরি করতে পারবে না। যেটা সরকার গড়তে পারবে না সেটা বিনষ্ট করার এখতিয়ার তো সরকারের নেই, এটা কি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বোঝেন?