সুপ্রভাত ডেস্ক »
আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে হলে তাতে বিএনপি অংশ নেবে না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সফরে আসা ইইউর প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে বৈঠকে একথা জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল শনিবার ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে অংশ নেন বিএনপির পাঁচ নেতা।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ, নির্বাচন যে গ্রহণযোগ্য না, এটাই তো ভিত্তি। এই ভিত্তির উপরে তো আজকে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের উপর নজর দিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের কনসার্ন প্রকাশ করছে। এজন্য তারা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) আসছেন, তারা জানতে চাচ্ছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন আদৌও আগামী দিনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কি হবে না?’
‘আমাদের পক্ষ থেকে যেটা আমরা সবসময় বলে এসেছি, আমরা শুধু বলছি না, দেশের জনগণ যেটা বলছে, বিশ্ব বিবেক যেটা বলছে, এই রেজিমের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না, সম্ভব না।’
এক যুগ আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপের পর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতবিরোধ চলছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছিল।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে পুরনো দাবিটি জোরেশোরে তুলেছে বিএনপি। তারা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই পরবর্তী নির্বাচন হবে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে আপত্তির কারণ সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘কারণ তো বিশ্লা কারণ। এত কারণ আমি এখানে বলতে পারব না। কারণগুলো আপনারাও (সাংবাদিকরা) জানেন, বিশ্ববাসীও জানেন। যে কারণে আজকে এখানে তারা (ইইউ দল) আসছেন। কারণ হচ্ছে, এদের (সরকারের) অধীনে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন তো দূরে, নির্বাচনের ভোট চুরি তো এখনই চলছে।’
এই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই যে ডিসিদের পোস্টিং হচ্ছে, এসপিদের পোস্টিং হচ্ছে, ইউএনওদের পোস্টিং হচ্ছে, বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার চলছে। গতকাল দলের পদযাত্রায় আসা নেতা-কর্মীদের উপর আক্রমণ করে বাধা দেওয়া হয়েছে। এটা তো অব্যাহতভাবে চলছে। বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার বিচারকে ত্বরান্বিত করে তাদের শাস্তি দিচ্ছে, তারা যাতে নির্বাচন করতে না পারে।’
‘অর্থাৎ ভোট চুরি বাংলাদেশে প্রত্যেকদিন চলছে। তারা আগামী দিনেও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতায় যাবে জনগণকে বাইরে রেখে।।’
এই বিষয়গুলো ইইউ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন বলে আমীর খসরু জানান। তিনি বলেন, ‘শেষ কথা হচ্ছে, এই রেজিমের অধীনে কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারবে না, তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে না, এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।’
সকাল ৯টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যের ‘ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন’র প্রতিনিধি দল। এর নেতৃত্ব দেন প্রতিনিধি দলের প্রধান রিকার্ডো শেলেরি।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরু ছাড়াও ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান।
৮ থেকে ২৩ জুলাই এ সফরে মূল নিবার্চন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি,পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিক্স ও নিরাপত্তা- ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়ন করবে এই মিশন। এর অংশ হিসেবে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
‘পর্যবেক্ষকের প্রশ্ন তখনই আসবে, যখন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে’
গত দুটি নির্বাচনে ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি, এবার পাঠাবে কি না- জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘সেটা তো তাদের (ইইউ) সিদ্ধান্ত। এটার তো আমি উত্তর দিতে পারব না।’
‘তবে আগে তো বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে। পর্যবেক্ষকের প্রশ্ন তখনই আসে, যখন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এই মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ, বিশ্বের জনগণ, গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশ্বাস করে না যে বিগত নির্বাচনগুলোতে জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গঠন করেছে, আগামীতে করারও কোনো কারণ নাই। সুতরাং এই প্রেক্ষাপটে যে সিদ্ধান্ত, সেটা তারা দেবে, সেটা তাদের ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘দেখেন তারা তো নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা কোথায় কিন্তু যাচ্ছেন না। কেন তারা বাংলাদেশে আসছেন? বিষয়টা তো দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে বাংলাদেশে নির্বাচন হয় না। আগামী নির্বাচন যে হবে না, এটার লক্ষণ তো প্রত্যেকদিনই আমরা দেখছি।’
নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’র ক্ষেত্রে আপনাদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে কিছু বলেছেন কি না- এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। যেখানে ডেমোক্রেটিক অর্ডার নাই, সেখানে সমান সুযোগ থাকতেই পারে না। এটা সর্বজনবিদিত ব্যাপার।’
ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেখানে কোনো ডেমোক্রেটিক অর্ডার নাই, মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ, আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ, জীবনের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ, যেখানে ডেমোক্রেটিক অর্ডারই অনুপস্থিত সেখানে সংলাপ কীভাবে?’
‘সংলাপের জন্য একটা ডেমোক্রেটিক অর্ডার লাগে, সংলাপ তো ডেমোক্রেটিক অর্ডারের অংশ। সেই পরিবেশ তো আগে ক্রিয়েট করতে হবে, তারপরও তো সংলাপের প্রশ্ন আসবে।’