আজ থেকে সাময়িক বন্ধ হচ্ছে আন্ত:নগর সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি
অনলাইন টিকেটে বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি, অনেকে টিকেট ছাড়াই চলাচল করছে
ভূঁইয়া নজরুল:<
পঞ্চাশোর্ধ এক নারী, যাবেন লাকসাম। সাথে ছোটো বাচ্চাসহ মোট চারজন। যে টিকেট নিয়ে এসেছেন সেখানে তিনজনের টিকেট কাটা রয়েছে। কিন’ তিনজনের টিকেট দিয়ে চারজন কিভাবে যাবেন? রেলওয়ের টিকেট চেকারের প্রশ্নের জবাবে পঞ্চাশোর্ধ নারীর উত্তর, ‘বাপজান, দোকানদার তো চারজনের টাকা নিলো, আমি তো আর জানিনা কাগজে কি লিখেছে। আমাদের যেতে দাও বাপজান।’ এঘটনা শুক্রবার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে চাঁদপুরগামী মেঘনা ট্রেনের। এধরনের ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে এবং অনেকে টিকেট ছাড়াই ট্রেনে ভ্রমণ করছে বলে স্টেশনের টিকেট চেকারদের অনেকেই জানান।
মোহাম্মদ শাফায়েত নামে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের এক টিকেট চেকার বলেন, ‘অনেক মানুষ টিকেট ছাড়াই আসছে। স্টেশনে চেক করে টিকেট না থাকলে তাদের জবাব, আমরা তো টিকেট কাটতে চেয়েছি কিন’ কাউন্টারে টিকেট পাইনি। আর অনলাইনে টিকেট কাটতে পারি না। তাই টিকেট ছাড়াই চলে আসছি। তখন বাধ্য হয়ে অনেকের কাছ থেকে জরিমানাসহ আদায় করতে হয়।’ করোনার কারণে রেলওয়ে কর্তৃপড়্গ স্টেশনে বুকিং সহকারীর পরবির্তে শতভাগ টিকেট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সিদ্ধানেত্মর কারণে অনেক ট্রেন প্রায় ফাঁকা যাচ্ছে। ড়্গতি পোষাতে না পেরে আজ শনিবার ২০ জুন থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-ঢাকা রম্নটের সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া সোনারবাংলা ট্রেনের ৫৯৪টি টিকেটের মধ্যে বিক্রি হয় ১১৮টি, অপরদিকে চাঁদপুরগামী মেঘনা ট্রেনের ৯২৮টি টিকেটের মধ্যে বিক্রি হয় ৩০৬টি। এই চিত্র শুধু দুই ট্রেনেই নয়, চলাচলকারী সব ট্রেনে একই চিত্র।
আজ থেকে বন্ধ হচ্ছে সোনারবাংলা এক্সপ্রেস
এদিকে ট্রেনের সিটের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ায় আজ শনিবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-ঢাকা রম্নটের সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এবিষয়ে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী বলেন,‘শনিবার ২০ জুন থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-ঢাকা রম্নটের সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি।’ কেন বন্ধ করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘করোনার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ট্রেনের অর্ধেক টিকেট (৫৯৪টি) বিক্রির জন্য ছাড়া হয়েছিল। এখন এই অর্ধেক টিকেটও বিক্রি হচ্ছে না। ৫৯৪টি টিকেটের প্রায় অর্ধেক (২৯৭ জন) যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা রম্নটে চলাচল করে ট্রেনটি। এজন্যই ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তবে এই রম্নটের সুবর্ন ট্রেনটি চালু রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রায় সব ট্রেনেই এধরনের যাত্রী রয়েছে। তবে যেসব ট্রেন মধ্যবর্তী স্টেশনে থামে মেঘনা, উদয়ন সেগুলোতে তুলনামূলকভাবে যাত্রী বেশি রয়েছে। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী নেই।’ এদিকে সোনারবাংলা ছাড়াও ঢাকা-নোয়াখালী রম্নটে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটিও রোববার থেকে বন্ধ হচ্ছে।
যাত্রী কমে যাওয়ার প্রধান কারণ অনলাইন টিকেট
ট্রেনে যাত্রী কমে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ অনলাইন টিকেট সিস্টেম। অনেকেই অনলাইনে টিকেট কাটতে না পেরে আগের নিয়মে স্টেশনে চলে আসছেন টিকেট কাটতে। এতে অনেকেই টিকেট ছাড়া ফেরত যাচ্ছে। এবিষয়ে কথা হয় ফেনী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাহাবুবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, অনেক মানুষ স্টেশনে এসে টিকেট খোঁজ করে কিন’ টিকেট না পেয়ে ফিরে যায়। স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক যাত্রী পরিবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, যাত্রীরা কোথা থেকে কিভাবে টিকেট সংগ্রহ করবে তা আমরা স্টেশনের পস্ন্যাটফরমে ব্যনার টাঙিয়ে দিয়েছি, সেখানে লেখা রয়েছে।
তবে যাত্রীরা সেই ব্যানার ধরে নিজেদের মোবাইলে পারলে অনেকে টিকেট সংগ্রহ করে আর অন্যরা কম্পিউটার বা মোবাইলের দোকানের দ্বারস’ হয়। এধরনের একটি দোকান রয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের বিপরীত পাশে রেয়াজউদ্দিন বাজার কাপড়রের গলিতে। মোহাম্মদ ইউছুপ নামের সেই ব্যক্তির কাছে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে রোববারের সুবর্ন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট চাইলে বলেন,‘ অনেক ডিমান্ড, দেখি পাওয়া যায় কিনা। সুবর্ন ও উদয়ন ট্রেনের যাত্রীদের ডিমান্ড বেশি। এছাড়া মেঘনাও রয়েছে।’ এই ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতি টিকেটে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে এই অনলাইন টিকেট সিষ্টেমের কারণে ট্রেনের টিকেট বিক্রি কম হচ্ছে তা মানতে নারাজ পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওপিএস) মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ। তিনি বলেন,‘ করোনার কারণে রেলওয়ের বুকিং ক্লার্কদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে হয়তো স্টেশনে টিকেট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছিল। একইসাথে সমপরিমাণ টিকেট আগেও অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। এখনো তাই।’
কিন’ আগে ১০০ ভাগের মধ্যে ৫০ ভাগ অনলাইনে ছিল, এখন তো ৫০ ভাগের শতভাগই অনলাইনে। আর এতেই মানুষ স্টেশনে এসে টিকেট পাচ্ছে না। এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘ হুম এটা ঠিক। তবে এখন যদি ২০ শতাংশ টিকেটও স্টেশনে বিক্রি করা হয় তাহলে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে এবং এতে করোনার ঝুঁকি আরো বাড়বে। আর সেজন্যই আমরা স্টেশনে টিকেট বিক্রি করতে চাচ্ছি না।
গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে ট্রেন যাত্রা শুরম্ন করে রেলওয়ে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সুবর্ন এবং সোনারবাংলা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম সিলেট রম্নটে উদয়ন ও সিলেট-চট্টগ্রাম রম্নটে পাহাড়িকা, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রম্নটে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল শুরম্ন করে।