ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। মূলত মহেশখালীতে থাকা ভাসমান দুটি টার্মিনালের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করায় চট্টগ্রামের জনজীবন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। গ্যাস সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এই বিপর্যয় ঘটে।
গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায়। এর ফলে চট্টগ্রামের শিল্পকারখানায় উৎপাদনও কমে যায়। গ্যাস স্টেশনগুলোতে গ্যাস না থাকায় সড়কে যানবাহন কম নামে এবং যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় অনেকের বাড়িতে চুলা জ্বলেনি। অনেকে দোকান থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন।
মহেশখালীর ভাসমান দুটি টার্মিনালের একটি চালু করা গেছে। এতে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ আবার শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজ চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হতে পারে। কিন্তু ন্যাশনাল গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে একটুও গ্যাস আসবে না, এটি হতে পারে না। দুর্যোগের সময় রেশনিং করে হলেও চট্টগ্রামে কিছু গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীতে কোনো অবস্থায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে না। বিকল্প সরবরাহব্যবস্থা থাকতেই হবে।
এলএনজি আমদানির আগে আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ পাইপলাইনের মাধ্যমে সিলেট, কুমিল্লা ও ফেনী অঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস চট্টগ্রামে সরবরাহ দেওয়া হতো। পরে বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি মহেশখালীতে ভাসমান টার্মিনালে খালাস করে আনোয়ারা পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার পাইপলাইনে এনে জাতীয় গ্রিডে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এই সিস্টেমে জাতীয় গ্রিডের আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ গ্যাস সরবরাহ লাইন ব্যবহার করা হয়। মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি খালাস করে জাতীয় গ্রিডে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রয়োজনীয় আড়াই শ থেকে তিন শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা রেখে বাকি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নেওয়া হয়।
জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি চালু রাখতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে যেকোনো বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। বিকল্প সরবরাহব্যবস্থার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। যে কোন দুর্যোগে বিকল্প ব্যবস্থায় গ্যাসসহ জরুরি পরিষেবা সচল রাখতেই হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