কর্ণফুলী নদীকে কি হত্যাই করা হবে

default

কর্ণফুলী নদী দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল এই নদীতে। দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের অন্তত ৯২ শতাংশ এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সেদিকে কারোই নজর নেই বরং মনে হচ্ছে নদীটিকে হত্যা করবার সকল আয়োজন যেন সম্পন্ন হচ্ছে।
নানাভাবে দূষণের কবলে পড়ে এই নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে সে কবে। নদী বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী ও সাধারণ মানুষ নদীটিকে বাঁচানোর জন্য অনেককিছু করেও তার সর্বনাশ ঠেকাতে পারছে না। প্রতিনিয়ত নদীর পানিতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য তেল, ফার্নেস অয়েল এবং লুব অয়েলসহ ক্ষতিকর নানা বর্জ্য। পোড়া তেল, ফার্নেস অয়েল, লুব অয়েল থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে এই নদী। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর জীববৈচিত্র্য। ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ৪০ প্রজাতির মাছ। যেগুলো টিকে আছে তাদের নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।

বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত ৮৯টি উৎসে নদী দূষণের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে ৫৩টি শিল্পকারখানা, ১৪টি নৌযান মেরামতের অনুমোদিত এবং অননুমোদিত ডক রয়েছে। রয়েছে বাজার, খামারসহ নানা স্থাপনা। কর্ণফুলী নদীতে ৩৬টি খাল দিয়ে দৈনিক অন্তত ৫ হাজার টন বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন শিল্প কারখানার বর্জ্যের সাথে পোড়া তেল, লুব অয়েল নদীর পানির ওপরে স্তর সৃষ্টি করছে। এতে নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। ফলে অনেক মাছসহ জলজ পানির জন্য নদীতে বসবাস কঠিন হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ প্রজাতির মাছ কর্ণফুলী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

গত কয়েকদিন ধরে শাহ আমানত সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে প্রচুর তেল ভাসতে দেখা গেছে। প্রতিদিন নৌপথে যাতায়াত করা যাত্রীরা বলেন, এটি শুধু একদিনের ব্যাপার নয়, প্রতিদিন এভাবে তেল ভাসে নদীতে। ফলে নদীর বিশাল মৎস্য সম্ভারের প্রায় পুরোটাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই নদীতে মিঠা পানির ৫৯ প্রজাতি এবং মিকচার পানির ৬৬ প্রজাতির মাছ ছিল। যার অধিকাংশই এখন আর নেই। নদীতে পোড়া তেলসহ বর্জ্যের ফলে পানির উপরিভাগে একটি লেয়ার তৈরি হয়েছে। এর ফলে পানিতে অক্সিজেন শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। দুর্বিষহ এই অবস্থার মধ্যে মাছসহ জলজ প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নদীতে তেল ভাসলে বন্দর কর্তৃপক্ষ তা সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। তবে নদীর দূষণ রোধ পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ। তারা সেটি করলে অবস্থার উন্নতি হবে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত রাজধানীর প্রতিবেশী তুরাগসহ দেশের সকল নদীকে ‘লিভিং এনটিটি’ বা ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তার অর্থ হলো, দেশের নদীগুলো এখন থেকে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণির মতোই আইনি অধিকার পাবে।
আমরা চাই কেউ একজন নদীটিকে বাঁচাতে ওই ধারায় মামলা করুক।