চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পাঁচ ওসির বিরুদ্ধে মামলা
মোহাম্মদ রফিক :
টেকনাফে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যার ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে এখনো সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীর (বরখাস্ত) বিরুদ্ধে অভিযোগের অনেক ডালপালা বিস্তার করেছে।
গত ৩১ জুলাই রাতে সংঘটিত নির্মম এ ঘটনার পর ওসিদের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ক্রসফায়ার নিয়ে সমালোচনার ঝড় থামছে না। গত ১৬ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ১১ দিনে ৫ জন পরিদর্শকসহ একাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিমত, করোনাকালে মানবিকতার পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল যখন করার চেষ্টা চলছে, ঠিক তখনই চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকার থানার কিছু ওসির ক্ষমতার অপব্যবহার, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ উঠায় ইমেজ সংকটে পড়েছে পুলিশ।
তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ইউনিটগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তারা ইমেজ সংকটে পড়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তি অপরাধের জন্য পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে দায়ী করা যাবে না। যেসব পুলিশ সসদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উঠছে তাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে না। বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি গ্রেফতার করে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকালে জানতে চাইলে কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক।
জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমান নামে এক প্রবাসীকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে এ মামলা করা হয়। গত ২৬ আগস্ট টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (৩) আদালতে মামলাটি করেছেন নিহত মাহমুদুর রহমানের ভাই নুরুল হোসাইন।
এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, ১০ লাখ টাকা দাবি করে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আরো পাঁচ লাখ টাকা না দেয়ায় তার ভাই মাহমুদুর রহমানকে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করেন ওসি প্রদীপ। একইদিন ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের আদালতে আরেকটি মামলা করেন জসিমউদ্দিন নামে একজন ব্যবসায়ী। পরে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত ২৫ আগস্ট কক্সবাজারের উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তারসহ ৪ পুলিশের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। মহেশখালী কালারমার ছড়া ইউনিয়নের নয়াপাড়ার নুরুচ্ছবির কন্যা ও কক্সবাজার হাভার্ড কলেজের ছাত্রী রিয়াদ সুলতানা নুরী বাদি হয়ে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন-উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম, এএসআই মো. শামীম ও কনস্টেবল মো. সুমন।
গত ২৪ আগস্ট রাউজান থানার সাবেক ওসি কেফায়েত উল্লাহ ও সাবেক এসআই সাইমুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আড়াই লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে মামলা করেছেন কাঞ্চন চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে মামলাটি দায়ের হয়।
এদিকে দুই লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি এবং ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে নগরের বায়েজিদ থানার আট পুলিশ সদস্যসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলা করেন মো. আব্দুল ওয়াহেদ নামে এক ব্যবসায়ী। আদালত মামলা গ্রহণ করে নগর পুলিশ উত্তর জোনের উপকমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ১৯ আগস্ট চট্টগ্রামের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতে মামলাটি দায়ের হয়।
পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে আরো পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় বন্দুকযুদ্ধের নামে টেকনাফের হ্নীলার সাদ্দাম হোসেন নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগে টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গত ১৮ আগস্ট একটি মামলা হয়েছে। নিহত সাদ্দাম হোসেনের মা গুল চেহের এ মামলা দায়ের করেন। কক্সবাজার জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ হেলাল উদ্দীন তা তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে চাঁদা দিতে না পারায় ইয়াবা ব্যবসায়ী সাজিয়ে পটিয়া থেকে মো. জাফর নামে ওমান ফেরত এক প্রবাসীকে কক্সবাজারে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে পটিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বেশ্বর সিংহের আদালতে মামলা করেছেন নিহত জাফরের মামা আহমদ নবী। গত ১৬ আগস্ট রোববার তিনি এ মামলা করেন। মামলায় চকরিয়া থানার ওসি ও হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।