চমেকে ওষুধ-স্যালাইন মিলছে না অভিযোগ রোগীদের
নিলা চাকমা
নগরীর বড় গ্যারেজের বাসিন্দা নুরুল আমিন। বৃহস্পতিবার সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরের পর হঠাৎ পেট ব্যথা ওঠে। শুরু হয় পাতলা পায়খানা। ওই দিনই তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে চলতি মাসে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী। শনিবার মোট ৫৬ জন রোগী ভর্তি হয়।
তবে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতাল থেকে সরকারি কোনো ওষুধ-স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন রোগী-স্বজনরা। অথচ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের বক্তব্য হাসপাতালে সব পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।
ওষুধ না পাওয়া নিয়ে নুরুল আমিন বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা খুব ভালোভাবে চলছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে একটা ওষুধও আমরা পাচ্ছি না। ক্যালোরাইট স্যালাইনসহ সব কিছু আমাদের বাইরে থেকে নিতে হচ্ছে। শুধু হাসপাতালে নয়, আশে-পাশের ফার্মেসিতেও পাওয়া যাচ্ছে না। দূরে গিয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে এসব সরঞ্জাম সংগ্রহ করে চিকিৎসা চালিয়ে নিতে হচ্ছে। ’
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চে সর্বমোট ৮৬৩ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২৮-৩২ জন রোগী থাকে। এপ্রিলে এসে সেই সংখ্যাটা ৫০ ছাড়িয়েছে। ১ এপ্রিল ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয় ৩৬ জন, ২ এপ্রিল ৩১জন, ৩ এপ্রিল ২৬ জন, ৪ এপ্রিল ৪২ জন, ৫ এপ্রিল -৪০জন, ৬ এপ্রিল ৩৭ জন, ৭ এপ্রিল-৪২ জন, ৮ এপ্রিল- ৩৬ জন, ৯ এপ্রিল -৩৯ জন, ১০ এপ্রিল- ৪১জন, ১১ এপ্রিল- ৩২ জন, ১২ এপ্রিল- ৩৫ জন, ১৩ এপ্রিল-৩২ জন, ১৪ এপ্রিল -৩৯ জন এবং ১৫ এপ্রিল ৫৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। গরম যত বাড়ছে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
গতকাল রোববার সরেজমিনে মেডিসিন বিভাগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় অনেক ডায়রিয়া রোগী। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বেশির ভাগ রোগীকে পেছনের বারান্দায় শয্যা দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মহিলা রোগীদের এক পাশে, পুরুষ রোগীদের একপাশে রেখেই চলছে চিকিৎসা। পুরুষ এবং মহিলা রোগীদের দুই পাশের মাঝখানে ময়লার স্তূপ জমা রয়েছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত ময়লাগুলো রাখা ছিলো। কেউ পরিষ্কার করতে আসে নি।
এদিকে সরকারি ওষুধ না পাওয়া নিয়ে মো. আলতাফ হোসেন নামে আরেক রোগী বলেন, ‘শুক্রবার ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়। তখন থেকে সব ওষুধ বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হয়েছে। বিনামূল্যে একটি ওষুধও পাচ্ছি না। ওষুধ পেলে আমাদের কিছু অর্থ বেচে যেত।’
ওষুধের অপর্যাপ্ততার কথা অস্বীকার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের বাড়তি চাপ সামলাতে চমেক হাসপাতালের পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্ততি রয়েছে। ডায়রিয়া চিকিৎসা সেবা দিতে দরকার স্যালাইন। সেটা তো রোগীরা পাচ্ছেন।
হাসপাতালে স্যালাইন থাকলে বাইরে থেকে কেন কিনে আনতে হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,‘ আমি তো আজ (১৫ এপ্রিল) সব চেক করেছি। বাইরে থেকে আনার প্রয়োজন নেই। স্যালাইন পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি হচ্ছে ওয়ার্ডে সঠিকভাবে বণ্টন হচ্ছে না। তবে আমি এই অভিযোগটি খতিয়ে দেখছি এবং রোগীদের স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস সাত্তার বলেন, ‘বাচ্চাদের ডায়রিয়া হয় রোটা ভাইরাসের কারণে। এই ভাইরাস সংক্রমণ হলে শিশুরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। কারণ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এই ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নিতে হবে। এছাড়া শিশুটি কি খাচ্ছে না খাচ্ছে সেদিকে মা বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। শিশুর খাদ্য হতে হবে সব সময় নিরাপদ।
প্রাপ্ত বয়স্করাও গরমের এই সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। তার প্রধান কারণ বাইরের খাবার খাওয়া। গরম পড়লে আমরা সাধারণত বাইরে বিক্রি করা বিভিন্ন শরবত খাই। কিন্ত সেগুলো তো নিরাপদ না। ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ। সুতরাং গরম পড়লে খোলা জায়গায় বিক্রি করা ঠাণ্ডা শরবত খাওয়া যাবে না।
পাতলা পায়খানা শুরু হলে সবার আগে পানি শূন্যতা পূরণ করতে হবে। তার জন্য স্যালাইনকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ স্যাল্যাইনের মধ্যেই সব উপকরণ থাকে। এক্ষেত্রে ডাবও ভালো। তবে সেখানে সব উপকরণ বিদ্যমান নেই। বেশি পরিমাণে স্যালাইন খেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা ডায়াবেটিস এবং রক্তের চাপে ভোগেন তারা স্যালাইন খান না। তারা মনে করেন স্যালাইন খেলে ডায়াবেটিস এবং রক্তের চাপ বেড়ে যাবে। কিন্ত ডায়রিয়া হলে সবার আগে স্যালাইন খেতে হবে। না হলে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। স্যালাইন বেশি পরিমাণে খেয়ে অন্যান্য ওষুধ চালিয়ে নিতে হবে।