অলোক আচার্য »
শুভ সকাল মিঃ নিওমান। আপনাকে এবার উঠতে হবে।
নিওমান এবার আস্তে আস্তে চোখ খুললেন। চোখ খুলে তিনি ঘরের চারিদিকটায় তাকালেন। ঘরের ভিতর কোনো আসবাব নেই। কয়েকটি ধাতব যন্ত্র রাখা আছে। কিন্তু ধাতব যন্ত্রগুলো থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। এসবের কোনোটি তিনি আগেও দেখেছেন। কোথায় দেখেছেন এই মুহূর্তে ঠিক মনে করতে পারছেন না। তার মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। সম্ভবত কোনো রাসায়নিক তার মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলেছে। তিনি তো ছিলেন তার ল্যাবরেটরিতে। এক মনে কাজ করছিলেন। এখানে এলেন কীভাবে? ঠিক মনে করতে পারছেন না। কে তাকে উঠতে বলছেন সেটাও বুঝতে পারছেন না। কেউ নেই তার সামনে। সম্ভবত কোনো স্পিকার রাখা এবং সেটা কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা শত্রুর ওপর নজর রাখার এবং তাকে কমান্ড করার সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি। কিন্তু এটা বেশ কার্যকর। শত্রু তার সামনে আসবে অনেক সময় পরে। তাকে চিন্তা করার সময় দেবে। তাকে যে কয়েকটি প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তা হলো তার তেমন কোনো শত্রু থাকার সম্ভাবনা নেই। দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, তাকে এখানে কেন আনা হয়েছে? আরও কয়েকটি প্রশ্ন ছিল কিন্তু কার কাছে করবেন সেই চিন্তা করে সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলেন।
মিঃ নিওমান পৃথিবীর একজন সফল ক্লোন বিজ্ঞানী। বলা যায়, এই সময়ের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী।
আমি কোথায়?
প্রশ্ন করেই মনে হলো তিনি প্রশ্নটা ঠিক কাকে করছেন সেটাই তো বুঝতে পারছেন না। যদি কেউ তাকে নজরে রাখে (তিনি প্রায় শতভাগ নিশ্চিত এ ব্যাপারে)। তাকেই প্রশ্নটা করেছেন। তাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যি কেউ একজন উত্তর দিল। আপনি পৃথিবীতেই আছেন। সুরক্ষিত এবং গোপন। আপনাকে নিরাপদে আপনার জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
পৃথিবীতে?
হ্যাঁ।
আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে?
পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য। আপনি হবেন পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যার হাতেই পরবর্তী মানব সভ্যতা বিকাশ লাভ করবে।
এসব কী বলছেন?
জ্বি, ঠিকই বলছি নিওম্যান। আপনিই সেই ব্যক্তি। আপনাকেই সেই কঠিন কাজটি করতে হবে। করতেই হবে।
কিন্তু আমাকে কী করতে হবে?
সেটা আপনাকে বুঝিয়ে এবং পুরোপুরি ধারণা দিয়ে আবার ফেরত পাঠানো হবে। এ নিয়ে আপনি কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না।
পৃথিবীর কোথায়?
মিঃ নিওম্যান আপনি যে পৃথিবীর কথা ভাবছেন বা বলছেন সেই পৃথিবীতে আপনি নেই। আপনি আছেন আমাদের পৃথিবীতে।
আমাদের পৃথিবী বিষয়টা কী? পৃথিবী তো একটাই। এই মহাবিশ্বে এখনও পর্যন্ত একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ পৃথিবী একটাই। আমি কী সেই পৃথিবীর কোনো অজ্ঞাত স্থানে আছি?
আপনি আপনার যে পৃথিবীর কথা বলছেন আমাদের হিসেবে সেই পৃথিবীর অস্তিত্ত্ব আর এক হাজার দুইশত পঞ্চান্ন ঘন্টা এগারো মিনিট এবং ঊনচল্লিশ সেকেন্ড!
