ডেস্ক রিপোর্ট »
আজ (১৬ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবস । কৃষি মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশেও পালিত হবে দিনটি। এবারের প্রতিপাদ্য হলো, ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ-ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি, আর ভালো পরিবেশেই উন্নত জীবন’।
প্রতি বছর কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। অপরদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা। বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যের চাপ সামলাতে কৃষিজমি রক্ষায় মহাপরিকল্পনা নেয়ার বিকল্প নাই। আর সে পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষিজমিকে বিভিন্ন ভাগে চিহ্নিত করে কৃষককে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষিকে বাণিজ্যকরণ ও আধুনিক প্রযুক্তিতে উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোড় দেওয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) পক্ষ থেকে এ বিষয়ক একটি প্রস্তাবনা কৃষি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাবনাটি তুলে ধরার পর কৃষিজমি রক্ষায় কার্যক্রম শুরু হবে।
শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের পর বছর এভাবে কৃষিজমি কমতে থাকলে সংকটে পড়তে পারে দেশ। এসব জমি রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ না নিলে অনেক উর্বর জমিও হারাতে হতে পারে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের এক ফসলি, দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমি চিহ্নিত করে তা রক্ষার জন্যে সমন্বিত প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবনাটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর পর যে নির্দেশনা আসে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
প্রস্তাবনায় বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল জাত সম্প্রসারণ, উচ্চ মূল্যের ফসল চাষে কৃষককে আগ্রহী করে তোলা, কৃষক যেন ফসলের ন্যায্য দাম পান, বাজারজাত পরিস্থিতি উন্নত করা, ফসল চাষ করে কৃষক যেন ক্ষতির মুখে না পড়েন এসব বিষয়কে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
অনেক সময় কৃষক ফসল বিক্রি করতে পারেন না, তারা হতাশ হয়ে পড়েন। এসব কারণে কৃষক ফসলের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। কৃষককে যদি লাভবান করা যায় তাহলে ওই কৃষক কৃষিজমি বিক্রি করবে না।
এছাড়া আইনি কিছু বিষয় প্রস্তাবনায় রাখা হয়েছে। কৃষিজমি অন্য খাতে ব্যবহার ও বিক্রির বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে কৃষিজমি বিক্রি বা অন্য খাতে ব্যবহার করা যাবে। কোনোভাবেই যেন কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
এখন কৃষিকে বাণিজ্যকরণের গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা কৃষিজমি রক্ষায় কৃষিকে বাণিজ্যকরণের কোনো বিকল্প নেই।
নানাভাবে কৃষিজমি অন্য খাতে চলে যাচ্ছে। জমি যদি নির্দিষ্ট করা যায় – কোনটা এক, দুই ও তিন ফসলি জমি, তাহলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। কোন এলাকায় কী আবাদ করা যাবে সেই কাজটাও সহজ হবে। ক্রপ জোনিংয়ের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের আবাদ বৃদ্ধিতে এ মহা পরিকল্পনা কাজ করবে।
দেশে বর্তমানে এক ফসলি জমির পরিমাণ ২১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৪০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫ হেক্টর ও তিন ফসলি জমি রয়েছে ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৯১ হেক্টর।
রাস্তাঘাট, মিল-কারখানা, অপরিকল্পিত বাড়িঘরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরিতে দেশের চাষযোগ্য জমি থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৮৯ হেক্টর জমি হারিয়ে যাচ্ছে। এ হিসাবে প্রতি বছর প্রায় ৭৯ হাজার হেক্টর কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। অপরদিকে জনসংখ্যার চাপ সামলাতে পাল্লা দিয়ে নিবিড়ভাবে ধান চাষ করা হচ্ছে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই কৃষিজমি রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে কৃষিজমির সংকট হতে পারে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে অবশ্যই সঠিক পরিমাণের কৃষিজমি দরকার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৮ সালের হিসাব মতে, দেশে মোট পরিবার/খানা ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৩টি, মোট কৃষি পরিবার/খানা ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ১৮৩টি, কৃষি বহির্ভূত পরিবার/খানা ১ কোটি ৩৫ লাখ ১২ হাজার ৫৮০টি। দেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ দশমিক ৭৭ লাখ হেক্টর, মোট সেচকৃত জমি ৭৪ দশমিক ৪৮ লাখ হেক্টর, আবাদযোগ্য পতিত ২ দশমিক ২৩ লাখ হেক্টর, ফসলের নিবিড়তা ১৯৪ শতাংশ, আর মোট ফসলি জমির পরিমাণ ১৫৪ দশমিক ৩৮ লাখ হেক্টর।