নিজস্ব প্রতিনিধি, পটিয়া »
পটিয়ায় মাকে গুলি করে হত্যার ৩০ ঘণ্টার মধ্যে অভিযান চালিয়ে ঘাতকপুত্র মাঈনুদ্দিন মোহাম্মদ মাঈনুকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে ঢাকাগামী একটি বাসে করে পালানোর সময় তাকে শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে র্যাব অধিনায়ক বলেন, পিতা-মাতার সাথে সন্তানের যে পবিত্র সম্পর্ক, সে সম্পর্কের মধ্যে একজন সন্তান যখন তার মাকে হত্যা করে তখন যে কোন বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে তা নাড়া দেয়। গত ১৬ অগাস্ট পারিবারিক বিরোধে পটিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির নেতা শামসুল আলম মাস্টারের বড় ছেলে তার মাকে পিস্তলের গুলিতে হত্যা করে। এ হত্যাকা-ের পরও মাঈনুলের মধ্যে কোন অনুশোচনা ছিল না। সে তার মোবাইল পানিতে ফেলে দেয় এবং কোমরে পিস্তল নিয়ে ঘুরতে থাকে। একপর্যায়ে ওইদিন বিকেলে সে তার কথিত এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে দোহাজারীতে আশ্রয় নেয় এবং সাথে থাকা পিস্তলটি একটি গুদাম ঘরের মালপত্রের নিচে লুকিয়ে রাখে। পরদিন ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে সে ঢাকা পালিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকাগামী একটি বাসে বিনা টিকেটে উঠে পড়ে, যাতে কেউ তার অবস্থান শনাক্ত করতে না পারে। কিন্ত হত্যাকা-ের পর র্যাবের গোয়েন্দাদল ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং তার অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪টি মামলার তথ্য পেলেও পরিবার থেকে জানানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে ৭/৮টি মামলা রয়েছে। ঘটনার নেপথ্যের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে র্যাবের অধিনায়ক জানান, ছোটকাল থেকেই মাঈনুল ছিল উচ্ছৃংখল প্রকৃতির। মাদকাসক্ত ছাড়াও নানান অপরাধে জড়িত হওয়ায় তার পিতা জীবদ্দশায় বেশির ভাগ ধন-সম্পত্তি তার মা ও বোনের নামে লিখে দিয়ে যান। এতে পরিবারের প্রতি সে আরো প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পড়ে।
মাঈনুর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে প্রথম অস্ত্র আইনে মামলা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর সে আর পড়াশোনা করেনি। একপর্যায়ে তাকে তার পরিবার ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেয়। সেখানেও আইন ভঙ্গ করায় তার ভিসা বাতিল হয়। ২০১৯ সালে সে দেশে ফিরে আসে আবারো নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। গত ১৩ জুলাই তার পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে মা ও বোনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। পিতার রেখে যাওয়া ব্র্যাক ও জনতা ব্যাংকের ১৬ লাখ টাকা বণ্টন নিয়ে বোন ও মার সঙ্গে তার বাকবিত-া হয়। একপর্যায়ে সে তার বোনকে লক্ষ্য করে গুলি করে। সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে দ্বিতীয় গুলিটি তার মাকে করে। গুলিটি তার মায়ের চোখে বিদ্ধ হয়। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মা মারা যান।
ঘটনার দিন রাতে তার বোন শায়লা শারমিন নিপা বাদি হয়ে ভাইয়ের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় মামলা করেন।