এসবের মানে কী?
মিঃ নিওম্যান, আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে আপনার পৃথিবী বর্তমানে কী মারাত্বক পর্যায়ে দূষিত। পরিবেশের সবগুলো উপাদান দূষণের মারাত্বক পর্যায়ে পৌছে গেছে। আপনাদের শক্তির প্রধান উৎস জীবাশ্ন জ্বালানীর সবকটি উপাদান প্রায় শেষের দিকে। নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার অপর্যাপ্ত। মোট কথা, এই পৃথিবী এখন ধ্বংসের দিকে। আপনাদের সবচেয়ে বড় বড় বিজ্ঞানী গত এক শ বছরেও কোনো সমাধান করতে পারেনি। এখন শেষ ভরসা আপনি।
আমি? মানে? আমি কীভাবে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারি? আমি তো ……
আপনি ক্লোন বিজ্ঞানী। আমরা সব জেনেই এখানে আপনাকে এনেছি। একমাত্র আপনিই পারেন আপনার গ্রহটাকে রক্ষা করতে। আমরা আপনাকে সব শিখিয়ে দেব। এবার খুব ভালোভাবে শুনুন। এটাও পৃথিবী। কিন্তু আপনাদের জানার বাইরের পৃথিবী। এরকম আরও অসংখ্য পৃথিবী আছে এই মহাবিশ্বে। তবে এসব পৃথিবীই সৃষ্টি হয়েছে একটিমাত্র পৃথিবী থেকে। এসবই হলো ক্লোন পৃথিবী। আপনি যেমন বিভিন্ন প্রাণীর ক্লোন করেন ঠিক সেইরকম। পদ্ধতিটা একটু ভিন্ন। তবে বৈশিষ্ট হুবুহু একই রকম।
আর একটু খুলে বলুন।
আপনি যদি ক্লোন করে কোনো প্রাণী সৃষ্টি করেন সেটা মানুষ হলেও সেই ক্লোন করা প্রাণীটা হবে ঠিক যে প্রাণীর ক্লোন করা হচ্ছে হুবহু সেই প্রাণীটার মতো। তার আচরণ, গঠন এবং সব বৈশিষ্ট্য। এখন যে পৃথিবী থেকে টিস্যু নিয়ে ক্লোন করা হবে সেটি ধ্বংস হলেও ক্লোন করা পৃথিবীতে আপনারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। প্রথম যখন পৃথিবীর ক্লোন শুরু হয় তখন পৃথিবীর কোষ সংগ্রহ করা হয় এবং আস্তে আস্তে ক্লোন পৃথিবী তৈরি হয়। এটি তৈরি হতে কমপক্ষে এক হাজার বছর দরকার হয়। সেই হিসেবে এখন থেকে কাজ শুরু করলে আপনার একটি ক্লোন পৃথিবী তৈরি করতে পারবেন এবং পৃথিবীর সব মানুষ সেই পৃথিবীর বাসিন্দা হবেন। আপনি পর্যায়ক্রমে আপনার পরবর্তী বিজ্ঞানীদের বিষয়টি বুঝিয়ে দেবেন। আপনার হাত ধরেই বেঁচে যাবে মানব এবং প্রাণীকুল। পৃথিবীতে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। আর এটা একমাত্র আপনিই করতে পারেন। আমরাও প্রথম দিকে দূষণ ঠেকিয়ে পৃথিবীর আয়ুকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। মানুষকে সঠিক পথে আনা সম্ভব হয়নি। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আমরা পৃথিবীর ক্লোন করে সেই আদি পৃথিবী তৈরি করেছি। এখানে সবকিছু আমাদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তাছাড়া মানুষও বুঝে গেছে পৃথিবী ধ্বংস হলে তার ফল মানুষেরই ভোগ করতে হয়। আর একটি নতুন পৃথিবী তৈরির প্রজেক্টে আপনাকে স্বাগত।