মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম
নিরাপত্তা বিশ্লেষক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং গ্রন্থকার
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষাশেষি বিশ্ব-ব্যাপী খবর প্রচারিত হতে থাকে চীনের উহান থেকে করোনা নামক একটি ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ ভাইরাসে উহানে ইতিমধ্যে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
ভাইরাস সংক্রান্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা উহানের জীবন্ত পশুপাখিদের যে বাজার রয়েছে সেখান থেকে এ ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা আরো বলেছেন কোন কোন ভাইরাস প্রাণিদের দেহবান্ধব আর কোন কোন প্রাণির ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হলে সময়ে তা মারাত্মক বিপত্তি বা বিপর্যয় ডেকে আনে। যেমন সাম্প্রতিক কালের বার্ড ফ্লু, ম্যাড কাউ, সোয়াইন ফ্লু, সার্স ইত্যাদি।
করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা হচ্ছে এটি কলাবাদুড় বা এ জাতীয় কোন প্রাণির দেহে ছিল। চীনারা এরকম প্রাণি কাঁচা ভক্ষণ করেছেন এবং এথেকে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।
ভাইরাসটির নাম করোনা হওয়ার কারণ এটি দেখতে সূর্যের মত। আর সূর্যের ল্যাটিন নাম করোনা।
সূর্য পৃথিবীর যাবতীয় শক্তির আধার। সূর্য পৃথিবীকে আলোকিত করে।
অথচ একই নামের হয়েও করোনা তার বিপরীত। করোনা যেদিন উহান থেকে পৃথিবীর দেশে দেশে বিস্তার লাভ করা শুরু করে তখন থেকে পৃথিবীর বুকে কেবল অন্ধকারের ছায়া নেমে আসতে থাকে।
কোন এক অদৃশ্য শক্তির প্রবল থাবায় পৃথিবী ক্রমাগত মুখ থুবড়ে পড়া শুরু করে।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব তাকে বলা হল তোমাকে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা বরন করতে হবে। লকডাউন নামক নতুন অভিধায় পৃথিবীর জনপদগুলি ক্রমান্বয়ে স্থবির হতে হতে স্তব্ধ হয়ে পড়ে।
লক ডাউন কবলিত জনপদগুলিতে আরো আরো নতুন নতুন অভিধায় নতুন নতুন ব্যবস্থা প্রচলিত হতে থাকে। “আইসোলেশন” মানুষকে বিচ্ছিন্নকরণ মানুষ থেকে। “ভেন্টিলেশন ” করোনা আক্রান্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস ব্যবস্থার নাম।
পৃথিবীর পরাশক্তি আমেরিকা, চীন, ফ্্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য করোনা ভয়ে একসময় কুঁকড়ে পড়ে। ইতালি, জার্মানি, মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ, এশিয়া – আফ্রিকার দেশে দেশে নেমে আসে মৃত্যুর ভয়াল ভয়।
এই ভয়াল ভয় ধনী গরিব, সাদা কালো, এশিয়ান আফ্রিকান, ইউরোপিয়ান তথা পুরা মানব গোষ্ঠীকে ক্রমাগত ঘরবন্দি করে।
কি এক আশ্চর্য পৃথিবী এখন মানুষের সামনে। মানুষের চলাচল, মানুষের আকাশ যাত্রা এক দেশ থেকে আরেক দেশ, এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশ সব বন্ধ হয়ে গেছে।
মানুষ যতই আকাশ ছেড়ে মাটিতে ঘরবন্দি হয়েছে, পাখিরা ততই অবারিত আকাশ পেয়েছে ওড়ার। মানুষ যতই কোয়ারেন্টাইনের যাঁতাকলে পড়েছে প্রাণিরা ততই নির্ভয়ে বিচরণ করেছে অরণ্যভূমিতে। মানুষের লকডাউন যতই কঠোর হয়েছে পৃথিবীর পরিবেশ ততই নির্মল হয়েছে।
এ এক আশ্চর্য বৈপরীত্য আজ পৃথিবীতে। এ এক অভূতপূর্ব সময় পৃথিবীর বুকে।
মানুষ যতই ভয়ে প্রাণিরা ততই নির্ভয়ে।
ঘরবন্দি আমি আমার জানালা দিয়ে দেখেছি জারুলের বেগুনি উৎসব, উল্লাসে মেতে ওরা চলে গেছে অনন্তের কোন গন্তব্যে।
