মাস্ক ব্যবহারে অনীহা
দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার :
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগে হাজার হাজার পর্যটকের ঢল নেমেছে। ইংরেজি নববর্ষকে ঘিরে এসব পর্যটকের আগমন ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিগত তিন বছরের মতো এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন নিয়ে সৈকতের বালিয়াড়ি বা উন্মুক্ত কোনো স্থানে অনুষ্ঠান হচ্ছে না কক্সবাজারে। সাগরের লোনাজল, বিশাল ঢেউ, গর্জন, লাল কাকড়ার দৌড়াদৌড়ি, বালিযাড়ির আড্ডা ও ইত্যাদি আনন্দঘন মজাই যেন পর্যটকদের ভুলিয়ে দিয়েছে করোনাকে। তাই সাগরে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের ৯৫ শতাংশ লোকের মুখে কোন মাস্ক দেখা যায়নি।
ঢাকা থেকে আসা সোহেল ও আরজু দম্পতি জানান, ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৩/৪ দিনের জন্য বেশ ক’টি হোটেলে রুম চেয়ে পাইনি, সবাই বলে বুকিং হয়ে গেছে। তাই ৪দিন আগে চলে এসেছি। নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে কক্সবাজার ছাড়বো। বেশ ভাল লাগছে ঘুরতে। তবে জিনিসপত্রের দাম বেশি। বিশেষ করে খাবার হোটেলে যেনতেন দাম নেয়। কোন কিছুর নির্দিষ্ট দাম নেই। অনেক হোটেলে খাবারের মেনু নেই। অনেক হোটেল অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। মুখে মাস্ক নেই কেন জিজ্ঞেস করা হলে তারা জানান, ছবি উঠাবো তাই মাস্ক পরিনি। তাছাড়া এখানে সবাইকে দেখছি মাস্ক ছাড়া।
হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, করোনার কারণে আমাদের ব্যবসার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। অনেক হোটেলে সারাবছর ব্যবসা হয়নি। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে এখন কিছুটা চাঙ্গা হলেও তা নিয়ে ক্ষতি পোষাবে না। অনেক হোটেল থেকে কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়েছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক বাংলাদেশ) এর সাবেক সভাপতি কিবরিয়া খান জানান, গত কয়েক’দিন ধরে পর্যটকের আগমনে আমরা বেশ খুশি। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে ব্যবসা ভাল হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। এর মধ্যে বিজয় দিবস, বড়দিন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। সমানতালে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, শাহ পরীরদ্বীপ, ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ, বৌদ্ধ মন্দির, সোনাদিয়াসহ পুরো জেলার পর্যটন স্পটে। তবে প্রতিবছর যেভাবে আশা করা হতো করোনার কারণে তা হচ্ছে না।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, কক্সবাজারের করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। প্রথম ধাপে কক্সবাজারের করোনা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। বিশেষ করে কক্সবাজার সদরের অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছিল। করোনা দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলায় আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের ওসি শাকের উল্লাহ জানান, পর্যটকদের সার্বিক নিরপত্তা দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। টুরিস্ট পুলিশের টহল দল নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এছাড়া সিসি ক্যামেরা দ্বারা সাগরের সৌন্দর্য উপভোগে যেসব পর্যটক নামেন তাদের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও কোন পর্যটক হয়রানির শিকার হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন প্রচারণা অব্যাহত আছে। মোটকথা, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওইদিন সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন স্থানে স্পেশাল ফোর্স ও টহল জোরদার করা হবে ।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান নুর আহমদ জানান, প্রতি বছর কয়েক হাজার পর্যটক বছরের শেষ দিন উদযাপন করতে সেন্টমার্টিনে ছুটে আসেন। নৌভ্রমণ এবং দ্বীপে রাত যাপনের স্বাদটাই আলাদা। বিশেষ দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে পর্যটকরাও আপনজনদের নিয়ে এই প্রবালদ্বীপে এসে থাকেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পর্যটকদের বাড়তি চাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কেয়ারী সিন্দাবাদ, ফারহান ক্রুজ, কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, গ্রীনলাইন, এলসিটি কাজলসহ বেশ কিছু জাহাজে অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
পর্যটকদের অনীহা
কক্সবাজার শহরের নানাস্থানে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের অনেকেই বলেছেন, কক্সবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্র পৌরসভার রাস্তার দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশা। প্রধান সড়কটিও একেবারে জরাজীর্ণ। রাস্তায় গর্ত ছাড়া আর কিছুই নেই। চলাচল খুব দুরুহ। তার উপর সড়কের বিভিন্নস্থানে ড্রেনের জন্য গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। কোথাও কাজ চলছে আবার কোথাও খুঁড়ে ফেলা রাখা হয়েছে। যার জন্য চলাচল খুবই কষ্টসাধ্য হচ্ছে। এছাড়া শহরে ভাড়ায় চালিত টমটম গাড়িগুলো যার থেকে যেমন খুশি ভাড়া আদায় করছে। পৌরসভার নির্ধারিত ভাড়া কারো থেকে আদায় করছে না। এ নিয়ে চালক ও যাত্রীদের মধ্যে প্রায়সময়ই ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। অধিকাংশ চালকই কিশোর। এজন্য দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। শহরের ভারসাম্য না রেখেই লাইসেন্স দেয়া হয়েছে অধিক গাড়ির।