ঘূর্ণিঝড় রেমাল : জানমাল রক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে

পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে অতি গভীর নি¤œচাপটি আজ সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে। অনুমান এটি সরাসরি উত্তর অভিমুখে এসে সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝে সুন্দরবন এলাকায় স্থলভাগে আছড়ে পড়বে। রবিবার মাঝরাতে ল্যান্ডফলের সময় এর গতিবেগ থাকবে ১৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। আবহাওয়া অফিস বলছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের উৎস চেন্নাই উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ৭২০ কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভারত মহাসাগরের একটা বড় অংশের তাপমাত্রা বেশি বেশি থাকার ফলেই এই ঝড়ের জন্ম।
বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ মো. আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল ‘সিভিয়ার সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে। ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে এটি অতি প্রবল আকার ধারণ করে আঘাত হানতে পারে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে।
শনিবার (২৫ মে) দুপুরে ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আজিজুর রহমান বলেন, সাগরে অবস্থানরত গভীর নি¤œচাপটি আরও অগ্রসর ও ঘনীভূত হচ্ছে। রোববার সকাল নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, ‘আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে আমরা ঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি।’ রাত ১২টা থেকে ১টা নাগাদ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রেখেছি। সার্বিক প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কমবেশি আক্রান্ত হতে পারে। ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এজন্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হতে পারে।’
বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে তাতে সন্দেহ নেই। তারপরও বলতে হয় সাবধানের মার নেই। উপকূলবর্তী জনগণকে নিরাপদ রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক সময় তারা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে অনীহা প্রকাশ করে। এমন কারণে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সে সঙ্গে গবাদিপশু রক্ষায়ও আরও বিশেষ নজর দিতে হবে। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে অনেকে গরু-ছাগল খামার গড়ে তুলেছেন। আসন্ন সাইক্লোনে তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। স্বেচ্ছাসেবীরা জনগণের পাশে থাকছে কিনা সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। খাবার ও ওষুধের জোগান ঠিক রাখতে হবে।
ঘূণিঝড়ের সময়ে এলাকাবাসীকেও কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেওয়া সে সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থ ব্যক্তিরা যেন নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
মানুষ নিরাপদ থাকুক। বিপদের সময়ে মানুষ এগিয়ে আসুক সে প্রত্যাশা করি।