চট্টগ্রামের জনজীবনে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম গ্যাস সংকট। বন্দরনগরীর বিশাল এলাকা জুড়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভোর এবং রাতে গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। একদিকে তীব্র শীতের আগমন, অন্যদিকে উনুনে আগুন না জ্বলায় বিপাকে পড়েছেন কয়েক লাখ গ্রাহক। একটি আধুনিক নগরীতে রান্নার মতো মৌলিক চাহিদার জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে থাকা কিংবা ভোরে কাকডাকা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা শুধু কষ্টকরই নয়, বরং চরম অবমাননাকর।
নগরের হালিশহর, বাকলিয়া, পাহাড়তলী, চকবাজার এবং মুরাদপুরসহ অধিকাংশ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। গৃহিণীরা জানাচ্ছেন, রাত ১০টার পর থেকেই গ্যাসের চাপ কমতে থাকে এবং মধ্যরাতের আগেই তা পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়। আবার ভোরে যখন রান্নার মূল সময়, তখনো চুলা জ্বলে না। এর ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবীদের না খেয়ে অথবা বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবারের ওপর নির্ভর করে বের হতে হচ্ছে।
অনেকে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলপিজি সিলিন্ডার কিংবা বিদ্যুৎচালিত ইনডাকশন ওভেন ব্যবহার করছেন, যা সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মাসিক বাজেটে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি করছে। কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি—সরবরাহ ঘাটতি এবং পাইপলাইনের সংস্কার কাজের কারণে এই পরিস্থিতি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দীর্ঘমেয়াদী এই ভোগান্তির কোনো কার্যকর সমাধান কেন আগে থেকে পরিকল্পনা করা হয়নি?
চট্টগ্রাম দেশের অর্থনৈতিক হৃদপিণ্ড। আবাসিক গ্রাহকদের পাশাপাশি ছোট-বড় অনেক কলকারখানাও এই গ্যাস সংকটের কবলে। গ্যাসের চাপে স্বল্পতার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রেশনিং বা লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে যদি গ্যাস বিতরণ করতে হয়, তবে তার একটি সুনির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী তালিকা গ্রাহকদের জানানো উচিত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই গ্যাস বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
গ্যাস সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য এলএনজি আমদানির ওপর একক নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে জোর দেওয়া এখন সময়ের দাবি। সেই সাথে কেজিডিসিএলের বিতরণ ব্যবস্থায় কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি বা অবৈধ সংযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
জনগণের ধৈর্য এখন সীমার বাইরে। মাসের পর মাস বিল পরিশোধ করেও যদি নাগরিকরা ন্যূনতম সেবা না পান, তবে সেই দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। আমরা আশা করি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামের এই সংকটকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। ভোরের আলো আর রাতের বিশ্রামের সময়টি যেন অন্তত রান্নার চিন্তায় পার করতে না হয়—এটুকুই নগরবাসীর চাওয়া।




















































