হুমাইরা তাজরিন »
নাগরিকদের চলাচল র্নিবিঘ্ন করতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। কিন্তু গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য যেন থামার নয়। সরকার নির্ধারিত ভাড়া তালিকার তোয়াক্কা না করে সুযোগ পেলেই ড্রাইভার-হেল্পার মিলেই নির্ধারণ করেন ভাড়া। ড্রাইভার হেল্পাররা ‘ওঠা-নামা’ নামে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুরাদপুর থেকে ফতেয়াবাদ ৩ নম্বর রুটে দিনের আলো যাত্রীদের ডাক হাঁকা হচ্ছে ‘আতুরার ডিপো-অক্সিজেন-ফতেয়াবাদ ঊঠা-নামা ১০ টাকা’। যাত্রীরা কেউ কেউ এসে থমকে যাচ্ছেন। উঠা-নামা ১০ টাকার প্রজ্ঞাপনবিহীন ভাড়ার কথা শুনে তাদের চোখে মুখে বিস্ময়। তাদের মধ্যে কেউ নামবেন আতুরার ডিপো, কেউ নামবেন হামজারবাগ, কেউবা রৌফাবাদ। সরকার প্রদত্ত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী গ্যাসচালিত প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৭০ পয়সা অনুসারে যার ভাড়া হওয়ার কথা ৫ টাকা। এই ভাড়াই যাত্রীরা দীর্ঘদিন যাবৎ দিয়ে আসছে। রাত বাড়লে ভাড়ার পরিমাণ আরো বাড়তে থাকে। এসব গ্যাসচালিত বাস ডিজেল বাসের মতো। যাত্রীদের সাথে হরহামেশাই এ নিয়ে চলছে বাক-বিত-া।
কেবল ৩ নম্বর রুটে নয়। ১০ নম্বর, ৮ নম্বর, ৪ নম্বর রুটেও এ ধরনের ভাড়া নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিববহন। এসব ওভারলোডেড বাসগুলোর বেশিরভাগের নেই ফিটনেস। যাত্রী নেওয়ার জন্য এদের মধ্যবর্তী প্রতিযোগিতায় দুর্ঘটনা লেগেই থাকে।
নাফিজা আলম নামের এক কর্মজীবী যাত্রী বলেন,‘আমি প্রতিদিন এ বাসগুলাতে চলাচল করি। এরা নিজেরা ভাড়া নির্ধারণ করে। চালক-ড্রাইভার মিলে এরা ভাড়া নির্ধারণ করে। উঠানামা ১০ টাকা। কখনো ১৫ টাকা বা ২০ টাকাও হয়ে যায়। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে তাদের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। এতো বেশি ভাড়ায় আসা-যাওয়া আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে সম্ভব না।’
মো. ফোরকান নামের একজন যাত্রী বলেন, ‘আগে রাতের বেলা এই উঠানামা ভাড়াটা নিতো। এখন দেখি দিনের বেলাও উঠানামা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তারপর আবার ফতেয়াবাদ যাবার গাড়ি যাচ্ছে অক্সিজেন, বালুচরা পর্যন্ত। এই ৩ নম্বর রুটের গ্যাসচালিত বাসগুলো যাচ্ছে হাটহাজারী পর্যন্ত তাও আবার ৪০ টাকা ভাড়ায় ডিজেলের দামে। এই নৈরাজ্য চলছে ৭ থেকে ৮ মাস যাবত। আমরা কথা বাড়ালে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তাদের আচরণও ভীষণ খারাপ। ’
গ্যাসচালিত বাসের চালক মো. সুমন বলেন, ‘মুরাদপুরে কালভার্টের কাজ চলার কারণে রাস্তা বন্ধ। তাই সেখানে আমাদের অনেকক্ষণ লাইনে থাকতে হয়। সময় নষ্ট হয়। তাই আমরা ১০ টাকা উঠানামা ভাড়া নিই।’
বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ আমরা এ ব্যাপারে তাদের কখনও কোনো রকম উৎসাহ দেইনি। এগুলো কেউ তদারকি করছে না বলে যাচ্ছেতাই ভাড়া নিচ্ছে ওরা। যদি কালভার্টের কারণে রাস্তা বন্ধ থাকে তাহলে তারা বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারেন। তাই বলে ভাড়া বাড়াতে হবে কেন? ’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের মোটরযান পরিদর্শক র্তীথ প্রতীক বড়–য়া বলেন,‘ আমি তো আসলে এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আমরা সেভাবে পরিদর্শনে যাই না। মাঝে মাঝে যাই। আমি আমাদের উর্ধ্বতনদের বলে রাখছি, এ ব্যাপারে কি করা যায় দেখছি।’