দুইপক্ষের দ্বিতীয় দফা বৈঠক আজ
সুপ্রভাত ডেস্ক »
ইউক্রেনীয় শহর ইভানকিভেও প্রায় ছ’কিলোমিটার দীর্ঘ রুশ সেনার কনভয় সেভচেঙ্কার রাস্তা ধরে কিয়েভের দিকে এগোচ্ছে। সেই কনভয়ে ট্যাঙ্ক, সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি, ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকলস রয়েছে।
রাশিয়া যে আরও বড়সড় হামলার ছক কষা শুরু করে দিয়েছে তারই একটি ছবি ধরা পড়ল উপগ্রহ চিত্রে। ম্যাক্সার টেকনোলজি প্রকাশিত সেই উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রাশিয়ার একটি সেনা কনভয় ইউক্রনের রাজধানী কিয়েভের দিকে এগোচ্ছে। ইউক্রেনের উত্তরে দেখা গিয়েছে সেই কনভয়।
কিয়েভ এবং খারকিভে প্রবল বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে রুশ সেনাদের। তাদের দিকভ্রান্ত করে ফাঁদে ফেলার জন্য কিয়েভ এবং খারকিভে ঢোকার রাস্তাগুলির চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে। জায়গায় জায়গায় ইউক্রেনীয় সেনা এবং নাগরিকদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে রুশ সেনাদের। ফলে আরও বড় হামলা চালানোর জন্য বিশাল কনভয় নিয়ে কিয়েভ এবং খারকিভের উপর আঘাত হানতে চাইছে রাশিয়া।
ইউক্রেনীয় শহর ইভানকিভেও প্রায় ছ’কিলোমিটার দীর্ঘ রুশ সেনার কনভয় সেভচেঙ্কার রাস্তা ধরে কিয়েভের দিকে এগোচ্ছে। সেই কনভয়ে ট্যাঙ্ক, সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি, ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকলস রয়েছে।
খারকিভের ভিতরে ঢুকতে না পেরে সোমবার লাগাতার বোমাবর্ষণ করেছে রাশিয়া। সেই হামলায় ১১ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। কিভেও ১৪ জন শিশু-সহ ৩৫২ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন।
রাশিয়া-ইউক্রেনের দ্বিতীয় দফা বৈঠক আজ
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধপরিস্থিতিতে দ্বিতীয় দফার শান্তি আলোচনা আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। ইউক্রেনের জেরকালো নেদেলি সংবাদমাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা তাস নিউজ। এর আগে সোমবার প্রথম দফায় আলোচনা করে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদল। তবে ওই বৈঠকে কোনো ফল আসেনি।
অপর আরেকটি ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যম গ্লাভকম দেশটির প্রতিনিধিদলের সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, প্রথম দফার বৈঠকে রুশ প্রতিনিধিরা ইউক্রেনের কাছে জোটনিরপেক্ষ থাকার প্রতিশ্রুতি দাবি করে। রুশ প্রতিনিধিদল শর্তে জানায়, এ ব্যাপারে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট বা গণভোটের মাধ্যমে স্থায়ী অবস্থান নিতে হবে ইউক্রেনকে। এছাড়া রুশ প্রতিনিধিদল শর্ত দেয়, রাশিয়া দ্বারা সদ্য স্বীকৃত দোনেস্কো ও লুহানেস্কো অঞ্চলকে প্রজাতন্ত্রের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং ক্রিমিয়াকে আবার ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্ত করার সব দাবি ছাড়তে হবে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল আলোচনায় সবার আগে যুদ্ধবিরতি দাবি করে। এছাড়া ইউক্রেন থেকে সকল রুশ সেনাদের অবিলম্বে প্রত্যাহারেও শর্ত দেওয়া হয়। তবে ৫ ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে দুই পক্ষ নিজ নিজ শর্তগুলো উপস্থাপন করে। এতে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বৈঠকটি বেলারুশ-ইউক্রেন সীমান্তবর্তী গোমাল অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়।
রাশিয়াকে থামান চীনকে ইউক্রেন
আগ্রাসন থেকে রাশিয়াকে থামাতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন। মঙ্গলবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে এক ফোনালাপে এমন আহ্বান জানান ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফোনালাপে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন থামাতে মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ককে ব্যবহার করতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশ আলোচনার মাধ্যমে সংকট উত্তরণ তথা যুদ্ধের অবসানে সর্বাত্মক সহায়তা দিতে প্রস্তত রয়েছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু পর এই প্রথমবারের মতো মস্কোর মিত্র দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেন ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইউক্রেনের দিক থেকেই ফোনটি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে বেইজিং।
এদিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক শক্তিধর হয়ে ওঠার চেষ্টার অভিযোগ করেছে রাশিয়া। মঙ্গলবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক সম্মেলনে যুক্ত হয়ে এমন অভিযোগ করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তিনি বলেন, ইউক্রেন পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে। এটি একটি ‘সত্যিকারের বিপদ’, যার জন্য রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রয়োজন রয়েছে।
কেউ আমাদের মচকাতে পারবে না : জেলেনস্কি
ইউক্রেনকে কেউ মচকাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। গতকাল মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া ভাষণে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
জেলেনস্কি বলেন, তার দেশে যা ঘটছে সেটি একটি ট্র্যাজেডি। ইউক্রেনীয়রা তাদের ভূখণ্ড, তাদের স্বাধীনতা এবং তাদের জীবনের জন্য লড়াই করছে।
তিনি বলেন, কেউ আমাদের মচকাতে পারবে না। কারণ, আমরা ইউক্রেনীয়।
তার ভাষণের সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কক্ষে এক আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইউরোপীয় এমপি এবং কর্মকর্তারা উঠে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে হাততালি দেন।জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের শিশুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। সোমবারও ১৬ জন নিহত হয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইউক্রেনের পাশে আছে, এ বিষয়টি প্রমাণের জন্যও পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান জেলেনস্কি।
এদিকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে পাঁচ হাজার ৭১০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী। তাদের দাবি, সেনাদের প্রাণহানি ছাড়াও একই সময়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে ১৯৮টি রাশিয়ান ট্যাংক, ২৯টি এয়ারক্রাফট, ৮৪৬টি সাঁজোয়া যান ও ২৯টি হেলিকপ্টার হারিয়েছে রাশিয়া।
৫ হাজার ৭১০ রুশ সেনা নিহত
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে পাঁচ হাজার ৭১০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার হামলার ষষ্ঠ দিনে এমন দাবি করেছে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে স্কাই নিউজ।
সেনাদের প্রাণহানি ছাড়াও একই সময়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে ১৯৮টি রাশিয়ান ট্যাংক, ২৯টি এয়ারক্রাফট, ৮৪৬ সাজোঁয়া যান এবং ২৯টি হেলিকপ্টার হারিয়েছে রাশিয়া।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তরফে স্বতন্ত্রভাবে ইউক্রেনের এমন দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
ইউক্রেন থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে চীন
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ষষ্ঠ দিনে গড়ানোর পর দেশটি থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে চীনের দূতাবাস।সোমবার চীনা নাগরিকদের প্রথম দল ইউক্রেন ছেড়েছে বলে দূতাবাসটি জানিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, কিয়েভ থেকে আসা চীনা শিক্ষার্থীদের দলটি মলদোভায় গিয়েছে। রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর চীনের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিবিসি নিজেদের কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে।এর একটি হচ্ছে, সম্ভবত প্রথমদিকে বেইজিং মনে করেছিল আগেই রাশিয়াকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। আরেকটি সম্ভাবনা হচ্ছে, চীন হয়তো মনে করেছিল রাশিয়া এত দ্রুত ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নেবে তাতে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার আর দরকার হবে না। আরও একটি সম্ভাবনা আছে যেটি উদ্বেগজনক, রাশিয়ার আক্রমণ এখন আরও তীব্র হতে যাচ্ছে এমন হিসাব থেকেই হয়তো চীন তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ আগেই ইউক্রেন থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছিল।
যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ, আটক অন্তত ৪১১
ইউক্রেনে হামলা ও এর পাল্টায় পশ্চিমাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার পরিণতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রাশিয়াজুড়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত আছে।
সোমবার দেশটির ১৩টি শহরে এ ধরনের বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৪১১ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারীদের একটি গোষ্ঠী। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ায় ৬ হাজার ৪৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে, বলেছে ওভিডি-ইনফো নামের এই গোষ্ঠীটি। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, রাশিয়ার কৌঁসুলিরা মাঝে মাঝে বিক্ষোভকারীদের কারাদণ্ডও চান; এমন একটি দেশে এ ধরনের বিক্ষোভ দুঃসাহসেরই বহিঃপ্রকাশ।
