রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
মিরসরাইয়ে ৬টি আদিবাসী পাড়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট এখনো কাটেনি। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। অস্বচ্ছল পরিবারগুলো স্বচ্ছল পরিবার থেকে মাসিক হারে পানি কিনে নিয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলায় ৬টি আদিবাসী পাড়ায় তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। পাড়াগুলো হলো মিরসরাই সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া, করেরহাট ইউনিয়নের সাইবেনীখীল, নলখো, কয়লা, কালাপানিয়া ও খৈয়াছরা ইউনিয়নের পূর্ব মসজিদ্দিয়া ত্রিপুরাপাড়া। এসব পাড়ায় প্রায় ১ হাজার পরিবার ত্রিপুরা আদিবাসী বসবাস করছে। কিন্তু আদিবাসী পাড়াগুলোতে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। কিছু পরিবারের কাছে নলকূপ থাকলেও অধিকাংশ আদিবাসী কুয়া ও স্বচ্ছল পরিবারগুলো থেকে পানি কিনে ব্যবহার করছে।
মিরসরাই সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়ার ত্রিপুরা পাড়ার সর্দার উত্তম ত্রিপুরা জানান, তালবাড়িয়া এলাকায় দুটি পাড়া রয়েছে। একটি রিজার্ভ পাড়া ও অন্যটি চৌধুরী পাড়া। এই দুই পাড়ায় প্রায় ১৪০টি পরিবার রয়েছে। যাদের পানি যোগান দেয় কুয়া। কিন্তু শীত মৌসুমে কুয়ার পানি শুকিয়ে যায়। আর বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে কুয়াগুলো পানিতে তলিয়ে যায়।
জানা গেছে, প্রায় ৫ বছর আগে ওই পাড়ায় উপজেলা পানি ব্যবস্থাপনা ফোরামের সভাপতি ডা. জামশেদ আলমের উদ্যোগে ১৩টি কুয়া স্থাপন করা হয়। কিন্তু ১৩ কুয়ার মধ্যে এখন পানি আছে মাত্র ৪টিতে। পরে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে একটি রিং টিউবয়েল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ওই পাড়ায় তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের পূর্ব মসজিদ্দিয়া আাদিবাসী পাড়ার সর্দার সুমন ত্রিপুরা বলেন, তাদের পাড়ায় ২শত ৫০ পরিবার রয়েছে। সবাই কুয়া ও ছরার পানির উপর নির্ভরশীল। কয়েক বছর আগে একটি টিউবয়েল পেলেও এটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
অন্যদিকে করেরহাট ইউনিয়নের সাইবেনীখীল পাড়ায় ১০০টি আদিবাসী পরিবারে প্রায় ৫ শতাধিক লোকজন বসবাস করেন। ওই পাড়ায় প্রায় ৩৫ জনের কাছে টিউবয়েল থাকলেও বাকিদের কাছে নেই। তাই তারা যাদের কাছে টিউবয়েল রয়েছে তাদের কাছ থেকে মাসিক ৫০/১০০ টাকায় বিশুদ্ধ পানি কিনে নেয় বলে জানান ওই পাড়ার বাসিন্দা ঊষা ত্রিপুরা।
এছাড়া ওই ইউনিয়নের নলখো পাড়ায় ১১০টি আদিবাসী পাড়া রয়েছে। পরিবারগুলোতে প্রায় ৭শ’ মানুষ বসবাস করে। নলখো পাড়ায় প্রায় ৪৫-৫০টি পরিবারের মধ্যে নলকূপ রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নের প্রতিষ্ঠা করা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি গভীর নলকূপ (ডিপ টিউবয়েল) স্থাপন করায় খাওয়ার জন্য পাড়ার লোকজন ওই পানি ব্যবহার করছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা কমল ত্রিপুরা। শুধু তাই নয় কয়লা ও কালাপানিয়া এলাকায়ও তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে।
আরো জানা গেছে, অনেক আদিবাসী পরিবার পাহাড়ি ছড়া থেকে পাত্রে পানি সংগ্রহ করে রাখে। পরে ওই পানি ব্যবহার ও খেয়ে থাকে। তাই অনেক সময় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় তারা।
জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কেএম সাঈদ মাহমুদ আদিবাসী পাড়ায় বিশুদ্ধ পানি সংকটের বিষয়ে জানান, আদিবাসী পাড়াগুলো পাহাড়ে হওয়ায় গভীর নলকূপ দেয়া যায় না। তাই রিং টিউবয়েলের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পানির সংকট নিরসন করা হচ্ছে।