মাসুদ চয়ন »
১
কল্পনা সুদূরপ্রসারিত নদীর মতো মুক্ত বয়ে
চলে অবিরত। নিয়ম, রুলস, রেগুলেশন কিংবা প্রথার প্রতিবন্ধকতা মেনে চলে না। কল্পনা আসলে নিজের ব্যাকরণ নিজেই তৈরি করে বাস্তবতাকে খুব সহজেই ডমিনেট করতে পারে। বাস্তবতার নিজস্বতা খুব কম থাকে । সে প্রথা বা সামাজিকতা মেইনটেইন করে চলে। জীবন যেহেতু অতি ক্ষুদ্র — একবারই পাওয়া যায় যাকে, জীবনানন্দের কবিতার মতোই “পৃথিবী একবার পায়, তাকে পায় নাকো আর।” সুতরাং কল্পনাই সুন্দর, আনন্দময়। মানুষ যাকে বা যাকে কল্পনায় ভাবে বা আঁকে, বাস্তবতায় সেসবের প্রতি মায়া বা ভালোবাসার প্রবণতা বাড়ে। গভীর কল্পনার আসক্তি বরং বাস্তব জীবনকে সুন্দর ও শিল্পমণ্ডিত করে তোলে।
২
বাস্তবতা ধানখেতের মতো, কল্পনায় ফসলের বুননের পরিকল্পনা আঁকে কৃষক। সবারটা এক হয় না কেউ অল্পতেই তুষ্ট, কেউবা অগাধ পেয়েও অসন্তুষ্ট। আর যারা কল্পনা ছাড়া বাস্তবতার ধানখেত নিয়ে পড়ে থাকে, তাদের ফসলের খেত অন্যরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সে জানেই না ফসলের সম্ভাবনা বিনির্মাণের আদিগন্ত,
প্রেক্ষাপটের ভয়ংকর রূপান্তর। সে স্থির থাকতে চেয়েছে প্রাচীনতা বা আদিমতায়। কল্পনা আসলে সুন্দর সম্ভাবনার বাস্তবিক পথকে সহজ করে দেয়, সম্ভাবনার সঙ্গে স্বপ্নের যোগসূত্র আঁকে। তখন বাস্তবতা আলো পেয়ে অবারিত আনন্দে মুখরিত হয়।
৩
জীবন ক্ষুদ্র তাই কল্পনাই সুন্দর।বাস্তবতা পেইনফুল বাস্তবতায় নেতিবাচক প্রভাবই বেশি বিস্তার করে। নকলত্ব, মেকি ভাব — জীবনে বাস্তবতার ততটাই প্রয়োজন থাকা উচিত, যতটুকু হলে মানুষ সুখী বা সাবলম্বী হতে পারে। এর বেশি হলে জীবন যান্ত্রিক হয়ে ওঠে। কিন্তু কল্পনার রেঞ্জ টানা উচিত নয়, তাকে অসীম ও মুক্ত করে দেওয়া ভালো। এতে বাস্তবতার স্বপ্ন ও ইচ্ছেগুলো পরিপূর্ণতা পায়। ক্ষুদ্র জীবন অতিবাহিত হোক আনন্দে, এটাই তো সবাই চায়। জীবনকে বাস্তবতার আগুনে পোড়ালে অনেক কিছু থেকেও জীবনের প্রকৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
৪
যদি সরাসরি বলতে হয়, তাহলে বলব কল্পনা এক অসীম সমুদ্র, যেখানে সবকিছু নিঃশর্ত; মনের মতো করে বাস্তবতায় বুনে নেওয়া যায়।
বাস্তবতা সীমিতের সীমাবদ্ধতা অজস্র শর্তের বেড়াজাল। বাস্তবতা আসলে স্বার্থের হাতে অধীন্যস্ত। যেটুকু প্রয়োজন, ওটুকুই বুঝে নিয়ে পথ চলা ভালো। এর বেশি নিতে গেলে বা চাইতে গেলে প্রতিবারই আঘাত করে।
বাস্তবতা সেই সমুদ্রের তুলনায় এঁদো ডোবা মাত্র।



















































