কুইক রেসপন্সের সময় তো পেরিয়ে গেছে

মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সোমবার বিকেলে বন্দরনগর চট্টগ্রামের নিচু এলাকাসহ অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। নগরের পাঁচলাইশ, প্রবর্তক মোড়, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, শুলকবহর, মির্জাপুল, ওয়াসা মোড়, তিন পুলের মাথা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, চকবাজার, বহদ্দারহাট এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। কোথাও কোথাও গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি জমেছিল।
বর্ষার আগে এটাকে নমুনা! বৃষ্টি বলা চলে। তবে এসব দৃশ্য দেখার পর নড়েচড়ে বসেছেন নগরের অভিভাবকরা। সামনের দিনের ভয়াবহতার কথা আঁচ করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী জরুরি উদ্যোগ হিসেবে সমন্বয় সভা আয়োজন করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, আরও দুই মাস সময় আছে। এই মৌসুমে কীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে জনগণকে স্বস্তি দিতে পারি সে পরিকল্পনা করতে হবে। এক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের কাজ পরিচালনাকারী সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বয় করে কাজ করবে। এ সংস্থাগুলো নিয়ে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করতে হবে। তড়িৎ সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা থাকবে তাদের। কোথাও কোনো অসঙ্গতি হলে সাথে সাথে কেউ কারো দিকে যেন তাকিয়ে থাকতে না হয়। এই টিমের সুপ্রিম পাওয়ার থাকবে। এই টিম সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাধান করবে।
মেয়র বলেন, পানি উঠবেই, এটা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। পৃথিবীর কোন জায়গায় পানি ওঠে না। দুবাই শহরে পানি ওঠে, অথচ সেখানে কেউ কোনোদিন কল্পনা করেনি। নিউইয়র্কেও পানি ওঠে। কিন্তু পানি যেন দ্রুত নেমে যায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, কেউ বলতে পারবে না পানি উঠবে না। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ছাড়া বিভিন্ন কারণ আছে। কিন্তু পানি যাতে দ্রুত নিষ্কাশন হয়ে যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে আমাদের। সে ব্যবস্থার জন্য খালের মাটি উত্তোলন করতে হবে। খালের ওপরের দিকের ময়লা পরিষ্কার করে দিলে হবে না। খাল গভীর করতে হবে। স্পেসিফিকেশনে খাল কতটুকু গভীর করতে হবে আমি জানি না। কিন্তু খাল থেকে মাটি উত্তোলন করতে পারলে জনগণ দুর্ভোগ থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবে।
সিডিএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৭০ দশমিক ৩৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৬০ বর্গকিলোমিটারের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে। আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কাজ করছে সিডিএ।
মেয়রের এ কথাগুলোই ভুক্তভোগী জনগণ বলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে নিউইয়র্ক বা দুবাইয়ে পানি ওঠা আর চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতার কারণ একই নয়। ওই দুটি ঘটনা পুরোটাই প্রাকৃতিক ও আকস্মিক। কিন্তু চট্টগ্রামের দুর্দশা পুরোটাই প্রাকৃতিক ও আকস্মিক নয়। চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার একমাত্র কারণই হলো নালা ও খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলে ভরাট হয়ে যাওয়া। মেয়র নিজেই বলেছেন, ‘৩৬টি খালের কাজ চলছে। বাকি ২১টি খালের অবস্থা খারাপ। কোনোটা ভরাট হয়ে গেছে। কোনোটা বেদখল হয়ে গেছে। এগুলো উদ্ধারে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’
এতদিনে যদি পরিকল্পনাই গ্রহণ করা হয় তাহলে কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে কবে?
কুইক রেসপন্স করার সময়টাই তো বহু আগে পেরিয়ে গেছে।