নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে রেলের একটি তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে দোহাজারী থেকে ফার্নেস অয়েল খালাস করে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এতে সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। রেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ে লাইনচ্যুত বগি সরিয়ে সেতু চলাচল উপযোগী করার চেষ্টা করার কথা জানিয়েছেন। গতকাল রাত সাড়ে নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লাইনচ্যুত বগি সরিয়ে নেওয়া যায়নি।
জানা গেছে, দোহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টে ফার্নেস তেল খালাস করে ফেরার পথে ট্রেনটির গার্ড ব্রেক (তেল বহনকারী বগি) লাইনচ্যুত হয়। তবে অন্যান্য বগি নিয়ে ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ দুর্ঘটনার কারণে সেতুর দুই পাশে শত শত যানবাহন জটে আটকে যায়। পারাপারের অপেক্ষায় তারা দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকে। কেউ পায়ে হেঁটে আর কেউ নৌকা দিয়ে নদী পারাপার করেন। এসময় সাধারণ যাত্রী ও চালকদের মধ্যে কালুরঘাট সেতু না হওয়ার দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ নিয়ে হেঁটে সেতু পার হওয়া রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ সেতুটি হচ্ছে না। না হওয়া পর্যন্ত এ ভোগান্তি থাকবে। সরকারের এতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও এ সেতু নিয়ে সব স্বপ্ন পরিকল্পনাতেই আটকে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘দোহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টে ফার্নেস তেল খালাস করে ফেরার পথে একটি গার্ড ব্রেক লাইনচ্যুত হয়েছে। লাইনচ্যুত গার্ড ব্রেক সরিয়ে নিতে কাজ চলছে।’
সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমেদের উদ্যোগে কালুরঘাট সেতুতে ফেরি চালু এবং এপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন (প্রস্তাব) তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবটির দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দুয়েক মাসের মধ্যে ফেরি সার্ভিস চালু হতে পারে।
এ বিষয়ে বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, কালুরঘাট সেতুতে এখন বড় গাড়ি চলাচল করতে পারে না। এছাড়াও সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। যান চলাচলে মানুষের সীমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে। ফেরি চলাচল শুরু হলে বড় গাড়িগুলো ফেরিতে যাবে। তখন কালুরঘাট সেতুতে শুধু রেল ও ছোট গাড়ি চলাচল করবে।
কালুরঘাট সেতু নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, নতুন কালুরঘাট সেতুর নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হতে পারে। অপরদিকে পুরোনো কালুরঘাট সেতুকে সংস্কার করে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালানোর উপযোগী করে তোলার জন্য বুয়েটের বিশেষজ্ঞ একটি দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী দুই মাসের মধ্যে ফেরি চালু করার মাধ্যমে বড় যানবাহনের চলাচল স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের মাধ্যম কালুরঘাট সেতু বন্দর নগরীর সঙ্গে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগেরও অন্যতম সংযোগ।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে সেতুটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
সেতুটি নগরী লাগোয়া বোয়ালখালী উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার লোক পারাপার হয়।
চট্টগ্রাম শহর থেকে বোয়ালখালী উপজেলায় পৌঁছাতে যেখানে সময় লাগার কথা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট, সেখানে একমুখী এ সেতু দিয়ে চলাচলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টাও সময় লাগছে।
এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি রুটে চলাচল করে দুই জোড়া ট্রেন। দোহাজারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস ওয়েল আনা-নেওয়ার জন্যও ট্রেন চলে এই সেতু দিয়ে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ চালু হলে তারও পথ হবে এই সেতু।