রাজিব শর্মা »
এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে গবাদি পশুর চাহিদা প্রায় ৯ লাখ। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার বেশি। তবে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি পশু। এরপরেও প্রায় ৩৯ হাজার পশুর ঘাটতির শংকা রয়েছে। তবে আশেপাশের জেলা থেকে আসা ও উত্তরাঞ্চলের খামারিদের পশু দিয়েই এ ঘাটতি দূর হবে বলে মনে করছে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের প্রাথমিক তথ্য মতে, গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানি দাতা বেড়েছেন প্রায় ৬৭ হাজার ২৯৭ জন। গত বছর চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরে কোরবানি হয়েছে ৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৮টি পশু। এবার কোরবানিতে পশুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। এর মধ্যে মজুদ রয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। পশুগুলোর মধ্যে গরুর মজুদ আছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। গরুর মধ্যে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৯টি ষাঁড়, ১ লাখ ২১ হাজার ৬৭০টি বলদ, ৪৯ হাজার ১১৪টি গাভী এবং মহিষ ৬৪ হাজার ১৬৩টি, ছাগল ২ লাখ ৫ হাজার ১৭৪টি, ভেড়া ৫৫ হাজার ৬৯৭টি এবং অন্যান্য পশু আছে ৩৫টি।
সবচেয়ে বেশি মজুদ সন্দ্বীপ, কম বোয়ালখালীতে
গত বছরের মতো এবারও জেলায় সবচেয়ে বেশি পশুর মজুদ আছে সন্দ্বীপ উপজেলায় আর সবচেয়ে কম বোয়ালখালী উপজেলায়। সন্দ্বীপে রয়েছে ৮৫ হাজার ২৫০টি আর বোয়ালখালীতে ২৯ হাজার ৭৪২টি।
এছাড়া অন্যান্য এলাকার মধ্যে সাতকানিয়ায় ৪৫ হাজার ৩৭১টি, চন্দনাইশে ৪৭ হাজার ৪টি, আনোয়ারায় ৬৩ হাজার ৪২৮টি, পটিয়ায় ৭০ হাজার ১৮০টি, কর্ণফুলীতে ৩৩ হাজার ৫৩৩টি, মিরসরাইয়ে ৫৮ হাজার ৭৮০টি, সীতাকুণ্ডে ৫৬ হাজার ৮৫০টি, হাটহাজারীতে ৪৪ হাজার ৮৯০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৫০ হাজারটি, ফটিকছড়িতে ৬৯ হাজার ৪১৯টি, লোহাগাড়ায় ৩৮ হাজার ৫৯টি, রাউজানে ৩৪ হাজার ৩০২টি, বাঁশখালীতে ৫৯ হাজার ৪০৪টি, ডবলমুরিং এলাকায় ৩৭ হাজার ৫০০টি, কোতোয়ালীতে ৩০ হাজার ৬৯৮টি এবং পাঁচলাইশে ৪১ হাজার ৫৫৯টি পশুর মজুদ রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ কর্মকর্তাদের মতে, চাহিদার তুলনায় চট্টগ্রামে সামান্য পরিমাণ ঘাটতি থাকলেও আশপাশের জেলায় উদ্বৃত্ত কোরবানিযোগ্য পশুর মজুদ আছে। খামারিদের দাবি, দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি কোরবানির পশু রয়েছে। আমদানি ও চোরাইপথে পশু আনা বন্ধ করতে হবে। এতে খামারিরা টিকে থাকতে পারবে। প্রতিবছর কোরবানির সময় দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ১ লাখেরও বেশি গবাদিপশু আসে চট্টগ্রামের বাজারে। এতে চট্টগ্রাম নগরী এবং ১৫ উপজেলায় পশুর যে ঘাটতি থাকে তা পূরণ হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, ‘গত বছরও আমাদের আংশিক ঘাটতি ছিল। তা আশেপাশের জেলা থেকে আসা পশু দিয়েই মেটানো হয়েছে। এবছরও যে ঘাটতি আছে তা নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। কারণ সবাই নিজস্ব ভাবে পশু কোরবানি করে না। অনেকেই কয়েক পরিবার মিলে কোরবানি করে। আর চট্টগ্রামের মানুষের পশু কেনার প্রতি সবসময়ই আগ্রহ বেশি। শুধু চট্টগ্রামেই বিক্রি করার আশায় উত্তরবঙ্গের খামারিরা পশু সরবরাহ করেন। আর পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেও পশু আসে। সবমিলিয়ে এবারের সংকটে তেমন প্রভাব পড়বে না।’
ভালো দাম প্রত্যাশা করছেন খামারিরা
জানা যায়, চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪ হাজার ২৫৮টি খামার রয়েছে। এর বাইরে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খামার। জেলার পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া আনোয়ারা, কর্ণফুলী, কাপ্তাই, বোয়ালখালী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া ও বাঁশখালী উপজেলার খামারগুলোতে কোরবানির জন্য বেশি পশু লালনপালন করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারো এসব খামারি পশুর বাজার নিেেয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে অনান্য বছরের মতো এবার পথে পথে চাঁদাবাজি, খুঁটি ব্যবসায়ের শিকার না হলে ভালো দাম পাবেন বলেও প্রত্যাশা করছেন খামারিরা।
কর্ণফুলী মইজ্জারটেক এলাকার খামারি মারুফ হোসেন সিকদার বলেন, ‘এ বছর পশুপালনে বেশ খরচ বেড়েছে। ক্রেতাদের কাছে ভালো দর প্রত্যাশা করছি। নয়তো বড় লোকসান গুনতে হবে।’
সাতকানিয়ার এস এ এগ্রোর মালিক মো. ফরহাদ বলেন, ‘এবার খামারে পশু রয়েছে ৪৮ টি। অনান্য বছরের তুলনায় এবার পশু খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। অনেকেই লোকসানের কারণে পশু পালন বন্ধ রেখেছে। যদি সঠিক দাম না পায় তবে খামারিরা পশুপালনে অনুৎসাহিত হবে।’
চট্টগ্রাম ডিভিশনাল ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘অনান্য বছরের মতো এবারও কোরবানির জন্য পশু হাটে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে খামারিরা। চোরাইপথে গরু আসা বন্ধ হতে হবে। নয়তো খামারিরা বড় ঝুঁকিতে পড়বে।’
পশুর হাটের প্রস্তুতি
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসন কোরবানির পশুর হাট বসাতে জোর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে নির্ধারিত স্থানগুলোতে হাট বসানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা, বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা, পশু চিকিৎসা সেবা, এবং ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ঈদের আগেই সব হাটে প্রশাসনিক তদারকি নিশ্চিত করা হবে।
নগরে এবার ১১টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হবে বলে জানা যায়। এর মধ্যে রয়েছে- কর্নেলহাট, আতুরার ডিপো, পলিটেকনিক মোড়, আমবাগান, সাগরিকা, সিডিএ মার্কেট ও ইপিজেড এলাকার হাট।
প্রতিটি হাটে ডিজিটাল ওজন স্কেল বসানো, ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকা, এবং পশুদের রোগমুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।