রাশিয়ার গোলায় ৭০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহত
রাশিয়ার কামানের গোলায় ইউক্রেনের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর অকথারকায় দেশটির ৭০ জনেরও বেশি সেনা নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইউক্রেনের সুমাই অঞ্চলের রাজ্য প্রশাসনের প্রধান দিমিত্রো ঝেউইজকি জানিয়েছেন, ওই হামলায় ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর একটি ইউনিট ধ্বংস হয়ে গেছে, উদ্ধারকারী ও স্বেচ্ছাসেবীরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করে আনছে।
‘অনেক মানুষ মারা গেছে। নিহত প্রায় ৭০ জন ইউক্রেনীয় সেনার জন্য এখন কবর খোঁড়া হচ্ছে,’ টেলিগ্রাম অ্যাপে করা পোস্টে বলেছেন তিনি, জানিয়েছে বিবিসি।এ লড়াইয়ে রাশিয়ার পক্ষেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং অকথারকায় রুশ সেনাদের ‘অনেক মৃতদেহ’ পড়ে আছে বলে দাবি করেছেন তিনি। ওই মৃতদেহগুলো রেড ক্রসের কাছে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।তবে ঝেউইজকির এ দাবি বিবিসি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি।
ষষ্ঠ দিনে, আরও একা হয়ে পড়ছে রাশিয়া
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বুকে সবচেয়ে বড় সেনা অভিযান শুরু করায় রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে শায়েস্তা করার পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। রাশিয়ার কর্মকর্তা, শীর্ষ ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, এমনকি প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধেও তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেনা পাঠানো বা একটি নো-ফ্লাই জোন (উড়ান নিষিদ্ধ অঞ্চল) ঘোষণার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। সেরকম কিছু করতে গেলে দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে লড়াই বাধার ঝুঁকি দেখছেন ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা।
তার বদলে কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো।
ইউক্রেনের প্রেডিডেন্ট জেলেনস্কি সোমবার রাতে বলেছেন, ‘কিয়েভ সারাক্ষণ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। শত্রুপক্ষের জন্য এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট। আমরা রাজধানীর প্রতিরক্ষা ভাঙতে দিইনি তাদের, তারা নাশকতাকারীদের পাঠিয়েছিল নাশকতা সৃষ্টির জন্য, আমরা সবগুলো নস্যাৎ করেছি।’
জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার সেনারা একটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করছিল যেটা থেকে ৩০ লাখ বাসিন্দার কিয়েভে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
রাশিয়া দাবি করে আসছে, ইউক্রেন দখল করা তাদের এই সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য নয় বরং তারা প্রতিবেশী দেশটির সামরিক সামর্থ্য ধ্বংস এবং সেখানকার ‘বিপদজনক জাতীয়তাবাদীদের’ গ্রেফতার করতে চায়।
ইউক্রেনের ভেতরে-বাইরে ‘অপ্রত্যাশিত’ প্রতিরোধের মুখে পুতিন
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ভøাদিমির পুতিন যেমনটা ভেবে রেখেছিলেন, সেরকমটাই হয়েছে বা হচ্ছে বলে পাঁচ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও মনে হচ্ছে না।
সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রে রাশিয়ার তুলনায় অনেক কম শক্তিধর ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দিক থেকে রুশরা ‘ধারণার চেয়েও কড়া’ প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছেন বলে পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কয়েকদিন ধরেই তাদের ব্রিফিংয়ে বলে আসছেন।
রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি; রোববার ইউক্রেনের বাহিনী তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিমানঘাঁটি দখলে রাশিয়ার চেষ্টা সফলতার সঙ্গে প্রতিহত করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।
ইউক্রেনের বাহিনী ও বেসামরিকদের তুমুল প্রতিরোধের পাশাপাশি রুশ বাহিনীকে রসদ সমস্যারও মোকাবেলা করতে হচ্ছে; অগ্রবর্তী সেনাদের তেল, গুলি ও খাদ্যও ফুরিয়ে যাচ্ছে।
‘তাদের সমস্যা হচ্ছে। তাদের ডিজেলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তারা খুবই শম্ভুকগতিতে এগুচ্ছে, এখানে নৈতিকতাও একটা ব্যাপার অবশ্য,’ রুশ বাহিনী নিয়ে নেটো গোয়েন্দা তথ্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন জোটটির একজন কর্মকর্তা।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রোববার বলেছেন, রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেন অভিযানের জন্য বরাদ্দ তার মোট যুদ্ধশক্তির দুই-তৃতীয়াংশকে ব্যবহার করেছে; আক্রমণের তীব্রতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা প্রস্তুত রেখেছে।