আমের মুকুল ফুল থেকে পরিপূর্ণ পরিপুষ্ট আম হয়ে ঝরেছে। মানুষ ভয়ে কুড়াতে যায়নি।
বৈশাখ এসে চলে গেছে। মানুষ জেনেছে। উৎসবে মাতেনি মানুষ।
আমার জানালা দিয়ে ভোরের সূর্যের আলো এসে পড়েছে আমার ঘরে। অথচ পৃথিবীজুড়ে এখন মানুষের জন্য অতল অন্ধকার। মানুষ এ অন্ধকারকে আরো ঘনীভূত করেছে মুখে মুখোশ হাতে গ্লাভস পরে।
পৃথিবীর বৃহৎ ব্যস্ততম শহরগুলি এখন নীরব, নিথর জনশূন্য।
মানুষ কি কখনো ভেবেছে এও হতে পারে, এও সম্ভব। রাতারাতি ডিজনি ম্যাজিকশূন্য হয়ে পড়ে, প্যারিসের মোহনীয় রূপ বিলীন হয়, নিউইয়র্ক স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
চীনের সুরক্ষার মহাপ্রাচীর আর সুরক্ষার দেওয়াল হয়ে রইল না।
পবিত্র মক্কায় আল্লাহর ঘর জনশূন্য হয়ে পড়ল।
মানুষের ভালবাসাবাসি তিরোহিত হল।
পারস্পরিক দেখাশোনা ভয়ে পরিণত হল।
মানুষ অনুধাবন করতে লাগল অর্থ বিত্ত, প্রভাব প্রতিপত্তি অক্সিজেনের জন্য ছটফট করা মানুষের কাছে অর্থহীন।
একই সাথে লকডাউনে থাকা মানুষের অনুপস্থিতিতে পৃথিবী ক্রমশ নির্মল হয়ে ওঠে।
পৃথিবীর বায়ু, জল, আকাশ তথা সামগ্রিক পরিবেশ মানুষকে ছাড়াই অপূর্ব রূপ ধারণ করতে শুরু করে।
এ থেকে মানুষের জন্য একটিই বাণী – মানুষের অনুপস্থিতিতে এ পৃথিবী অচল হবে না, তথা এ পৃথিবীর জন্য মানুষ অপরিহার্য নয়, বরং মানুষের জন্য একটি পৃথিবী অপরিহার্য। এ প্রজন্মের মানুষের জন্য এ এক অবিস্মরণীয় অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক শিক্ষনীয় বিষয় হয়ে থাকবে।
ইতিহাসের পাতা মানুষের এই দুর্দিনকে ধারণ করবে হয়ত এভাবে হ্যাঁ মানুষের কারণে মানুষের ললাটে এমন ভয়ানক দুর্ভাগ্যও নেমে এসেছিল এবং পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হবার এমন ভয়াল ভয়ও মানুষকে গ্রাস করেছিল।
মানুষের এ দুর্যোগ দুঃসময়ে মানবিক মানুষেরা সহায়তার হাত বাড়িয়েছে অকপট।
ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসেছে তার অর্থ নিয়ে, হাত বাড়িয়েছে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনে, চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়ে, খাদ্য সাহায্য দিয়ে।
চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন মরণাপন্ন মানুষের পাশে। চিকিৎসা সেবায় যারা তারা জেনেছেন কত মারাত্মক সংক্রামক এ ভাইরাস, কত মরণঘাতি এর ছোঁয়া তবু মানুষের প্রতি মমত্ববোধ তাদের অসহায় মানুষের পাশ থেকে দূরে সরে যেতে দেয়নি। তারা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে হোটেলে দিন যাপন করেছেন।
আমাদের সেচ্ছাসেবী কর্মিরা জীবনকে বাজি রেখে জীবন বাঁচানোর ব্রতে নেমেছেন। তারা অসহায় করোনাক্রান্ত মানুষকে হসপিটালে নিয়েছেন, মৃতদের কবর দিয়েছেন/সৎকার করেছেন। তারা অভুক্ত নিরন্ন মানুষের কাছে খাদ্য নিয়ে দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিয়েছেন।
আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা প্রতিকূল সব পরিবেশকে উপেক্ষা করে দিনরাত রাস্তায় থেকেছেন, সংক্রমণ রোধে লকডাউন নিশ্চিত করেছেন, খাদ্য সাহায্য নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আমাদের সামরিক বাহিনী করোনা দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে অকাতরে। কোথাও লকডাউন কার্যকরে, কোথাও খাদ্য সহায়তা নিয়ে, কোথাও কৃষকের পণ্য পরিবহনে- বিপণনের জন্য সে পণ্যের ৫ মিনিটের বাজার খুলে।
আমাদের সরকারি অনেক মানবিক কর্মকর্তা কর্মচারি নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন জনগণের জীবন রক্ষায়।
আমাদের রাজনীতির গরিষ্ঠ সংখ্যক নেতা কর্মী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন দুহাত বাড়িয়ে, নিজেদের সামর্থ আর অন্যের কাছ থেকে সংগৃহিত অর্থ বিলিয়েছেন তারা করোনায় অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে।
সর্বোপরি সাধারণ মানুষেরাও যার যার সামর্থ অনুযায়ী এগিয়ে এসেছেন তার সম্ভব সম্বল নিয়ে মানুষকে বাঁচাতে।
করোনাকাল আমাদের জাতিসত্তার এ অপূর্ব মহত্ত আর অমিত শক্তিকে তুলে ধরেছে আমাদের সামনে। সংকটে আমাদের এ শক্তি আমাদেরকে সংকট উত্তরণে পথ দেখিয়েছে, আমাদেরকে নির্ভয় করেছে চরম দুর্বিপাক-দুঃসময়ে।
এর পাশাপাশি করোনাকালের এ চরম ক্রান্তিকালে কিছু মানুষ নামের অমানুষের আচরণ, দুর্নীতিগ্রস্ততা আমাদের জাতির বিবেককে ক্ষতবিক্ষত করেছে, জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জায়ও ডুবিয়েছে। সাহেদ এপিসোড, ডা. সাবরিনার কেলেংকারি, বিভিন্ন স্বাস্থ্য সামগ্রী ক্রয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চরম দুর্নীতি এ দপ্তরের শত কোটি টাকার মালিক গাড়ি চালক, এসব চরম দুর্নীতির চিত্র বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রায় প্রতিদিন উঠে আসলেও ২৬ জুন প্রথম আলোতে সাহিত্যিক আনিসুল হকের গদ্য কার্টুন “বাংলাদেশ বিশ্ব চিটিং চ্যাম্পিয়ন” এ নিদারুণভাবে উঠে আসে।
আনিসুল হকের লেখাটির সুর অনেকটা এরকম। বিশ্ব চিটিং চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণের প্রতিযোগিতা চলছে। প্রথম উঠে আসে ভারতীয় প্রতিনিধি। তার বক্তব্য ভারতীয় এক ব্যবসায়ী নর্মদা নদীর পাড়ে নির্মিত সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের ভাস্কর্য বিক্রির জন্য নিলামে তুলেছেন। করোনার চিকিৎসায় হাসপাতাল বানানোর জন্য এ নিলাম। নিলামে দাম হাঁকা হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।
ভাস্কর্যটি বিক্রি হওয়ার আগেই ঐ ব্যবসায়ী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।
চীনের প্রতিনিধি দাঁড়িয়ে হাসি দিয়ে বলেলন এ ঘটনা কি এমন আর অভিনব এতে সৃজনশীলতারও অভাব রয়েছে।
ভারতীয় প্রতিনিধি অনেকটা লাদাকিয় কায়দায় জোর গলায় প্রতিবাদ করে বললেন সে কি রকম ?
আমাদের প্রতিনিধি তখন দাঁড়িয়ে বললেন, ১৯২৪ সালে কাউন্ট ভিক্টর লাস্গি পুরা আইফেল টাওয়ার বিক্রি করে দিয়েছিল। আইফেল টাওয়ার ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। এর লোহা লক্করগুলি বিক্রি করে দেওয়া দরকার সে অজুহাতে এই নিলাম। নিলামে আইফেল টাওয়ারের দাম হাঁকা হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলার। এর পর ঐ নিলামকারী আইফেল টাওয়ারকে আরো এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছিল।
কাজেই প্যাটেলজিকে নিলামে তোলার মাঝে ভারতীয়দের তেমন কোন সৃষ্টিশীলতা নাই। এ কাজ করতে গিয়ে তারা তেমন কোন অভিনব প্রতারণার স্বাক্ষরও রাখতে পারেনি তার আগেই পুলিশে ধরা খেয়ে গেছেন।
চীনের প্রতিনিধির পালা এবার। তিনি বলেলন। চীনা ব্যবসায়ীরা চান্দ্র দূতাবাস আর লুনার এমবাসি নাম দিয়ে দুই ওয়েবসাইট খুলে চাঁদের জমি বিক্রি শুরু করে। প্রতি একর মাত্র ৯৫ডলার। এর জবাবে ভারতীয়রা বলে বসল এ এমন আর কি ? ২০০৪ সালে লাসভেগাস থেকে একই প্রতারণায় লিসা ফুকারসন নামে একজন প্রতারণার মাধ্যমে চাঁদে জমি বিক্রি করার জন্য গ্রেফতার হয়েছিল।