সোমবার প্রায় ৪০ মাইল দীর্ঘ রুশ সামরিক যানের একটি বহর ইউক্রেনের রাজধানী অভিমুখে রওনা হয়েছে; বেলারুশও রাশিয়ার সঙ্গে আক্রমণে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে কিয়েভের গোয়েন্দারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, জানিয়েছেন ইউক্রেনের একজন কর্মকর্তা।
এত কিছুর মধ্যেও ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা সোমবার বেলারুশ সীমান্তে বৈঠকে বসেছিলেন; সেখানকার আলোচনায় ইউক্রেন ‘তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’ ও ‘রুশ বাহিনী প্রত্যাহারের’ চাপ দিলেও এমনটা সহসা ঘটবে বলে কার্যত কেউই আশা করছে না।
তবে পুতিন যে কেবল ইউক্রেনের নিজেকে রক্ষার সক্ষমতা নিয়ে ভুল ধারণা করেছিলেন, তা নয়; হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার ওপর কতটা কঠোর হতে পারে, তাও তিনি আগে থেকে ধারণা করতে পারেননি বলেই মনে হচ্ছে।
ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল, সিরিয়ার শাসককে সমর্থন এবং অন্য দেশগুলোতে আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের পরও গত কয়েক বছরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পশ্চিমা দেশগুলোর দিক থেকে খুব বড়সড় চাপে পড়েননি।
তারা পুতিন ও শাসনকাঠামোর নিন্দা জানিয়ে কড়া কড়া কথা বললেও এখনও রাশিয়ার কাছ থেকেই গ্যাস কিনছে, যা রাশিয়ার ধনীদের শ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছে এবং মস্কোর সঙ্গে তুলনামূলক স্বাভাবিক সম্পর্কই বজায় রেখেছে।
এবারও শুরুর দিকে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠলেও, পরের দিকে তাদের কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা পুতিনকে সাধারণত দেখা যায় না এমন ঐক্যবদ্ধ পশ্চিমা যুথবদ্ধতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
এমনিতেই ধুঁকতে থাকা রুশ অর্থনীতি থেকে শুরু করে খেলাধূলার অঙ্গন পর্যন্ত নজিরবিহীন এসব নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে মস্কোকে দেয়ালের দিকে ঠেলছ; রাশিয়ার আন্তর্জাতিক পরাশক্তির ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সময় যতই গড়াবে দেশটির অর্থনীতির সংকট তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হবে। সোমবার সন্ধ্যায় ডলারের বিপরীতে রুবল ২০ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে গেছে, এ পদক্ষেপও শিগগিরই রুশ নাগরিকদের পকেটে আঘাত হানবে।
লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে
ইউক্রেনকে ‘বেসামরিকীকরণ’ ও ‘নাৎসীদের হাত থেকে মুক্ত’ করার যে লক্ষ্য রাশিয়া নিয়েছে, তা পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশটিতে সামরিক অভিযান জারি রাখার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু।
গতকাল মঙ্গলবার মস্কোতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শোইগু বলেন, ‘ইউক্রেনকে রুশ অভিযানের উদ্দেশ্য দেশটিকে দখল করা নয় বরং পশ্চিমা দেশগুলোর কারণে ইউক্রেনের ওপর যে সামরিক হুমকির সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে সেখানকার জনগণকে মুক্ত করা এবং দেশটির ক্ষমতাসীন নাৎসীপন্থী শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণের লক্ষ্য নিয়েই রুশ বাহিনী এগোচ্ছে। এই লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।’
সংবাদ সম্মেলনে রুশ বাহিনীর প্রশংসা করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি সেনা সদস্য যুদ্ধক্ষেত্রে যে বীরত্ব, সাহসিকতা, বিবেক ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিচ্ছে, সেজন্য তাদের আন্তরিক অভিনন্দন ও প্রশংসা জানাচ্ছি।’
ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ হচ্ছে ইউক্রেনের বাহিনীর। তবে গত দুই দিন ধরে সংঘাত তীব্র হয়ে উঠেছে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে। রুশ বাহিনীর রকেট হামলায় ইউক্রেনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটিতে ইতোমধ্যে শতাধিক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে খারকিভে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ইউক্রেনের সরকারকে দায়ী করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের সরকার নিজেদের গদি বাঁচাতে সেখানকার সাধারণ জনগণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকা থেকে রুশ বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।’