এবার বাংলাদেশের প্রতিনিধি বুক ফুলিয়ে দাঁড়াল।
বাংলাদেশের দুটি কোম্পানি করোনা দুঃসময়ে করোনা টেস্টের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে। তাদের যুক্তি সংক্রমক করোনার এই ভয়াবহ অবস্থায় মানুষ করোনা টেস্ট করানোর জন্য এখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করতে গিয়ে আরো বেশি করোনা থাবার মুখে পড়বে। এমন এক প্রেক্ষাপটে ঐ দুই কোম্পানিকে অনুমতি দিলে তারা স্বেচ্ছায় মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে করোনা টেস্ট করবে এবং অন লাইনে টেস্টের ফলাফল জানিয়ে দেবে। খুবই সুপ্রস্তাব ! সরকার জনহিতকর এ প্রস্তাবে সন্তÍুষ্টির সাথে সম্মতি প্রদান করে।
অনুমতিপ্রাপ্ত দুই কোম্পানি এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা টেস্টের নিমিত্তে নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। পরীক্ষাগারের জন্য প্রাসাদোপম বাড়ি ভাড়া করে দুই কোম্পানি। নমুনা সংগ্রহের সময় জনপ্রতি ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা টেস্ট ফি হিসাবে নিতে থাকে।
করোনা ভয়ে কাতর মানুষেরা কৃতজ্ঞচিত্তে সেই ফি দিতে থাকে, সাথে সন্তÍুষ্টিও প্রকাশ করে যাক বাবা টেস্ট করার জন্য করোনাক্রান্তের বিপদ মাথায় নিয়ে ঘরের বাইরে ত যেতে হয়নি।
এদিকে কোম্পানি দুটির আয় আকাশচুম্বি। করোনা টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহের হার বেড়ে যায়। এবার তারা শুরু করে আসল কাজ।
নমুনা সংগ্রহ করে তা নালা নর্দমায় ফেলে দেওয়া শুরু করে। কম্পিউটারে এর রিপোর্ট একে ওর রিপোর্ট তাকে।
এভাবে যার করোনা পজিটিভ সে পাচ্ছে নেগেটিভ, দিব্যি সে ঘুরে বেড়ায় এখানে সেখানে সাথে সুস্থদের অসুস্থ করা।
আর যার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ সে পাচ্ছে পজিটিভ। ঘরে বসে কান্নাকাটি, আইসোলেশন।
অসুস্থ কোন ওষুধ খাওয়া খাওয়িতে নাই আর সুস্থজন ওষুধ, গরম পানি খেতে খেতে হয়রান।
পুরা হল নিস্তব্ধ নিরব। এও কি সম্ভব ! মানুষ পেরেছে ! করোনার এই মহামারিতে মানুষ এভাবে মানুষকে ঠকিয়েছে ?
যারা মানুষের এমন দুঃসময়ে মানুষের সাথে এ জঘন্য আচরণ করেছে তাদের জন্য ঘৃণা করুণা কোন শব্দই ব্যবহার করতে ইচ্ছে করছে না। তারা এমন সময়ে মানুষের সাথে এমন আচরণ করেছে যখন
ভয়ার্ত বেদনার্ত মানুষ স্রষ্টার কাছে আকুতিতে আর্তিতে লুটিয়ে পড়েছে জীবিত প্রিয়জনদের সুরক্ষা কামনায়।
মানুষ একদিন করোনা জয় করে তার স্ব মহিমায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। ঝড় থামার পর ঝড়ের কবলে পড়া মানুষ যেমন তার লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণে উঠেপড়ে, ঠিক আমাদের আজকের যারা করোনাকাল পেরিয়ে বেঁচে থাকব তারাও ঝড়ের কবল থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষের মত এ পৃথিবী মেরামতে মেতে উঠব।
হয়ত এ পৃথিবী বদলে যাবে আমূল। মানুষ সামনে এগিয়ে যাবে। এই এগিয়ে যাওয়ার কালে মানুষ যখন অবচেতনে পিছন ফিরবে তখন তার ফেলে যাওয়া, অসহায় হয়ে পড়ার এক সময়কে সে দেখবে।
মানুষ পিছন ফিরে দেখবে তার বিপর্যস্ততার এক সময় ছিল, সে সময় শংকায় আর অজানা ভয়ে সে তার আপনজনের বিপদে-বিদায়ে তার থেকে দূরে থেকেছে। যারা বিদায় নিয়েছে অনাদরে, তাদের দীর্ঘশ্বাস হয়ত কালের যাত্রায় রয়ে যাবে চিরকাল, মানুষ কান পাতলে শুনতে পাবে সে বেদনার বিচ্ছেদের বিষণ্নতার সুর !